Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ কামাল: তারুণ্যের প্রেরণা


৪ আগস্ট ২০১৯ ২৩:২০ | আপডেট: ৫ আগস্ট ২০১৯ ০৮:২৫

১৯৪৯ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের জন্ম। বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হতো ৭০ বছর।

তারুণ্যে যেসব শক্তিশালী গুণাবলী থাকা উচিত, শেখ কামালের মধ্যে তা যেন বিধাতা দিয়েছেন অকৃপণ হাতে। আমরা যাকে বলি একজন অলরাউন্ডার। একাধারে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রাজনীতিবিদ, ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও  সমাজ-চিন্তক। তারুণ্যের সবচেয়ে বড় আইডল যদি আজকে খুঁজতে হয় তাহলে আমরা শেখ কামালকেই খুঁজে পাই। অথচ সেই নায়ককে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট গোটা পরিবারের সঙ্গে শাহাদাৎ বরণ করতে হয় বাংলাদেশ বিরোধী নর্দমার কীটদের হাতে।

বিজ্ঞাপন

শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামালও ছিলেন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ। বিবাহিত জীবনে প্রবেশের এক মাসের মাথায় গোটা পরিবারের সঙ্গে তাঁকেও শাহাদাৎ বরণ করতে হয়।

গুণের কোনো শেষ ছিল না শেখ কামালের। ক্রীড়া থেকে শিল্পকলা, রাজনীতি থেকে মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুতেই শেখ কামালের অংশগ্রহণ ছিল সামনের কাতারে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে রাজনীতির মাঠে তাঁর প্রয়োজনীয়তা যখন অনিবার্য, সেই তাকেই পাওয়া গেছে খেলার মাঠেও, গানের আসরে, নাটকের মঞ্চে, সেতারের সুরে, বন্ধুদের আড্ডায় ও ছাত্ররাজনীতির স্লোগানে।

১৯৭১ সালে যখন স্বাধীনতার দাবীতে উত্তাল বাংলা, তখন শেখ কামাল ছাত্র রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মা-মাটি-মাতৃভূমির সম্ভ্রম রক্ষায় ঝাপিয়ে পড়েন সম্মুখযুদ্ধে। পাশাপাশি সংগঠিত করেন মুক্তিযোদ্ধাদের।

মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ গড়ার কাজে জাতির জনকের নির্দেশে ঝাপিয়ে পড়েন। বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে শেখ কামাল নতুন করে গড়ে তোলেন একক প্রচেষ্টায়। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিটি পরতে পরতে শেখ কামালের ছোঁয়া আছে। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় নিমেষেই বদলে গিয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবল, ক্রিকেট, হকিসহ বিভিন্ন খেলাধুলা। আবাহনী ক্রীড়া চক্রের মত একটি ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাঁরই হাতে।

বিজ্ঞাপন

নিজেও ছিলেন তুখোড় একজন খেলোয়াড়। ক্রিকেটার হিসেবে সুনাম ছিল। লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে ফাস্ট বোল করতেন। আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন দীর্ঘদিন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর তিনি ছিলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বাস্কেটবল টিমের অধিনায়ক।

ক্রীড়াঙ্গন ছাড়াও শিল্পকলার সকল বিভাগে ছিল শেখ কামালের সরব উপস্থিতি ও অসামান্য দক্ষতা। সঙ্গীত, বিতর্ক, অভিনয়, উপস্থিত বক্তৃতা থেকে শুরু করে কোথায় ছিলেন না শেখ কামাল? ‘স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী’ প্রতিষ্ঠা করে তিনি বাংলা গানের নতুন ধারার সৃষ্টি করেছিলেন। ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহিদদের মতো জনপ্রিয় পপসঙ্গীত শিল্পীরা এসেছেন এই সংগঠনের মধ্য দিয়েই। বলা যেতে পারে, বাংলাদেশে পপ সঙ্গীতের সূচনা হয়েছিল শেখ কামালের হাত ধরে।

মঞ্চ নাটক করেও সুনাম কুড়িয়েছেন শেখ কামাল। ‘নাট্যচক্র’ নামে একটি নাটক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন শেখ কামাল। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ যখন ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক তখন এই সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল। শুধু সংগঠকই ছিলেন না শেখ কামাল, এই নাট্য সংগঠনের অভিনয়শিল্পী হয়েই নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদারের সঙ্গে কলকাতায় মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতে গিয়েছিলেন তিনি। নাটক শেষে ফেরদৌসী মজুমদার ও শেখ কামালের অটোগ্রাফ নিতে সেদিন দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল।

পাকিস্তান সরকার যখন বাঙ্গালীর অস্ত্বিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে মিশে থাকা  রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছিল, তখন শেখ কামাল বিভিন্ন প্রতিবাদী সভায় নিজে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে বাঙলা ও বাঙালির প্রাণের রবীন্দ্রসঙ্গীতকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। ছায়ানটের সেতারবাদনের ছাত্র হিসেবে সেতার বাজানোতেও তিনি তালিম নিয়েছিলেন।

শেখ কামালের ছাত্র রাজনীতি আজকের তরুণদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। একজন ছাত্র সংগঠক হিসেবে তিনি কখনও নেতৃত্বের শীর্ষে আসতে চাননি। তিনিই ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতেন, প্রেরণা জোগাতেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা, পরবর্তীতে জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা।

আজকের তরুণদের কাছে শেখ কামালের চেয়ে উৎকৃষ্ট আদর্শ আর কে হতে পারে?  তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আমাদের ছাত্ররাজনীতি, জাতীয় রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন সূচিত হতো। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজ কণ্টকাকীর্ণ যে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হচ্ছে, শেখ কামাল বেঁচে থাকলে হয়তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এতোটা বন্ধুর পথ তাকে পাড়ি দিতে হতো না।

মাত্র ২৬ বছরের ক্ষুদ্র জীবনে শেখ কামাল যেসব অসামান্য কর্ম দিয়ে প্রিয় এ মাতৃভূমিকে সাজিয়েছেন, তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় স্মরণ রাখবে । শেখ কামালের জন্মদিনে তাঁর প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক : সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় কমিটি।

 

সারাবাংলা/আইই

টপ নিউজ শেখ কামালের জন্মদিন শেখ কালাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর