Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্কয়ারে ডাক্তারের ‘অবহেলায়’ ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু!


২০ জুলাই ২০১৯ ১৬:০৯ | আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ১৬:২২

ঢাকা: রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ডাক্তারের অবহেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত ৪ জুলাই বিকেল তিনটায় হাসপাতালে ভর্তির পর ৫ জুলাই বিকেল চারটায় শিশুটি মারা যায়। শিশুটির মৃত্যুর জন্য তার পরিবার ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলাকে দায়ী করেছে।

সাত বছর বয়সী শিশুটির নাম মো: ইরতিজা শাহাদ প্রত্যয়। সে ধানমন্ডি মাস্টার মাইন্ড স্কুলের প্রথম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ছিল। স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর মাত্র ২৪ ঘণ্টার চিকিৎসায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়েছে প্রত্যয়ের পরিবারকে।

বিজ্ঞাপন

প্রত্যয়ের বাবা ডা: মো: শাহেদ রফি পাভেল‘র অভিযোগ স্কয়ার হাসপাতালের পিআইসিইউ‘র কনসালটেন্ট ডাক্তার মো: আহমেদ সাঈদের অবহেলায় ও অনুপস্থিতির কারণে আমার ছেলের মুত্যু হয়েছে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, গত ৪ জুলাই বিকেল তিনটায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত আমার একমাত্র শিশুপুত্র মো: ইরতিজা শাহাদ প্রত্যয়কে স্কয়ার হাসপাতালে পিআইসিইউ (Paediatric Intensive Care unit) –এ ভর্তি করায়। স্কয়ার হাসপাতালে পিআইসিইউ‘র কনসালটেন্ট ডা: মো: আহমেদ সাঈদ এর দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং অনুপস্থিতির কারণে গত ৫ জুলাই বিকেল চারটায় আমার ছেলে মারা যায়।

‘আমি এর প্রতিকার চেয়ে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য সচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) এর প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদন করেছি। আগামী রোববার (২১ জুলাই আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে লিখিত অভিযোগে দায়ের করবো।’ যোগ করেন প্রত্যয়ের বাবা।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, গত ৩০ জুন শিশুটি ডেঙ্গুতে অক্রান্ত হলেও প্রথমে বোঝা যায়নি। পরদিন ১ জুলাই তার জ্বর থাকলেও ২ জুলাই কোনো জ্বর ছিল না। ৩ জুলাই সামান্য পেটে ব্যাথা হয়। ৪ জুলাই সকালে প্রথমে তাকে ধানমন্ডি আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন শিশুটির ব্লাড প্রেশার কম থাকায় ডাক্তার স্যালাইন দেয় এবং ১৫ মিনিটের মধ্যেই প্রেশার (১১০/৯০) স্বাভাবিক হয়। পরে আনোয়ার খান মেডিকেলের ডাক্তার কুন্তল রায়ের পরামর্শে একইদিন বিকেল তিনটায় প্রত্যয়কে স্কয়ার হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রত্যয়ের বাবা ডা: শাহেদ রাফি পাভেল সারাবাংলাকে বলেন, গত চার জুলাই বিকেল তিনটায় আমার ছেলেকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করাতে চাইলেও তারা রোগীকে সরাসরি পিআইসিইউতে ভর্তি করে। ভর্তির তার ১০ মিনিট পর পিআইসিইউর কনসালটেন্ট ডা. মো: আহমেদ সাঈদ আমাদের ব্রিফ করে বলেন, রোগীর ব্লাড প্রেসার ১১০/৯০ এবং ৯০ শতাংশ ওকে আছে, বাকি ১০ শতাংশ সমস্যা থাকলেও ৪৮ ঘন্টা অবজারভেশনে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে। পরে কনসালটেন্ট চলে যায়। বিকেল চারটা থেকে রাত ১১ টা ৪০ পর্যন্ত একবারও কনসালটেন্ট পিআইসিইউতে আসেনি। অথচ এই সময়ে আমার বিল উঠেছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, ওইদিন রাত ৯ টায় আমরা পিআইসিইউতে গিয়ে দেখি বাচ্চার প্রচুর ঘাম হচ্ছে, ওই মুহূর্তে কোনো কনসালটেন্ট ছিল না। পরে রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে কনসালটেন্ট আসেন। পাঁচ মিনিট পর তিনি আমাদের ডেকে বলেন, বাচ্চার অবস্থা ভালো না তাকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হবে এবং তাই করলেন। অথচ বিকেলে তিনটায় কনসালটেন্ট রোগী রিসিভ করে বললেন বাচ্চা ৯০ শতাংশ ওকে, লাংসে কোনো পানি নাই। অথচ রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে বললেন বাচ্চার লাংস পানিতে ভর্তি, শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাকে লাইফ সাপোর্টে দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমার বাচ্চা হেঁটে গাড়িতে উঠে হাসপাতালে আসে এবং হাসপাতালে এসেও স্বাভাবিক খাবার খায়। তাকে পিআইসিইউ কিংবা লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। মূলত ডাক্তারদের পরামর্শে আমি তাতে রাজী হয়, যাতে বাচ্চার কোনো রিস্ক না থাকে। পিআইসিইউতে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করলাম কিন্তু তারপরেও এখানে কনসালটেন্ট ডাক্তার থাকে না। রোগীর সমস্যা হলে ডিউটি ডাক্তার তাকেও ফোন দেন। উনি ফোনে ফোনে ট্রিটমেন্ট দেন। আর বেশি খারাপ হলে দৌড়ে আসেন। এভাবে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করা উচিত না।

তিনি বলেন, আমার বাচ্চার ক্রিটিক্যাল অবস্থা ছিল না। বরং ভালো তদারকির জন্য স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র স্কয়ার হাসপাতালের পিআইসিইউ‘র কনসালটেন্ট ডাক্তারের চরম অবহেলা আর কর্তব্যরত ডাক্তারদের অদক্ষতা ও ভুলের কারণে আমার ছেলেকে মরতে হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে স্কয়ার হাসপাতালের হেড অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট সার্ভিস কর্নেল (অব:) নুরুল হককে ফোনে পাওয়া যায়নি। এমনকি মুঠোফোনের ক্ষুদে বার্তারও কোনো জবাব দেননি তিনি।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

চিকিৎসায় অবহেলা ডেঙ্গু স্কয়ার হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর