Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বাবাকে তাড়াতাড়ি আমার কাছে ফিরিয়ে দাও’


৩ জুলাই ২০১৯ ১৪:২৮ | আপডেট: ৩ জুলাই ২০১৯ ১৪:৪৬

ঢাকা: ‘বাবা যেদিন নিখোঁজ হয়, সেদিন দুপুরে আমাকে ফোন দিয়েছিল। বলেছে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরবে। আর ফেরেনি। আমি আমার বাবাকে খুব মিস করি। বাবাকে তাড়াতাড়ি আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।’ সাংবাদিকদের সামনে এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে শাহীনের নয় বছরের ছেলে তাশদীদ আন নাফি বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি করছিলেন।

শাহীনের খোঁজ না মেলায় দু মাস পর স্বামীর খোঁজ পেতে বুধবার (৩ জুলাই) দুপুর ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন স্ত্রী তানিয়া আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে শাহীনের স্ত্রী ছাড়াও তার সন্তান তাশদীদ, বাবা আব্দুল আউয়াল মন্ডল, মামা সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই তাশদীদ বাবার জন্য কাঁদে।

বিজ্ঞাপন

তাশদীদের বাবার নাম আতাউর রহমান শাহীন। তিনি বেঙ্গল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পাশাপাশি তিনি আইটি বিশেষজ্ঞ হওয়ায় আকিজ গ্রুপে এসেছিলেন একটি কাজে। গত ২ মে রাতে তেজগাঁও সাতরাস্তা সংলগ্ন আকিজ হাউজ থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন লোক তাকে তুলে নিয়ে যায়। যা পরদিন পুলিশ সিসি ক্যামেরা দেখে নিশ্চিত হয়।

নিখোঁজ শাহীনের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, ‘দুই মাস থেকে স্বামী নিখোঁজ রয়েছে। আমি সন্তান সম্ভবা, অসুস্থ। স্বামীর জন্য দুই মাস বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। স্পিকার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র‍্যাব ও ডিবির কাছে গিয়েছি। সবাই শুধু বলে, দেখছি। ৯ বছরের ছেলেকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো? আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিন, আমার অনাগত সন্তান ও ৮ বছরের সন্তানের বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’

সেদিন রাতে শাহীন বাসায় না ফেরায় স্ত্রী তানিয়া আক্তার মোবাইলে ফোন তা বন্ধ পান। এরপর তিনি বিষয়টি তার স্বজন ও সহকর্মীদের জানান। তারা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেন। এমনকি হাসপাতালেও খোঁজ করেন। তবে, কোথাও তার সন্ধান পাচ্ছিলেন না। এরপর ৩ মে সকালে শাহীনের স্বজনরা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় যান। শাহীনের মামা সাইফুল ইসলাম একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ১২৩) করেন। ঘটনার পর পুলিশ আকিজ হাউজে গিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। তারা মাইক্রোবাসটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করে। এরপরও খোঁজ না পেয়ে মামলা করে পরিবার।

বিজ্ঞাপন

তানিয়া জানান, তার স্বামী বেঙ্গল গ্লাস কোম্পানিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও ৪ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে খন্ডকালীন চাকরি করতেন। স্বামীকে না পেয়ে তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকারসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু কেউই তার নিখোঁজের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি বলে জানান তিনি।

স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না, অফিসে কারও সাথে সমস্যা ছিল না, রাজনীতিও করতো না। যারা তাকে তুলে নিয়ে গেছে তাদের চেহারা সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে, তারপরেও কেনো তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। আমি নিশ্চিত সরকার ভালভাবে তদন্ত করলে আমরা তাকে ফিরে পাবো। তাই আমি তাকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে আতাউরের বাবা আব্দুল আউয়াল মন্ডল বলেন, ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর আমি র‍্যাবের কাছে যাই। প্রথমে তারা তৎপর ছিল, পরে থেমে গেছে। ডিবিও প্রথমে তৎপর থেকে পরে থেমে গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘দেখছি’।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ডল বলেন, তার তদন্ত বার বার থেমে যাচ্ছে, আমরা মনে করছি সরকারি কোন সংস্থা এর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে।

শাহীনের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই ইমাম হাসান সারাবাংলাকে বলেন, শাহীন নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাকে খুঁজে বের করতে তদন্ত অব্যাহত আছে। তাকে পাওয়া গেলে অবশ্যই পরিবারকে জানানো হবে।

সারাবাংলা/ইউজে/জেএএম

টপ নিউজ তাশদীদ শাহীন

বিজ্ঞাপন

সাভারে তিন গাড়িতে আগুন, নিহত ৪
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর