অ্যামাজনের আগুনে কী ক্ষতি হবে প্রাণিজগতের?
২৫ আগস্ট ২০১৯ ১৬:২৬ | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০১৯ ১৬:৫৫
ধরণীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত অ্যামাজন রেইনফরেস্ট শতকরা ২০ ভাগ অক্সিজেন সরবরাহ করে, একথা বেশ আলোচিত হচ্ছে। তবে অনেকেই হয়ত জানেন না, পৃথিবীর ১০ ভাগ প্রাণী প্রজাতির বাসও কিন্তু অ্যামাজনেই। দাবানলে যখন অ্যামাজনের গাছপালা পুড়ে খাক হচ্ছে, তখন কি হাল হতে পারে সেখানের পশু-পাখি ও প্রাণিবৈচিত্র্যের? এমনটাই অনুমান করার চেষ্টা করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি।
শুধুমাত্র গত সপ্তাহেই অন্তত ৯ হাজার দাবানল ছড়িয়েছে অ্যামাজনের বিভিন্ন অংশে। একইসঙ্গে ব্রাজিল, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও পেরুর অ্যামাজন অংশে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। বিস্তৃত রেইনফরেস্ট অ্যামাজনে আগুন লাগার ঘটনা স্বাভাবিক হলেও কখনোই তা এতটা ভয়াবহ হওয়ার কথা নয়। পরিবেশবাদীদের মতে, গবাদি পশু পালন, কৃষিকাজ ও বসতি নির্মাণসহ নানা কারণে মানুষ উদ্দেশ্যমূলক-ভাবে আগুন লাগাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবছর অ্যামাজনে আগুন লেগেছে শতকরা ৮০ ভাগ বেশি। এমনটাই জানিয়েছে ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (আইএনপিই). এসব আগুন এতটাই ছড়িয়েছে যে তা মহাশূন্য থেকেও দেখা যাচ্ছে।
আগুনে নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অ্যামাজনের বাসিন্দা হাজারো স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, জলচর, স্থলচর প্রাণীসহ মূল্যবান পাখি ও কীট প্রজাতি। এই ক্ষতির প্রভাব স্বল্প ও দীর্ঘ দুই মেয়াদেই পড়বে।
দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যামাজনিয়া রিসার্চের (আইএনপিএ) গবেষক উইলিয়াম ম্যাগনুসন জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াসহ যেসব অঙ্গরাজ্যের বনাঞ্চল দাবানলের জন্য পরিচিত, সেগুলো ইকোসিস্টেমের কারণেই বৃহৎ আগুনের ধকল সহ্য করে নিতে পারে। তবে অ্যামাজন রেইনফরেস্ট এত বড় আগুনের সঙ্গে খাপ-খাওয়াতে প্রস্তুত নয়। শত-সহস্র বছর ধরে অ্যামাজনের ইকো-সিস্টেম যেভাবে উন্নত হয়েছে তা এই পরিবেশের সঙ্গে অপরিচিত।
ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিষয়ক প্রফেসর মাজেইকা সুলিভিয়ান। তার অভিজ্ঞতা রয়েছে কলম্বিয়ার অ্যামাজন অংশে কাজ করার। তিনি বলেন, এধরনের দাবানলে প্রাণীদের আসলে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ থাকে না। তারা হয়ত কোনো গর্তে লুকাতে চেষ্টা করে বা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অথবা দলবেঁধে দূরে কোথাও যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হলে তাদের মৃত্যু ছাড়া উপায় নেই। অনেক প্রাণীই মারা যাবে তাপ-ধোঁয়ার কারণে ও শ্বাস নিতে না পেরে।
যেসব প্রাণী তুলনামূলক বেশি গতিসম্পন্ন, তারা থাকবে সুবিধাজনক অবস্থানে। জাগুর, বনবিড়াল বা কিছু পাখি হয়ত পালিয়ে বাঁচবে। তবে শ্লথ, অ্যান্টইটার, ব্যাঙ, গিরগিটির মতো প্রাণী মারা পড়বে।
অ্যামাজন, ইউরোপ-আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চল থেকে কতটা আলাদা বা কিভাবে আগুনের ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে তা এখনই বলা সম্ভব নয় বলে মতামত বিশেষজ্ঞদের। তবে অনেক প্রজাতির প্রাণীই ক্ষতির শিকার হবে।
যেমন মিলন্ট’স টিটি না এক প্রজাতির বানর আবিষ্কৃত হয় ২০১১ সালে। যেটি শুধুমাত্র দেখা মিলে ব্রাজিলে অবস্থিত অ্যামাজনের উত্তরাঞ্চলে। ওখানে এখন আগুন জ্বলছে। মুরা’স স্যাডলব্যাক নামে আরও এক প্রজাতির বানর মধ্য-ব্রাজিলের অ্যামাজনে এখন রয়েছে হুমকিতে।
ব্রাজিলের ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির পরিচালক কার্লোস সিজার দুরিগান এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, হয়ত আমরা বিপন্ন এসব প্রজাতির অনেক প্রাণীকে হারাতে চলেছি।
পানিতে থাকা প্রাণীরা আপাতত নিরাপদ রয়েছে মনে হলেও আগুনের কারণে দূষিত হতে পারে অ্যামাজনের জলভাগ। মারা পড়তে পারে অনেক কীট-পতঙ্গ। এছাড়া উভয়চর প্রাণীরাও এখন বিপদে রয়েছে বলে ধারণা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের।
মাজেইকা সুলিভিয়ান জানান এত বেশি দাবানলের কারণে ক্ষতিটা হবে দীর্ঘ মেয়াদে বেশি। যেসব অঞ্চল আগুনে পড়ে গেছে সেখানের ইকোসিস্টেম বদলে যাবে। যেমন অ্যামাজনের অনেক অংশেই সূর্যর আলো পৌঁছায় না বিশেষ প্রজাতির গাছের ঘনত্বের কারণে। এখন সেখানের খাদ্যচক্র বদলে যাবে। যেসব প্রাণীরা গাছের পাতার সঙ্গে ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকত। তারা এখন বিপাকে পড়বে। খাদ্য সংকটে পড়ে প্রাণীরা যখন বনের অন্য অঞ্চলগুলোতে স্থানান্তরিত হবে তখন টিকে থাকায় বাড়বে প্রতিযোগিতা। এই ধ্বংসযজ্ঞে শুধুমাত্র সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে যারা শিকারে অভ্যস্ত তারাই।
অ্যামাজন সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু জানার বাকি ছিল পরিবেশবিজ্ঞানদের। সেখানে কয়েক সপ্তাহ পরপরই নতুন কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণ প্রজাতির সন্ধান মিলত। তবে এখন নানা কারণে যেভাবে অ্যামাজনে বন উজাড় হয়ে চলছে। জানার আগেই হয়ত অনেক প্রজাতি হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।