Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫০০ শয্যার হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ৪৭৩ জন!


৬ আগস্ট ২০১৯ ১৫:০০ | আপডেট: ৬ আগস্ট ২০১৯ ১৯:১৬

ঢাকা: ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামলাতে মুগদা হাসপাতালের অষ্টম তলায় শিশু ওয়ার্ডের সিঁড়ির গোড়ায় অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছে ছোট্ট শিশু নাফিজা। সাড়ে চার বছর বয়সী ফুটফুটে সুন্দর নাফিজার মা শারমিন আক্তারও ডেঙ্গু আক্রান্ত। তিনি আছেন নবম তলার মেডিসিন ওয়ার্ডে।

মা’কে ছাড়া যে নাফিজার এক মুহূর্তও চলে না, সেই নাফিজাই গত তিন দিন ধরে মাকে দেখে না। একই হাসপাতালে ভর্তি হলেও ভিন্ন ওয়ার্ড, ভিন্ন তলায় অবস্থানের কারণে মা-মেয়ের দেখা হচ্ছে না। রক্তের প্লেটলেট ৫১ হাজারে নেমে যাওয়ায় মা’ শারমিন আক্তার আছেন ঝুঁকির মধ্যে। মেয়ে নাফিজার প্লেটলেট অবশ্য ১ লাখ ৫০ হাজার।

বিজ্ঞাপন

নাফিজার বাবা মুগদার বাসিন্দা পলাশ ইসলাম ডেঙ্গু আক্রান্ত স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আছেন চরম বিপদে। আটতলা থেকে নয় তলায় ওঠা-নামা করতে করতে তিনি কাহিল। আদরের সন্তান নাফিজা ছেড়ে এক মুহূর্ত সরতে পারছেন না। অন্যদিকে প্রিয়তমা স্ত্রী শারমিন আক্তারে প্রতি যে দায়িত্ব ও কর্তব্য, সেটিও এড়াতে পারছেন না পলাশ। কাজ-কর্ম, অফিস-বাসা ছেড়ে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে পড়ে আছেন হাসপাতালে।

সারাবাংলাকে পলাশ বলেন, ‘পৃথিবীতে এই মুহূর্তে আমার চেয়ে অসহায় কেউ নেই। গতকাল থেকে মেয়েটা কিছু খাচ্ছে না। জ্বরের মাত্রা বেড়েই চলছে। ঘুম থেকে উঠেই মা’য়ের কাছে যেতে চায়। ওর অবস্থাও ভাল না। তার রক্তের প্লেটলেট অনেক কমে গেছে।’

শিশু ওয়ার্ডের ফ্লোরে ঠাঁই হয়েছে এক বছরের শিশু জুবাইদার। মা’ হোসনে আরা বেগমের কোলে জ্বরের তীব্রতায় কাতরাচ্ছে শিশুটি। ছোট্ট হাতে ক্যানোলা পরানো। চলছে সেলাইন। তারও রক্তের প্লেটলেট অনেক কম। কর্তব্যরত চিকিৎসক কিছুক্ষণ আগে দেখে গেছেন। মা’ হোসনে আরাকে দিয়ে গেছেন সান্ত্বনা।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু হোসনে আরার চোখে-মুখে আতঙ্ক। আদরের সন্তানটিকে কোলে করে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আশপাশের অবস্থা দেখুন। কোথাও জায়গা না পেয়ে বাচ্চাটা নিয়ে এই ফ্লোরে পড়ে আছি। সবাই বিপদে। তাই নিজের বিপদটা বড় করে দেখছি না।’

শুধু শামিম আর হোসনে আরা বেগম নন, মুগদা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পুরো চিত্রটাই এ রকম। ৬০ শয্যার এই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৮০ জন। অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীসহ মোট রোগীর সংখ্যা ১২০ জনের মতো। অর্থাৎ বেডের চেয়ে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ। বাড়তি রোগী ও স্বজনদের চাপে চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ‘নাকাল’ অবস্থা।

শিশু ওয়ার্ডের একতলা উপরে সাধারণ মেডিসিন ওয়ার্ড। এখানকার অবস্থা আরও শোচনীয়। ৬০ শয্যার এ ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ৩৯৩ জন। এরমধ্যে ডেঙ্গু রোগী ৩৭৩ জন। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ মেডিসিন ওয়ার্ডের এক ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা নেই।

সিঁড়ির গোড়া, ফাঁকা জায়গা, হাঁটার পথে, লিফটের সামনে, এক রুম থেকে আরেক রুমে যাওয়ার সরু পথ— সবখানেই রোগী আর রোগী। বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করার পরও অসংখ্য রোগী ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা দিন-রাত পরিশ্রম করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না। রোগী এবং স্বজনদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ রাহেলা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দৌড়াতে দৌড়াতে আর উপরতলা-নিচতলা করতে করতে এখন আর পা চলছে না। পিপাসায় বুক ফেঁটে গেলেও পানি পানের সুযোগ পাচ্ছি না। টোটাল পরিস্থিতি আউট অব কন্ট্রোল।’

মুগদা হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. খাইরুল আলমের দেওয়া তথ্যমতে, ৫০০ শয্যার মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪৮৪ জন। এদের মধ্যে মেডিসিন ওয়ার্ডে ৩৭৩, শিশু ওয়ার্ডে ৭৯ এবং কেবিনে ভর্তি ৩২ জন। আর টোটাল রোগীর সংখ্যা ৭৯০ জন। অর্থাৎ এই মুহূর্তে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর ৬১ শতাংশ হচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত।

এদিকে গত এক মাসে মুগদা হাসপাতালে মোট ৮ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। এর মধ্যে সোমবার (০৫ আগস্ট) রাত ২ টার দিকে মারা গেছেন মো. হানিফ নামে একজন। ৩ আগস্ট মারা গেছেন দুইজন। আর জুলাইয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন:

ডেঙ্গুতে মুগদা হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু

ঢাকার পরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু মাদারীপুরে

দিনাজপুরে ডেঙ্গু জ্বরে কিশোরের মৃত্যু

ডেঙ্গু রোগী মুগদা হাসপাতাল শয্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর