বন্যায় কুড়িগ্রামের বানভাসীদের দুর্ভোগ, জ্বালানি ও খাদ্য সংকট
২১ জুলাই ২০১৯ ১০:৫১ | আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ১০:৫২
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও চরাঞ্চলে ধীর গতিতে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি, তবে বেড়েছে বানভাসীদের দুর্ভোগ। তবে এখনও প্রায় সবকয়টি নদনদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৯০ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। আশেপাশে কোন উঁচু জায়গা না থাকায় ডাঙ্গায় আশ্রয় নিতে পারছেনা মানুষ। ফলে পানিবন্দি মানুষদের পরিবার পরিজন নিয়ে ডিঙ্গি নৌকা ও কলা গাছের ভেলায় অবর্ণনীয় কষ্টে বসবাস করতে হচ্ছে। দুর্গম চরাঞ্চলগুলোতে এই চিত্র আরও ভয়াবহ। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, হাতিয়া, কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুরসহ ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার দুর্গম চরাঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার পরিবার ১০ থেকে ১২ দিন ধরে পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাড়ির পাশে নৌকায় বসবাস করছেন।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর ও বালা ডোবার চর ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ছয় শতাধিক পরিবারের বসবাস এই চরগুলোতে। এদের মধ্যে যাদের নৌকা নেই, সেসব পরিবার দুরবর্তী উঁচুস্থানে ও স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও, বেশিরভাগ পরিবারকেই থাকতে হচ্ছে নৌকায়। ১৮ থেকে ২০ হাত ডিঙ্গি নৌকায় বসবাস করতে হচ্ছে পরিবারের ছয় থেকে নয় জন সদস্যকে। সেখানেই তাদের রান্নাবান্না ও খাওয়াদাওয়া করতে হচ্ছে। ইঞ্জিনচালিত যে কোন নৌকার শব্দ শুনলেই এসব পরিবার ত্রাণের আশায় নৌকা নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন সেই নৌকার কাছে।
মশালের চরে নৌকায় বাস করা মাইদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাড়িতে বন্যার পানি উঠায় এবং নিকটবর্তী উঁচু কোন জায়গা না থাকায় বাবা-মা, ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে নয়দিন যাবৎ এই নৌকায় বসবাস করছি। এ অবস্থায় বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয় সবসময়। নৌকায় চাল, ডাল থাকলেও শুকনো জ্বালানির অভাবে ঠিকমতো রান্না করে খাওয়া যাচ্ছে না। নৌকাতে পরিবার থাকায় বাজারে গিয়ে শুকনো খাবার কিনে আনবো, সেটারও কোন উপায় নেই।’
একই চরে নৌকায় বসবাসকারী আমিনা বেগম বলেন, ‘এই ছোট নৌকায় পরিবারের আট সদস্য মিলে বসবাস করছি। কিন্তু এই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে শৌচাগার। পাশাপাশি এলাকার সকল নলকূপ তলিয়ে থাকায় বন্যার পানি দিয়েই খাওয়াসহ রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে।
নৌকায় বসবাসকারী অন্যান্য পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চারিদিকে থৈ থৈ পানি থাকায় কোন কাজই জুটছে না তাদের। যারা মাছ ধরতো, তারা নৌকাটিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করায় সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। অনেক পরিবারের ছোট ছোট বাচ্চারা ডায়রিয়া ও জ্বরসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারকে রান্নার অভাবে একবেলা খেয়েই দিন পার করতে হচ্ছে।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মশালের চরের ইউপি সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক সারাবাংলাকে জানান, আমার ওয়ার্ডে মোট ৬শ পরিবার রয়েছে। এদের মধ্যে তিন শতাধিক পরিবার নিকটবর্তী কোন শুকনো জায়গায় স্থান না পেয়ে দশ বারোদিন ধরে নৌকায় বসবাস করছে। এরমধ্যে অধিকাংশ পরিবারকে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ কেজি করে চাল দেয়া সম্ভব হয়েছে। আবারও ত্রাণের চাল পেলে বাকিদের সাহায্য করা হবে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নটি বহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় অবস্থিত। এই ইউনিয়নে কমপক্ষে ৬শ পরিবার ছোট ছোট নৌকায় বসবাস করছেন। নৌকায় বসবাসকারী বেশির ভাগ পরিবার তাদের মাছ ধরার নৌকায় সংসার পেতেছেন। এদের রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া, ঘুম সব নৌকাতেই করতে হচ্ছে। আর যাদের নৌকা নেই, তারা দূরবর্তী উঁচু জায়গায় স্থান নিয়েছেন। চাহিদা অনুযায়ী এসব পরিবারকে ত্রাণ দেয়া সম্ভব হয়নি।
সরকারি হিসেবে জেলার ৯ উপজেলায় বন্যা কবলিত প্রায় ৮ লক্ষাধিক মানুষের জন্য ৮শ মেট্রিক টন জিআর, ৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/ওএম
কুড়িগ্রাম খাদ্য ও জ্বালানি সংকট টপ নিউজ বন্যা বানভাসীদের দুর্ভোগ