Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পেডোফিলিয়া নিয়ে অজ্ঞতা, যৌন শিক্ষার অভাবে বাড়ছে শিশু ধর্ষণ


৮ জুলাই ২০১৯ ১২:৪১ | আপডেট: ৮ জুলাই ২০১৯ ১৬:৪০

ঢাকা: গত ৫ জুলাই রাতে রাজধানীর ওয়ারীর একটি বহুতল ভবন থেকে সাত বছরের সামিয়া আক্তার সায়মার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যার আগে সামিয়াকে ধর্ষণ করা হয়।

গত ৬ জুলাই নেত্রকোনার কেন্দুয়ার আঠারবাড়ি এলাকার মা হাওয়া (আ.) কওমি মহিলা মাদরাসার প্রধান শিক্ষক বা মুহতামিমকে গ্রেফতার করা হয়। হাত-পা টেপানোর নাম করে শিশু শিক্ষার্থীদের নিজের কক্ষে শিশুদের ধর্ষণ করতেন এবং বিষয়টি কাউকে না জানাতে তাদের পবিত্র কোরআন শরীফ ছুঁইয়ে শপথও করাতেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ২৫ জুন (মঙ্গলবার) চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে নয়মাস বয়সী শিশু চাচার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। গত ৩ জুলাই রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হয় এক কিশোরী।

আরও পড়ুন: ছয় মাসে ৩৯৯ শিশু ধর্ষণের শিকার, ১৬ জনের মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি মাদরাসার ১২ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির অভিযোগে মাদরাসাটির প্রধান শিক্ষককে আটক করে র‌্যাব। যে ১২ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে এরা সবাই শিশু।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আশঙ্কাজনকভাবে দেশে শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। অশ্লীলতা ও তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহর, মাদক, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, আইনের ধীরগতি, শিশুরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও প্রতিরোধে অক্ষম এবং নানা হুমকি দিয়ে শিশুদের চুপ করিয়ে রাখা যায় বলেই শিশু ধর্ষণের হার বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে।

আরও পড়ুন: বিকৃতি বাড়ছে কেন- সেটি আগে চিহ্নিত করুন!

বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের চাইল্ড রাইটস গভর্নেন্স অ্যান্ড চাইল্ড প্রটেকশন ডিরেক্টর আবদুল্লা আল মামুন সারাবাংলাকে বলেন, দেশে শিশু ধর্ষণ বাড়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ একইসঙ্গে কাজ করছে। এই কারণগুলো একটি অপরটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ধর্ষণের ঝুঁকি ও ভয়াবহতা বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে প্রধানত অশ্লীলতা ও তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নানা প্রকারের যৌনতা প্রবেশ করেছে। একইসঙ্গে মাদক, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, আইনের ধীরগতি ও বৈষম্যমূলক প্রয়োগ এবং নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ধর্ষককে নানাভাবে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য তার।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া পেডোফিলিয়া (বিকৃত রুচিতে আক্রান্ত ও সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি পূরণে শিশুদের বেছে নেওয়া) বিষয়ে অজ্ঞতা, সঠিক যৌন শিক্ষার অভাব, শিশুর পারিবারিক ও সামাজিক সুরক্ষা বলয় তৈরিতে ব্যর্থতা প্রতিদিন নতুন করে শিশুর জন্য ধর্ষণের ঝুঁকি তৈরি করছে বলেন আব্দুল্লা আল মামুন। আবার আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধগুলোর চর্চাও পরিবারগুলোতে দিনদিন কমে এসেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যৌন চাহিদা নিবারণের জন্য এর ধর্ষক অধিকাংশ সময় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও প্রতিরোধে অক্ষম কাউকে বেছে নেয়। যার শিকার হচ্ছে পারিবারিক বা সামাজিকভাবে অরক্ষিত শিশুরা।

আরও পড়ুন: স্টপ রেপিজম

যারা অপরাধী তাদের ওপরও একটি স্টাডি করা জরুরি মন্তব্য করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রনি চাকমা বলেন কেন তারা শিশুদের রেপ করবে? এমন চিন্তা মাথায় আসে কিভাবে সেটি খুঁজে বের করতে হবে আমাদেরকে। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক। দ্রুততম সময়ে এটি বন্ধ করতে হবে।’

কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক ফেরদৌস আরা রুমি সারাবাংলাকে বলেন, শিশুদের সহজে ভয়, ভীতি বা লোভ দেখিয়ে হাতের মুঠোয় আনা যায়। যে কারণে ধর্ষক বা নির্যাতনকারী ঝামেলামুক্ত থাকতে শিশুদের বেশি বেছে নেয়।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোন একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখা যায়নি যাতে অপরাধীরা ভয় পায় কিংবা নতুন কেউ এই অপরাধে যুক্ত হতে না পারে। অথচ এর ভয়াবহতা দিন দিন এতোই বেড়েছে যে, কন্যা শিশু বা পুত্র শিশু কেউ এর থেকে মুক্ত নয়।

তিনি বলেন, শিশুদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় না শিখিয়ে বরং পরিবারে বা নিকট আত্মীয় দ্বারা নির্যাতনের শিকার হলে তাকে তা গোপন রাখার জন্য বলা হয়। এছাড়া যৌন শিক্ষার বিষয়টি আমাদের পাঠ্যবইয়ে বা পরিবারেও শেখানো হয় না  সংকোচ ও ট্যাবুর কারণে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রাফিজা শাহীন বলেন, ‘আমাদের দেশে শিশুদের প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান আছে, সেটি আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। আমরা কেন শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাস গড়তে পারছি না, তা নিয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে। শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এখনি করণীয় ঠিক করতে হবে।’

বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন জানিয়েছে,  এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারাদেশে ৩ শ ৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৮ জন ছেলে শিশু। ধর্ষণের পরে ১ জন ছেলে শিশুসহ মারা গেছে ১৬ টি শিশু। অপরদিকে, ২০১৮ সালে ৪৩৩টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয় এবং ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যায় ২২টি শিশু বলে জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। এছাড়াও, একজন মারা গেছে যৌন নির্যাতনের কারনে। আর ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছিল ৫৩টি শিশুর ওপর।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে,২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হওয়া বেশিরভাগ শিশুর বয়স ৭ থেকে ১২ বছর। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা বেশি হন যৌন নির্যাতনের শিকার। বিশেষ করে পুরুষ শিক্ষকের হাতে এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১২৯ জন। এদের মধ্যে ১৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ

ধর্ষণ শিশু ধর্ষণ সুরক্ষা

বিজ্ঞাপন

৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর