Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আষাঢ়ের শেষে টানা বর্ষণ, যেন পানিতে ভাসছে চট্টগ্রাম নগরী!


৮ জুলাই ২০১৯ ১৩:২৯ | আপডেট: ৮ জুলাই ২০১৯ ১৪:০০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আষাঢ়ের শেষদিকে এসে তুমুল বর্ষণ চলছে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে। ছয় ঘন্টারও বেশি সময় ধরে টানা বর্ষণে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ এলাকা। নগরীর বিভিন্নস্থানে দেওয়াল, গাছপালা ভেঙ্গে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে, এখনও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কে পানি জমে গিয়ে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। মূল সড়কগুলোতে যানজট তৈরি হয়েছে। এছাড়া, অলিগলিতেও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাসা-দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস, কাঁচাবাজারেও। সার্বিকভাবে বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া, টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বিভিন্ন পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের সরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পাঁচদিন আগে গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) থেকে সামান্য বৃষ্টিপাত শুরু হলেও শনিবার থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। রোববার রাত থেকে শুরু হয় ভারি বৃষ্টিপাত। সোমবার ভোর থেকে সেটা টানা প্রবল বর্ষণে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ প্রদীপ কান্তি নাথ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত পাঁচদিনে ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে। আর মাঝারি থেকে ভারি আকারে টানা বৃষ্টি শুরুর পর সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ১৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে।

এদিকে, টানা বৃষ্টি শুরুর পর সোমবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে নগরীর ওয়াসা, মেহেদিবাগ, প্রবর্তক, অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেইট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বাকলিয়া, হালিশহরসহ চট্টগ্রাম নগরীর বড় অংশজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর মূল সড়ক ও অলিগলি।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, নগরীর দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় পানি জমে থাকার তথ্য পেয়েছেন তিনি। জামালখানে একটি গাছ ভেঙ্গে সড়কের একপাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। নগরীর ঘাটফরহাদ বেগ এলাকায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সীমানা দেওয়াল ভেঙ্গে পাহাড়ি মাটি ও পানি এসে পড়েছে সড়কে।

‘অধিকাংশ এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি হয়েছে। প্রবর্তক-কাপাসগোলার দিকে কোমর সমান পানি হয়েছে। কয়েকটি এলাকা থেকে দেওয়াল ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়ার খবর পেয়েছি। আমাদের সিটি করপোরেশনের টিম মাঠে কাজ করছে। সড়কে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। কোথাও কোথাও যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ফ্লাইওভারের ওপর পানি উঠে গেছে। ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়ি চলতে পারছে না।’ বলেন কাউন্সিলর সুমন

চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে থাকার তথ্য দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি নিয়ে ফ্লাইওভার অতিক্রম করতে গিয়ে অনেকে দুর্ভোগে পড়েছেন।

নগরীতে গণপরিবহনের পরিমাণ কমে গেছে। পানির মধ্যে অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি বিকল হয়ে দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে ওয়াসা এলাকায়।

নগরীর মেহেদিবাগ এলাকায় প্রাইভেট কার বিকল হয়ে আটকে পড়া ব্যবসায়ী কফিল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই যে চট্টগ্রাম নগরীতে গলা পর্যন্ত পানি উঠবে, সেটা সবাই জানত। তাহলে সিটি করপোরেশন নালাগুলো পরিস্কার করে রাখার ব্যবস্থা করল না কেন ? এই যে পানি উঠেছে, সবই তো নালা-নর্দমা আটকে উঠেছে। শুনেছি- সিডিএ জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে খালে বাঁধ দিয়েছে। তাহলে পানি যাবে কিভাবে ?’

পানিতে ভাসতে দেখা গেছে নগরীর চকবাজার কাঁচাবাজারের দোকানপাটগুলো। একইভাবে নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। পানি ঢুকে গেছে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকার কলোনি, ভবনের নিচতলার বাসাগুলোতেও।

নগরীর বগার বিল এলাকায় সালাম বিল্ডিংয়ের নিচতলায় বাসায় পানি ঢুকে গেছে। সেখানকার বাসিন্দা প্রবীর দাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্রোতের মতো করে পানি ঢুকছে। নালার ময়লাসহ পানি ‍ঢুকে গেছে। বৃষ্টি যখন শুরু হয়েছে, তখনই ভেবেছিলাম পানি আসবে। সারারাত ঘুমায়নি। সকালে দেখি সামনের রাস্তায় পানি উঠেছে। এরপর বাসায়ও ঢুকে গেছে।’

কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের শঙ্কায় নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। মাইকিং অব্যাহত আছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, পাহাড় থেকে এ পর্যন্ত ৩৬১টি পরিবারকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। আরও যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে, তাদের সরানোর প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে, সারাবাংলা’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অভ্যন্তরে পাহাড়ের পাদদেশে ও কলোনিতে বসবাসকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে ও চাকসু কেন্দ্রে নিরাপদ আশ্রয় যেতে বলা হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে মাইকিং চলছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- ভারি বৃষ্টির কারণে নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বদ্দার হাট মোড়, মুরাদপুর মোড়, শোলক বহর এলাকা, দুই নাম্বার গেট এলাকা, অক্সিজেন মোড়, বাদশা মিয়া পেট্রোল পাম্প, জিইসি মোড় থেকে খুলশী, শিল্পকলা এলাকায় মোহাম্মদ আলী রোড, ওয়ারলেস গেট মুরগি ফার্ম, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার গুলজার মোড়, ডিসি রোড, ওয়াসা মোড়, নিউ মার্কেট থেকে আমতলা, নিউ মার্কেট থেকে বিআরটিসি মোড়, জামাল খান মোড়, চৌমুহনী থেকে কদমতলী মোড়, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় থেকে এক্সেস রোড, সদরঘাট মোড়, সল্টগোলা ক্রসিং মোড়, ইপিজেড থেকে বন্দরটিলা, মনসুরাবাদ পুলিশ লাইন এলাকার সামনে সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/জেএএম

আষাঢ় মাস চট্টগ্রাম নগরী টপ নিউজ বর্ষণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর