গ্যাসের দাম বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ ও হতাশ সাধারণ মানুষ
৩০ জুন ২০১৯ ২০:০৭ | আপডেট: ৩০ জুন ২০১৯ ২০:৩৫
ঢাকা: ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় হতাশা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বেশকয়েকটি এলাকার বাসিন্দা, হোটেল মালিক ও সিএনজি অটোরিকশার চালকরা এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। সারাবাংলার কাছে তারা অভিযোগ করে বলেন, এই সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক।
রোববার (৩০ জুন) বিকেলে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী গৃহস্থালিতে ব্যবহারের জন্য প্রতিমাসে গ্রাহকদের এক বার্নার চুলার জন্য গ্যাসের দাম ৯২৫ টাকা ও দুই বার্নার চুলার জন্য ৯৭৫ টাকা গুনতে হবে। এছাড়া মিটারযুক্ত চুলার জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ টাকা ৬০ পয়সা।
আরও পড়ুন: গ্যাসের দাম বেড়ে এক চুলায় ৯২৫, দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হোটেল ও রেস্টুরেন্টের জন্য প্রতি ঘনমিটার ২৩ টাকা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার ১৭ টাকা ৪ পয়সা। এছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ব্যবহৃত সিএনজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় ফল ব্যবসায়ী এবং পুরান ঢাকার বাসিন্দা শরীফ আহমেদ বলেন, ‘ব্যয়বহুল একটা শহরে থাকি। তার ওপরে গ্যাসের মত সহজলভ্য রাষ্ট্রীয় সম্পদ কিনতেও যদি হাজার টাকা গুনতে হয়, তাহলে আমরা বাঁচব কিভাবে? বাজেটের পর সবকিছুর দাম বেড়েছে, এখন বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম! আমাদের জন্য বেঁচে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে ‘
পাশেই বাজার করে ফিরছিলেন হালিমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের দাম না বাড়ালে সরকারের খুব বেশি ক্ষতি হতো না। সাধারণ মানুষ এখন বিপদে পড়বে। বিশেষ করে আমাদের মত বেতনভূক্ত মধ্যবিত্তদের বেশি কষ্ট করতে হবে। গ্যাসের দাম বাড়ার জেরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোরও দাম বাড়বে। তখন বিপদ আরও বাড়বে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই মত দিয়েছেন ঢাকার বেশ কয়েকজন হোটেল মালিক ও সিএনজি চালক। শাহবাগের একজন হোটেল মালিক বলেন, ‘রান্না করা খাবার ব্যবসায় এমনিতে অনেক বেশি খরচ। বিশেষ করে গ্যাস বিলের খরচ অনেক বেশি। এখন গ্যাসের দাম বাড়লে আমাদের খরচ বাড়বে। সেক্ষেত্রে খাবারের দাম বাড়াতেও আমরা বাধ্য হব। সাধারণ জনগণ বিপদে পড়বে।’
আরও পড়ুন: গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ৯ হাজার কোটি টাকা তোলার টার্গেট
এ ব্যাপারে সাইন্সল্যাবের যানজটে বসে থাকা সিএনজির একজন চালক বলেন, ‘প্রতিদিন ১ হাজার ৩শ টাকা ভাড়া দিয়ে সিএনজি চালাই আমরা। রাস্তার খরচ মিলিয়ে সেটা ২ হাজারে পৌঁছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়ল। স্বাভাবিকভাবেই ভাড়া বেশি চাইতে হবে। এখন যে ভাড়া চাই তাতে লোকজনের সাথে প্রতিদিন ঝগড়া হয়। আগামীকাল থেকে ঝগড়া আরও বাড়বে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অযৌক্তিক। ‘
এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে এনার্জি রেগুলেটারি কমিশন। এই খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা, সার কারখানায় ৪ টাকা ৪৫ পয়সা এবং শিল্প কারখানা ও চা বাগানে ১০ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়েছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানো সংক্রান্ত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘বিএআরসি আইন ২০০৩-এর ধারা ২২ (খ) ও ৩৪ অনুযায়ী তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, কর্ণফুলী, সুন্দরবন ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার বাড়ানো হলো।’
ঘোষণায় আরও জানানো হয়, বাণিজ্যিক গ্রাহকশ্রেণির অন্তর্ভূক্ত ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প গ্রাহকদের মূল্যহার অপরিবর্তিত থাকবে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ন্যূনতম চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর বাইরে গৃহস্থালি ছাড়া অন্য গ্রাহকশ্রেণির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার মাসিক অনুমোদিত লোডের বিপরীতে ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে গড়ে ১০২ ভাগ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। পরে মার্চ মাসে গণশুনানি করে কমিশন। শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে দামের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ীই রোববার বিকেলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলো।
সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম