Wednesday 22 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সোয়া ১ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বনফুল মিষ্টি


২৫ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৩৮ | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৪২

ঢাকা: বনফুল মিষ্টি অ্যান্ড কোম্পানির ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৩ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট। তাদের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ফাঁকির এই তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, সাভারের বনফুল মিষ্টি অ্যান্ড কোম্পানির ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের নিরীক্ষা সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে ভ্যাট ফাঁকির চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্টে ভ্যাটের সঙ্গে দাখিল করা পত্রে বর্ণিত ভ্যাটের পার্থক্য ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৫২৭ টাকা। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনা উপকরণের ওপর আদায়যোগ্য মূসকের পরিমাণ ২৫ লাখ ৫৫ হাজার ৪৬৪ টাকা, সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্টের আলোকে আদায়যোগ্য উৎসে মূসকের পরিমাণ ৪১ লাখ ১২ হাজার ৪০৭ টাকা। বনফুলের নিরীক্ষা মেয়াদে পরিহারকৃত মূসকের (ভ্যাট) পরিমাণ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯৯ টাকা। আর মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ এসেছে আরও ২৯ লাখ ৫১ হাজার ৪৯৪ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৩ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ফাঁকিকৃত রাজস্ব আদায়ে মূল্য সংযোজন আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫৫(১) অনুযায়ী দাবিনামা সংবলিত নোটিশ জারি করেছ ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট।

অন্যদিকে বনফুল মিষ্টির আরও একটি অডিট রিপোর্টে ৬৮ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে। সুদে-আসলে প্রতিষ্ঠানটিকে আরও এক কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর সেই ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে এ বছরের ২ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করেছে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট।

বিজ্ঞাপন

মামলার বিবরণে জানা যায়, কোম্পানির ফান্ড থেকে বিভিন্ন স্থাপনা, নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত খরচের ওপরও উৎসে ভ্যাট কাটেনি বনফুল। অডিট রিপোর্টে মোট ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮ লাখ টাকা। সময় মতো ভ্যাট পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইনের ধারা-৩৭ অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে আদায়যোগ্য সুদের পরিমাণ প্রায় ৩২ লাখ টাকা। সুদসহ প্রতিষ্ঠানটিকে এক কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। নিরীক্ষার সময়কাল জানুয়ারি ২০১৩ থেকে জুন ২০১৮। এমনকি বনফুল মিষ্টির দোকান বিভিন্ন সময়ে মিষ্টি ও বেকারি বিস্কুট তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ কিনেছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলোতে ভ্যাট দেয়নি।

বনফুল মিষ্টির ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট ম্যানেজার এনামুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে এরই মধ্যে আমরা আপিল করেছি। ভ্যাট কর্মকর্তারা ভ্যাট ফাঁকির যে যুক্তি দেখিয়েছে তা সঠিক নয়। সারাদেশে বনফুলের মিষ্টি পণ্যের সুনাম রয়েছে। সুনাম নষ্ট করতে একটি পক্ষ উঠে-পড়ে লেগেছে। আমরা আদালতে অবশ্যই নির্দোষ প্রমাণিত হব।’

এ বিষয়ে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার ড. মইনুল খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বনফুল যে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এছাড়া নিরীক্ষা চলাকালীন প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট ম্যানেজারের সাথে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তিনি ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ফলে বনফুল যে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে সেটা পরিশোধ করতেই হবে।’

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির আউটলেটগুলোতে মিষ্টি বেচাকেনায় কোনো অনিয়ম হচ্ছে কিনা তা জানতে রামপুরা ডিআইটি রোডের বনফুল শাখায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিপুল পরিমাণ মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনো ক্রেতাকে ভ্যাট চালান তো দূরের কথা বিক্রয় রশিদও দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে ওই শাখার কর্মচারীদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি।

রামপুরা শাখা থেকে শনিবার সন্ধ্যায় মিষ্টি কেনেন মো. গিয়াসউদ্দিন। মিষ্টি কেনা শেষে কোনো ভ্যাট চালান দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাট চালান তো দূরে থাক মিষ্টি কেনার কোনো রশিদও দেওয়া হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বনফুল থেকে প্রতি সপ্তাহে মিষ্টি কিনে থাকি। কিন্তু তারা কখনও ভ্যাট চালান কিংবা কোনো রশিদও দেয় না। আমরাও ব্যস্ত থাকি তাই ভ্যাটের বিষয়টি খেয়াল করি না। যে দাম বলে সেই দাম দিয়েই মিষ্টি কিনে চলে যাই। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামপুরা বনফুল শাখার এক কমর্চারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এই শাখায় নতুন এসেছি। ভ্যাট কি সেটা আমি জানি না। ’ভ্যাটের কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি জানান সেটা কোথায় তা তিনি জানেন না। দোকানে দায়িত্বশীল কেউ নেই, তাই তিনি এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবেন না।

বনফুল বনফুল মিষ্টি ভ্যাট ফাঁকি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর