Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে রাখতে হবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে’


৩০ জুলাই ২০১৯ ১৮:৫১ | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ১৮:৫৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ৭০ বছরের পুরনো দল আওয়ামী লীগের ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির আহ্বায়ক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম। তিনি বলেছেন, ‘বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব-কলহ থাকবে, কিন্তু সবকিছুর উর্ধ্বে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও বাংলাদেশ। কারণ আওয়ামী লীগ থাকলেই বাংলাদেশ টিকে থাকবে, এর নেতাকর্মীরা টিকে থাকবেন। আজ যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন, এর অবদান কিন্তু আওয়ামী লীগেরই।’

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘গৌরবের অভিযাত্রায় ৭০ বছর: তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচকদের মধ্যে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও ওয়াসিকা আয়শা খান, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্যানেল আলোচকদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং তারা জবাব দেন।

হোসেন তৌফিক ইমাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা এদিক-ওদিক ছুটে গেছেন। কিন্তু এতে আওয়ামী লীগের শক্তি কমেনি, বরং দিন দিন বেড়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা সবাই ছিলেন বরেণ্য নেতা।‘

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য যদি কেউ কিছু করে থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। জিয়াউর রহমান, এরশাদ ক্ষমতায় ছিলেন। জিয়া-এরশাদ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এরা পাকিস্তানি মানসিকতার লোক ছিলেন। তারা দেশের জন্য কিছুই করেননি। এরশাদ সাহেব কিছু উন্নয়ন করেছিলেন, কিন্তু উনার মন ছিল অন্যদিকে, পাকিস্তানের দিকে। একমাত্র আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জন্য কিছু করেছে।’

একই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে এই দল বাঙালির জন্য একটি জাতিরাষ্ট্র গঠন করেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি প্রথম নিজেদের শাসন করার অধিকার পেয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগই প্রথম রাজনীতিকে গণমানুষের কাছে নিয়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখন যে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয় বদলে দেওয়ার কাজ চলছে, তাতেও নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এখন আর রাতের বেলা বাসি ভাতের খোঁজে বাসার সামনে কাউকে দেখা যায় না। ছেঁড়া কাপড় পরা কাউকে আর এ দেশে দেখা যায় না। কবিতার কুঁড়েঘর বাস্তবে নেই। এখন আকাশ থেকে ঢাকা আর চট্টগ্রাম শহরকে চেনা যায় না। ঢাকার কুড়িল ফ্লাইওভার আর চট্টগ্রামের আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভার দেখলে মনে হয় বিদেশি সিনেমার কোনো দৃশ্য।

শেখ হাসিনা একাই সব সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, এই ধারণা সঠিক নয়

অনুষ্ঠানে মিজানুর রহমান নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন, বঙ্গবন্ধু তো ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণে বিশ্বাস করতেন। তাহলে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একাই কেন সব সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দিতে দেখি? সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না কেন?

জবাবে তৌফিক ইমাম বলেন, ‘আমাদের দেশে সরকার পরিচালিত হয় সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীই হচ্ছেন প্রধান। তাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য মন্ত্রীরা পরিচালিত হয়। তবে প্রত্যেক মন্ত্রীর তার মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আছে। শেখ হাসিনা এমন একজন ক্যারিশমাটিক লিডার, উনার ব্যক্তিত্ব এমনই যে অনেক ক্ষেত্রে তিনি পিতা বঙ্গবন্ধুকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তার আন্তর্জাতিক খ্যাতিও আছে। এজন্য অনেক সময় মনে হয়, তিনি বোধহয় একাই সব সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দিচ্ছেন। মনে হয়, তিনিই বোধহয় সব ক্ষমতার অধিকারী। আসলে এটি সরকার পরিচালনার বিষয়ে একটি আবছা ধারণা। প্রধানমন্ত্রী একাই সব সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, কেন্দ্র থেকে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যন্ত সরকারি সব বিভাগের প্রধানরাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’

পাঁচ বছর পর স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিভ্রান্তি থাকবে না

হাইকোর্টের রায়ের পরও স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম প্রচার প্রসঙ্গে এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর। তিনি নিজের জীবদ্দশায় কোনোদিন নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেননি। এখন বিএনপি যেভাবে তাকে ঘোষক হিসেবে প্রচার করছেন, কবরের ভেতরে তিনি সেটি শুনতে পেলে লজ্জায় কাৎ হয়ে যেতেন। এই বিতর্ক অনভিপ্রেত। তবে যতই দিন যাচ্ছে, বিএনপি নেতারা এই মিথ্যা বক্তব্য থেকে পিছু হটছেন। এরপরও কেউ কেউ বলেন। গ্রামগঞ্জে বলা হয়। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে বলা হচ্ছে। তবে পাঁচ বছর পর সেগুলো আর থাকবে না। এই বিভ্রান্তি কেটে যাবে।’

ছাত্রলীগ নিয়ে মনোকষ্ট

ছাত্রলীগসহ সাম্প্রতিক ছাত্ররাজনীতি নিয়ে মনোকষ্টের কথা জানালেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন ও আমিনুল ইসলাম আমিন। সংস্কৃতি থেকে ছাত্রলীগের দূরে সরে যাওয়া নিয়ে এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে দুই নেতার কাছ থেকে এসেছে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য। একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ওয়াসিকা আয়শা খানও বলেছেন হতাশার কথা।

মেয়র আ জ নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা বৈষয়িক কোনো চিন্তা থেকে ছাত্রলীগ করিনি। আমাদের সময়ের ছাত্র রাজনীতি আর এখনকার ছাত্র রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা চেহারা দেখলে চিনতাম, কারা আমাদের সমর্থক। তারপর তাকে কর্মী বানাতাম। এখন যারা ছাত্রলীগ করতে আসে, তাদের সংগঠনের নীতি-আদর্শ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। কেন তারা ছাত্রলীগকে বেছে নিল, সেই সম্পর্কেও কোনো ধারণ নেই। নীতি-আদর্শ একেবারেই অনুপস্থিত, অথচ সেটা ধারণ করেই ছাত্রলীগ বা ছাত্র রাজনীতি করা উচিত।’

আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘ছাত্রলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ছাত্রদল। ছাত্রদলের নেতাদের সবাই ৩-৪ সন্তানের বাবা, বয়স ৪০ পার করেছে। একেকটি কমিটি ৬০০ থেকে ১ হাজার জনের। এখানে নীতি-আদর্শের কোনো বিষয় নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছাত্রলীগও সেদিকে ধাবিত হচ্ছে। ছাত্রলীগ-ছাত্রদল বা বর্তমানের ছাত্র রাজনীতি পরিণত হয়েছে আখের গোছানোর পাঠশালায়। অবশ্য শুধু ছাত্রনেতাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। যে সমাজে একজন শিক্ষক ছাত্রের বাসায় গিয়ে বসে থাকে ভিসি হওয়ার জন্য, সেখানে শুধু ছাত্র রাজনীতির দোষ দিয়ে কী হবে!’

ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্রলীগ করতাম, তখন আমাদের পড়তে হতো। পাঠ্যবইয়ের বাইরে অনেক অনেক বই পড়তে উৎসাহ দেওয়া হতো। বিতর্কে অংশ নিতে হতো। সংস্কৃতির সঙ্গে ছাত্রলীগের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। আমরা চাই, এটা ফিরে আসুক।’

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সমসাময়িক বাংলাদেশ বিষয়ে আলাদা দু’টি সেশনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতেও শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা, যানজট, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং প্যানেল আলোচকরা জবাব দেন।

আ জ ম নাছির উদ্দীন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের ৭০ বছর টপ নিউজ ড. হাছান মাহমুদ তৌফিক ইমাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর