Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্নীতির কারণে রাজধানীবাসী নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত


৪ আগস্ট ২০১৯ ০১:৩৯ | আপডেট: ৪ আগস্ট ২০১৯ ০৪:৪৫

ঢাকা: বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ খাবার পানি থেকে বঞ্চিত। অন্যদিকে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ নিরাপদ খাবার পানি পায় না। আর রাজধানী ঢাকার অধিবাসীদের জন্য নিরাপদ খাবার পানির সংস্থানের জন্য একাধিক প্রকল্পে কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও দুর্নীতির কারণে রাজধানীবাসী নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টার বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষ্যে ‘বৈশ্বিক পানি নিরাপত্তা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল: প্রথম বছরের রিভিউ’ শীর্ষক একটি আলোচনা অনুষ্ঠান করে। গত শুক্রবার (২ আগস্ট) প্রতিষ্ঠানটি ওই আলোচনা অনুষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে। ওই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সমুদ্র, আর্ন্তজাতিক জলবায়ু এবং বিজ্ঞান বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সিপাল ডেপুটি এসিসটেন্ট সেক্রেটারি মার্শা বার্নিকাট। এর আগে মার্শা বার্নিকাট যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ খাবার পানি থেকে বঞ্চিত। এখনই টেকসই নিরাপদ পানি বিষয়ে সচেতন না হলে আগামী ২০৩০ সালে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ নিরাপদ খাবার পানি থেকে বঞ্চিত হবে। শুধু তাই নয়, নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে না পারলে আগামীতে পানি নিয়ে বিশ্ব যুদ্ধ বেধে যাবে।’

জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ নিরাপদ খাবার পানি পায় না।
অন্যদিকে, গত ১৬ মে (বৃহস্পতিবার) আদালতে উপস্থাপন করা এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার ১০টি জোনের ৫৯ এলাকার পানি নিরাপদ নয়।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ১৭ এপ্রিল (বুধবার) টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) ঢাকা ওয়াসার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে।

টিআইবির গবেষণা পত্রে বলা হয়, ‘ঢাকা ওয়াসার হিসাব মতে, রাজধানীতে আবাসিক ব্যবহারে প্রতিদিন ন্যূনতম পানির চাহিদা ২৫৮ কোটি লিটার। তার বিপরীতে ওয়াসার পানি উৎপাদন ক্ষমতা ২৪০ কোটি লিটার। কিন্তু ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না। এর মধ্যে ৭১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ বস্তিতে, ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ আবাসিক এলাকায়, ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ বাণিজ্যিক এলাকায় এবং ১৯ শতাংশ মানুষ শিল্প কারখানায় থাকেন।’

গবেষণাপত্রে আরো বলা হয়, ‘ঢাকা ওয়াসার সেবা নিতে গিয়ে সেবাগ্রহীতাদের ৮৬ ভাগকে ওয়াসার কর্মচারী এবং ১৫ ভাগকে দালালের কাছে ঘুষ বা নিয়ম বহির্ভূত অর্থ দিতে হয়। এর মধ্যে পানির সংযোগ নিতে ২০০ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা, পয়ঃলাইনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, গাড়িতে করে জরুরি পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা, নতুন মিটারের সংযোগ বা মিটার পরিবর্তনে ১ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, মিটার রিডিং ও বিল সংক্রান্ত কারণে ৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা এবং গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।’

সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ঢাকা ওয়াসার ১১টি খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ তথ্য-উপাত্তসহ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের কাছে এক প্রতিবেদন জমা দেন দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান।

এসময় দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না করে নানা অজুহাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি করে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। আর এ কাজে ওয়াসা এমডি, প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওয়াসার সরবরাহ করা পানি এখনো পানযোগ্য নয়। অনুসন্ধান চালিয়ে ১১টি ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়ে থাকে বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এসব দুর্নীতি বন্ধে টেকনিকাল লোক নিয়ে সার্ভিলেন্স টিম গঠন করা যেতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে পেশাদারিত্ব বাড়াতে হবে। ওয়াসার অনেক প্রকল্প অসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে তা শেষ করতে না পারলে ভবিষ্যতেও প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ সারাবাংলা’কে বলেন, ‘পানি বিষয়ে এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এর জন্য চড়া মূল্য গুনতে হবে। কেননা ভবিষ্যতের পৃথিবীতে পানি হবে সবচেয়ে মূল্যবান।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিশাল নদী ব্রক্ষ্মপূত্রের ৮২ শতাংশ পানির উৎস হচ্ছে বৃষ্টিপাত। আর মাত্র ১৮ শতাংশ পানি হিমালয় থেকে নেমে আসে। তাই প্রতিটি বৃষ্টির ফোটা প্রকৃত অর্থে একেকটি স্বর্ণ খণ্ড। যতোই দিন যাবে এই স্বর্ণ খণ্ডের মূল্য বাড়বে। তাই এখন থেকেই ভবিষ্যতের জন্য টেকসই নিরাপদ পানি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে।’

সারাবাংলা/জেআইএল

টপ নিউজ দুর্নীতি নিরাপদ পানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর