Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্নীতির কোনো শব্দ আমি উচ্চারণ করিনি: দুদক চেয়ারম্যান


২০ জুলাই ২০১৯ ১৩:২১ | আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০৫:৪৮

ঢাকা: ‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি’ নিয়ে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে দুর্নীতি শব্দই উচ্চারণ করেননি বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘সেদিন এক প্রশ্নের জবাবে আমার উত্তর ছিল খুবই সহজ। সেখানে দুর্নীতির কোনো শব্দ আমি উচ্চারণ করিনি। এই শব্দ কিভাবে আসল তা আমার জানা নেই। ভিডিও ক্লিপ সবার কাছেই আছে। এ বিষয়ে আর কোনো ব্যাখ্যা দিতে চাইনা।’

শনিবার (২০ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দুর্নীতি দমনে আইনজীবি ও বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক এ সেমিনারে এ কথা তিনি।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার কথা যে যেভাবে ব্যাখ্যা করেন, তাতে আমি কোনো কিছু কর্ণপাত করি না। আমার হারানোর কিছু নেই আমি এখন একটা দায়িত্ব পালন করছি।’

প্রায় সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি আছে স্বীকার করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বীকার করতে সমস্যা নাই, এমন কোনো নথি নাই যেগুলোর মধ্যে কিছু না কিছু সমস্যা নাই। কেউ আমাদের আইন মানছে না, টাইম টেবিল মানছে না। আমাদের আস্থার সংকট রয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নাই।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমার দুইটা দৌড়, সরকারের কাছে মেসেজ পৌঁছে দেওয়া, অন্যটি বিচার বিভাগের কাছে সোপর্দ করা। আমাদের ধরা বা মামলা ৬০ থেকে ৭০ পার্সেন্টই চুনোপুটি অর্থাৎ ছোট। চুনোপুটি ধরা যতটা সোজা বটগাছ ধরা ততটাই কঠিন। তার মানে আমরা রুই কাতলা ও বড় দুর্নীতিবাজদের ধরবো না তা নয়। মানি লন্ডারিংয়ের ২শটি মামলার মধ্যে ২২টি শেষ হয়েছে। এই ২২টিরই সাজা হয়েছে।’

দুদকের অনেক আইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, তবে একটি বার্তা দেওয়া সম্ভব হয়েছে যে দুর্নীতি করলে কিছু না কিছু হতে পারে, হবে।

বিজ্ঞাপন

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা গণশুনানি করছি, কারণ টু এক্সপোজ পাবিলিক সার্ভেন্টস। আমার বলতে দ্বিধা নেই, পাবলিক সার্ভেন্ট রিয়েলি মেটার। দুর্নীতি দমনে সরকারের ব্যুরোক্রেসি ইজ ভেরি ইম্পোর্টেন্ট দ্যট। সেই কারণে আমরা পাবলিক সার্ভেন্টদের জনগণের মুখোমুখূ করার জন্য আমরা গণশুনানি করি। এর জন্য টিআইবি, বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ সবার সহযোগিতা নিচ্ছি।’

‘দুর্নীতি দমন কিন্তু দুর্নীতি প্রতিরোধেরই একটা অংশ। যদি আমরা ভাল তদন্ত করতে পারি, আমরা যদি ভাল প্রসিকিউশন করতে পারি এবং বিচারে যদি কাউকে শস্তি দিতে পারি বা শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে সেটার একটা ইফেক্ট পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘আমার স্বীকার করতে দ্বিধা বা হীনমন্যতা নাই যে, আমাদের সক্ষমতার অভাব আছে। এটা সত্য। আমার মোট তদন্ত কর্মকর্তার সংখ্যা সম্ভবত তিনশর বেশি হবে না। শুনে আপনারা কষ্ট পাবেন, তদন্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে ডিএডি যদি একজন সচিবের ইনকোয়্যারি করে সেটা কেমন দেখায়। অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টর, ডেপুটি ডিরেক্টর মিলে কয়জন, আপনারা যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন তাহলে আমি উত্তর দিতে পারব না। তার মধ্যে অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টরই বেশি।’

ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমি প্রথম দিন থেকেই শুরু করেছি প্লিজ আপনারা টাইমলাইন মানুন। টাইমলাইন তারা মানতে পারছেন না। এর জন্য বিধিও সংশোধন করেছি।’

‘আমাদের তো অযুহাত দেওয়ার সক্ষমতা অনেক বেশি। আমরা যারা কাজ করি বা আমরা যারা বাংলাদেশের মানুষ আমাদের অযুহাত দেওয়ার সক্ষমতা অনেক বেশি। সে কারণে এগুলো হয়ে ওঠে না। আমাদের আস্থার সঙ্কট রয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই। একদিনে তো আর আস্থা তৈরি হয় না। এক জনমে আপনি অনেক কিছুই করতে পারবেন না। আপনাকে রেখে যেতে হবে পরবর্তী জনমের জন্য, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।’

বিজ্ঞাপন

আমরা ইনভেস্টিগেশন ভালভাবে না করলে কোনো আইনজীবীর পক্ষেই সেটাকে উপস্থাপন করা সম্ভব না বিচারের জন্য। প্রসিকিউশন যদি সাক্ষি উপস্থাপন করতে না পারে, ঠিকমত এক্সিবিট করতে না পারলে কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না বিচারকের কাছে বিচার প্রার্থনা করা।’

তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা কিছু প্রশ্নের জবাব এখানে এসেছে। সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। এর কারণ হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন আকাশ থেকে উড়ে আসে নাই। দুর্নীতি দমন কমিশনের এখানে যারা কাজ করেন তারা কিন্তু বিদেশ থেকে আসে নাই। আমরা সবাই এ সমাজের মানুষ। আমরা সবাই এ মাটির সন্তান, আমরা সবাই এ পরিবেশের প্রোডাক্ট। তাই আমরা কোনো মরুদ্যান নই। আমি অনেকবার বলেছি অমরা কোনো মরুদ্যান না, আমরা এই সমাজেরই অংশ। তাই সমাজের অন্যান্য জায়গায় যা হয় আমার এখানে যে তা হয় না কথাটা সঠিক নয়।’

আমরা অস্বীকার করি না। আমাদের যে ধরা বা মামলা করার যে গতি-প্রকৃতি দেখেন, আমি নিজেও দেখেছি অনেকটাই অন্তত ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সম্ভবত চুনোপুঠি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোর্শেদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/জেএএম

টপ নিউজ দুদক চেয়ারম্যান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর