জঙ্গি অর্থায়ন মামলা: শাকিলাসহ ৯ জনের নামে পরোয়ানা
২০ আগস্ট ২০১৯ ১৮:০২ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৯ ১৮:৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: র্যাবের অভিযানে চিহ্নিত জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডকে’ নাশকতার জন্য অর্থায়ন এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুই মামলায় ৬১ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে মামলার মূল আসামি সুপ্রিম কোর্টের বিএনপিপন্থী আইনজীবী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আবদুল হালীম এই আদেশ দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও বাঁশখালী থানায় দায়ের হওয়া পৃথক দু’টি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেছিলেন ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি অতিরিক্ত মহানগর পিপি মনোরঞ্জন দাশ। আবেদনের ওপর শুনানিতে তাকে সহযোগিতা করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি আইয়ূব খান।
আইয়ূব খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাটহাজারীর মামলায় ৩৩ জন এবং বাঁশখালীর মামলায় ২৮ জনসহ মোট ৬১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণের সময়ও নির্ধারণ করেছেন আদালত। পলাতক থাকা কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।’
ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী আবুল হাসনাত সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আসামিদের মধ্যে শাকিলা ফারজানা ও নাছির হোসেন নামে দু’জন অভিযোগ গঠনের শুনানিতে হাজির ছিলেন না। তাদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এছাড়া আরও ৭ জন এজাহারভুক্ত আসামি শুরু থেকেই পলাতক আছেন। তাদের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে।
২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় ‘মাদ্রাসাতুল আবু বকর’ নামে একটি ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে’ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব। ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার লটমণি পাহাড়ে র্যাবের ভাষ্যমতে একটি ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্র’ থেকে বিপুল অস্ত্রসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। দুই থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পৃথম দু’টি মামলা দায়ের হয়।
এরপর ওই বছরের ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব জানিয়েছিল, হাটহাজারী ও বাঁশখালী থেকে গ্রেফতার ব্যক্তিরা চট্টগ্রামভিত্তিক নতুন জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের সদস্য। ওই বছরের ১৮ আগস্ট হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের অভিযোগে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আইনজীবী শাকিলা ফারজানাসহ তিনজনকে। ২০১৭ সালের মার্চে শাকিলা ফারজানাকে দুই মামলায় প্রধান আসামি করে মোট ৬১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে র্যাব।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, দেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য বাহরাইনের নাগরিক আল্লামা লিবদির নির্দেশে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ গড়ে তোলা হয়। জুনায়েদ নামে একজনের নেতৃত্বে পরিচালিত এই সংঠনের তিনটি বিভাগ আছে। এগুলো হচ্ছে- সামরিক, দাওয়াহ ও মিডিয়া।
অভিযোগপত্রে সামরিক বিভাগের প্রধান হিসেবে মনিরুজ্জামান ডন, দাওয়াহ বিভাগের প্রধান নাছির হোসেন, মিডিয়া বিভাগের প্রধান মো. আবদুল্লাহ বলে উল্লেখ করা হয়। জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র বিক্রির অভিযোগে আসামি হয়েছেন মোজাহের মিয়া নামে একজন।
এছাড়া মনিরুজ্জামান ডনের তিনটি হিসাব নম্বরে দুই দফায় ৫২ লাখ টাকা জমা দিয়ে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে আসামি হয়েছেন আইনজীবী শাকিলা ফারজানা। এছাড়া একইভাবে অর্থায়নের অভিযোগে আরও দু’জন আসামি আছেন।
শাকিলা ফারজানা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে।
শাকিলার আইনজীবী আবদুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘শাকিলা ফারজানা আদালতে উপস্থিত থাকতে পারেননি। আমরা সময়ের আবেদন করেছিলাম। আদালত সেটা নাকচ করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।’
সারাবাংলা/আরডি/এমও