Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্যান্সার রোগীদের সিংহভাগই চিকিৎসা বঞ্চিত!


৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৮:২৫ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:১৫

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ৩৩ বছরের ঝর্না বেগম। বিয়ে হয় ২৩ বছর বয়সে। প্রথম সন্তানের জন্মের পর ঝর্না বেগমের নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে ঢাকায় আসার পর দেখা যায় তিনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। শ্বশুড়বাড়ি থেকে বলা হয়, ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে না, গ্রামের ফার্মেসি থেকেই ওষুধ খেলেই হবে।

৭২ বছরের নিয়ামত আলী প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনবছর আগে। কিন্তু দিন এনে দিন খাওয়া নিয়ামত আলীর সামর্থ্য ছিল না এ রোগের চিকিৎসা করানোর। কয়েক বছর গ্রামে থাকার পর স্থানীয় এক প্রবাসীর সহায়তায় সে এখন জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এভাবেই দেশের সিংহভাগ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুমিত ক্যান্সার রোগীদের এক- তৃতীয়াংশের মতো রোগীরা দেশের স্বীকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় আসে। বাকীদের একটা অংশ বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছে কিংবা নানা অবৈজ্ঞানিক ব্যবস্থার আশ্রয় নিচ্ছে। ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক রোগী। কারণ, একমাত্র জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কোনো বিশেষায়িত ক্যান্সার সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি।

আজ (৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাংলাদেশেও প্রতিবছর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ ক্যান্সার। তবে বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্তদের সিংহভাগই চিকিৎসা বঞ্চিত। এর ফলে দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) এর হিসাব থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ২২ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, মারা যায় ৯১ হাজার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই দশকে দেশে সরকারি খাতে ক্যান্সার চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির উন্নতি হলেও আগে থেকে চালু ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সবগুলিতে বিকিরণ চিকিৎসা চালু নেই। আবার বেসরকারি কয়েকটি বড় হাসপাতালে রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সার চিকিৎসা চালু হলেও তার ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আর অলাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যান্সার সেবা দেওয়ার উদ্যোগ কম।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা রাজধানী কেন্দ্রিক। তাই সরকারি খাতে চিকিৎসার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়। সামর্থ্য না থাকলেও বাধ্য হয়ে বিদেশে কিংবা বেসরকারি হাসপাপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হচ্ছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলোজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক এবং হেলথ ইকোনোমিস্ট অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী। অজ্ঞতা, অসচেতনতা এবং ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা সুবিধা অতি-কেন্দ্রীভূত হওয়ায় রোগ ধরা পড়ে দেরিতে, যখন অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া সম্ভব হয় না।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় (ASEAN) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সার নির্ণয়ের এক বছরের মধ্যে শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ রোগী মারা যায় কিংবা ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষের ভৌগোলিক ও আর্থিক নাগালের মধ্যে ক্যান্সার সেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।

একইসঙ্গে দিনদিন নাগালের বাইরে যাওয়া চিকিৎসা ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও সীমিত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মতো ব্যবস্থা চালু করা এবং ক্যান্সার রোগী ও একজন স্বজনের জন্য গণপরিবহনে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

সারাবাংলা/জেএ/টিএম

ক্যান্সার মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর