Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জ্যাকেট পরিয়ে আসামিকে মিডিয়ার সামনে হাজিরের নজির নেই: হাইকোর্ট


২০ আগস্ট ২০১৯ ২৩:১৫ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৯ ২৩:২৮

ফাইল ছবি

ঢাকা: তদন্তাধীন মামলায় সংবাদ সম্মেলন করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য প্রকাশ করায় অসন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, আসামি গ্রেফতার করে জ্যাকেট পরিয়ে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হচ্ছে। এ ধরণের দৃষ্টান্ত বিশ্বের আর কোনো দেশে আছে কি না জানা নেই।

মঙ্গলবার (২০ আগষ্ট) মিন্নির জামিন আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলামসহ একাধিক আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।

শুনানিকালে মিন্নির জামিন আবেদন পর্যালোচনা করে আদালত বলেন, মামলা তদন্তাধীন থাকাবস্থায় সে বিষয়ে এসপি কিভাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে?

আদালত বলেন, ইদানিং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন (আইন শৃঙ্খলা বাহিনী) করে আসামিকেও হাজির করা হচ্ছে। এর আগে গাজীপুরের এক জঙ্গির মামলার সময় আমরা (আদালত) বলেছিলাম, আসামিদের এভাবে মিডিয়ার সামনে হাজির করে বক্তব্য (সংবাদ সম্মেলন) না দিতে। কিন্তু এখন দেখছি বিভিন্ন সময় আসামিদের জ্যাকেট পরিয়ে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হচ্ছে। এ ধরণের দৃষ্টান্ত বিশ্বের আর কোনো দেশে আছে কি না জানা নেই।

আদালত আরও বলেন, শুধু এ মামলায় না আরও অনেক মামলায় আমরা সংবাদ সম্মেলন (আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর) দেখছি। তদন্ত পর্যায়ে এ ধরণের সংবাদ সম্মেলন করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? এসপি (বরগুনার) বলেছেন, আসামি মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে। বিচারিক জবানবন্দির আগে এসব কি পাবলিকের (সংবাদ সম্মেলন করে) সামনে বলা যায়? প্রায় দেখা যায়, তদন্ত পর্যায়ে এ ধরনের ব্রিফিং করা হচ্ছে, যা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম হয়। সে (মিন্নি) যদি দোষ স্বীকার করেও তাহলেও কি এসপির এ ধরণের সংবাদ সম্মেলন করা ঠিক হয়েছে?

বিজ্ঞাপন

তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, না, এটা উচিৎ হয়নি। আদালত বলেন, মিন্নিকে সকালে সাক্ষী হিসেবে নেওয়া হয়েছে পুলিশ লাইনে। রাতে তাকে আসামি করা হয়েছে। তাহলে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু আছে?

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মিন্নিকে অনেক পরে (মামলা হওয়ার) ডাকা হয়েছে। আদালত বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের অনেক নিয়ম-নীতি রয়েছে। আগে ক্যান্টনমেন্টে ডাকা হতো। সেখানে একজন লোককে নেওয়া হলে তার মানসিক অবস্থা কি হতে পারে?

এসময় মিন্নির আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, জামিন আবেদনকারীকেও (মিন্নি) স্বাক্ষী হিসেবে ডাকা হয়েছিল। তখন আদালত বলেন, তারা (আইন শৃঙ্খলা বাহিনী) গণমাধ্যমে নানা কথা বলেন, এসব তদন্তকে প্রভাবিত করে। জানিনা বিশ্বের আর কোথাও এটা (সংবাদ সম্মেলন) দেখা যায় কি না! অতি উৎসাহী হলে নানান সমস্যা হয়। এগুলোর একটা নীতিমালা (আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে) থাকা দরকার।

তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, আগামী ২২ আগস্ট এ মামলায় বিচারিক আদালতে পুলিশ প্রতিবেদনের দিন ধার্য রয়েছে। সেখানে সব উঠে আসবে।

তখন আইনজীবী আমিন উদ্দিন বলেন, ১৬৪ ধারায় মিন্নির জবানবন্দি পড়লে বোঝা যায়, এটা সাজানো। একজন মানুষের কি এত ক্ষমতা যে তিনি এত সুন্দর করে ঘটনার বর্ণনা দেবেন? আসামিকে যদি জামিন দেওয়া হয় তবে কোনভাবেই তদন্ত প্রভাবিত হবে না। তাকে ডেকে নিয়ে সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার দেখানো হয়। একটা মেয়েকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তার ওপর কতটা চাপ থাকে তা বোঝা যায়! এছাড়াও এ মামলার আরেক আসামিকে ১ জুলাই গ্রেফতারের পর ১৪ জুলাই জবানবন্দী নেওয়া হয়েছে যার মধ্যে একটি বড় সময়ের ব্যবধান রয়েছে।

মিন্নিকে জামিন দিলে সে পালিয়ে যাবে না। তার বাবার হেফাজতে থাকবে উল্লেখ করে তার জামিন প্রার্থনা করেন।

পরে আদালত মামলার যাবতীয় নথি সংবলিত (সিডি) তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। মিন্নির জবানবন্দির বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন। আগামী ২৮ আগস্টের মধ্যে তাকে ওই ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে জানতে চেয়ে রুল জারি করা করেন।

মিন্নি হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর