Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিলুপ্তির পথে মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মিরকাদিমের গরু


৫ আগস্ট ২০১৯ ০৮:৩৯

মুন্সীগঞ্জ: প্রাচীনকাল থেকেই মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম বুট্টি গরু ও বাজা গাভীর জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও এখানে এক সময় পাওয়া যেত নেপালি, মণ্ডি, হাঁসা, পশ্চিমা ও সিন্ধি জাতের গরু। এককালে মিরকাদিমের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই বিশেষ জাতের এসব গরু লালন-পালন হতো। এখানে ছিল তেলের ঘানি ও ধান-চালের মিল। যে কারণে খুব সস্তায় খৈল, ভুসি, খুদ, কুড়া ইত্যাদি পাওয়া যেত। এখন চালের মিল থাকলেও খৈল, ভুসি ও কুড়ার দাম খুব চড়া। তাই গরু মোটাতাজা করার হার অনেক কমে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

ক্রমাগত লোকসান ও গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে অনেকেই গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এতে প্রতিবছর খামারের সংখ্যা ব্যাপকহারে কমে যাচ্ছে। আগে মিরকাদিম এলাকায় হাজার হাজার গরু মোটতাজা করা হতো। বর্তমানে তা কমে অর্ধশততে নেমে এসেছে। বলতে গেলে মিরকাদিমের ঐতিহ্যবাহী গরু এখন বিলুপ্তির পথে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদুল আজহার পশু কোরবানিতে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের গরুর বেশ চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ধবল বা সাদা গরুর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। এখানকার গরুর খমার ঘুরে মাত্র ২০টি সাদা গরু পাওয়া গেছে।  বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের ১০-১২টি পরিবার ঐতিহ্যবাহী এই পেশা ধরে রেখেছে। তবে তাদের কারও কাছেই ৫-৬টার বেশি গরু নেই। এছাড়া গৃহস্থ পরিবারগুলোর অধিকাংশ সদস্যই বিদেশ চলে যাওয়ায় এবং অন্য পেশায় যুক্ত হওয়ায় গরু লালন-পালন কমে এসেছে।

খামারিরা জানান, বিশেষ পালন কৌশলের কারণে মিরকাদিম এলাকার গরুর মাংসও সুস্বাদু হয়ে থাকে। ট্যাবলেট খাইয়ে বা ইনজেকশন দিয়ে কৃত্রিমভাবে এখানকার গরুগুলো স্বাস্থ্যবান করা হয় না। এই গরুগুলোকে সাধারণত খৈল, ভুসি, খুদ ইত্যাদি খাওয়ানো হয় এবং খুব ভালো যত্ন নেয় খামারিরা। ফলে এই গরুগুলোর দাম এবং চাহিদাও বেশি। বিশেষত সৌখিন মানুষরা দর্শনীয় এই গরু কোরবানি দেন। এসময় মিরকাদিমের উন্নতমানের গরুর জন্য তাদের আনাগোনা দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উৎকৃষ্টমানের গরু কিনতে আসেন বিত্তশালী ও ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, এখনও পুরান ঢাকার অনেক পরিবার মিরকাদিমের গরু কোরবানিকে তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য মনে করে। এজন্য সেখানকার বড় বড় হাটগুলোতে এসব গরুর দেখা মেলে। তবে গত কয়েক বছর ধরে পুরান ঢাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা ঈদের কয়েক মাস আগেই মিরকাদিমে চলে যান গরু কিনতে। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু পছন্দ করে কিনে ফেলেন এবং গৃহস্থদেরই ঈদ পর্যন্ত গরু লালন-পালনের দায়িত্ব ও খরচ দিয়ে আসেন। ফলে কোরবানির হাটে ওঠার আগেই অনেক গরু বিক্রি হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

মিরকাদিমের খামারি মো. আক্তার হোসেন জানান, এখনকার গরুর চাহিদা অনেক বেশি। কোরবানি ঈদের ছয়/সাত মাস আগে থেকে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট ও বাছাই করা গরু কিনে নিয়ে আসেন। বিশেষ করে বাজা গাভী, খাটো জাতের বুট্টি গরু এবং নেপালি ও সিন্ধি জাতের গরু আনা হয়। এই গরুগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে এদের বেশিরভাগেরই গায়ের রঙ সাদা ও নিখাদ হয়। এরকম প্রতিটি গরুর কিনতে খরচ পরে ৮০-৯০ হাজার টাকা। মোটাতাজা করতে আরও লাগে ৪০-৫০ হাজার টাকা। একটি গরুর পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়। যত্ন নিতে হয় অনেক বেশি। কিন্তু পরিশ্রম অনুযায়ী গরুর দাম পাওয়া যায় না। এতে লাভও হয় কম। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও কিছু খামরি এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমুদ রঞ্জন জানান, মিরাকদিমের ঐতিহ্যবাহী গরুর খামার কমে যাওয়ার কারণগুলো হলো- জেনারেশন চেঞ্জ এবং গরু ক্রয় ও উৎপাদন খরচ বেশি পড়া। তবে গরু মোটাতাজাকরণে খামারিরা যদি গো-খাদ্য হিসেবে যদি শুকনো খড়, চিটাগুড় ও ইউরিয়ার ব্যবহার করে তবে অনেক লাভবান হবেন। এতে তিন/চার মাসে একটি গরু মোটাতাজা করতে ১৫ হাজার টাকার মত খরচ পড়বে। এ পদ্ধতির প্রচার খুব শিগগিরই শুরু হবে।

বুট্টি গরু মণ্ডি মিরকাদিম মিরকাদিমের গরু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর