এইচএসসি পাশ করে এমবিবিএস ডাক্তার!
১৮ জুন ২০১৯ ১৩:৪৮ | আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯ ১৪:৪৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পড়ালেখা উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি পর্যন্ত। অথচ সাইনবোর্ড অনুযায়ী তিনি ‘এমবিবিএস’ ডিগ্রিধারী, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের মেডিকেল অফিসার। এই পরিচয়ে চেম্বার খুলে দিব্যি চিকিৎসা দিয়ে আসছেন, পসারও বেশ। তবে র্যাবের এক কর্মকর্তা রোগী সেজে গিয়ে ধরে ফেলেন তার প্রতারণা। এসময় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযানের সময় এই কথিত ডাক্তার বিকিরণ বড়ুয়ার কাছে যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা নিতে অপেক্ষমান দেখেছেন, চট্টগ্রাম শহরের অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারেও সেই পরিমাণ রোগী দেখা যায় না।
চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গার বিজয়নগরে আয়েশা মেডিকেল নামে একটি ফার্মেসিতে সোমবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও র্যাব।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা প্রশাসনের পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, বিকিরণ বড়ুয়া নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিলেও সে পড়ালেখা করেছে এইচএসসি পর্যন্ত। চিকিৎসক না হয়েও প্রতারণার জন্য তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর ভেজাল ও অনুমোদনহীন বিভিন্ন ওষুধ বিক্রির অপরাধে বিকিরণ যে ফার্মেসিতে চেম্বার খুলেছিলেন, সেটার মালিক ফরিদুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অভিযানে থাকা র্যাবের সিনিয়র এএসপি মিমতানুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, কথিত ডাক্তার বিকিরণ বড়ুয়ার সন্ধান পাবার পর র্যাবের এক সদস্যের মাধ্যমে সোমবার সন্ধ্যায় চিকিৎসার জন্য নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়। মিমতানুর রহমান রোগী সেজে আয়শা মেডিকেলে বিকিরণের চেম্বারে যান। এসময় চেম্বারে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী ছিল, যার মধ্যে গর্ভবতী নারী এবং শিশুও ছিল।
মিমতানুরকে চিকিৎসা দেওয়ার সময় তিনি বিকিরণের কাছে তার পড়ালেখা সম্পর্কে জানতে চান। এসময় তিনি এমবিবিএস পাশ ও কাস্টমসের মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। ভারতের কলকাতার একটি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করার কথা বললেও প্রকৃত সনদ দেখাতে পারেননি। তবে বাংলাদেশ থেকে এইচএসসি পাশের সনদ দেখিয়েছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে বিকিরণ দাবি করেন তার বিএমডিসি নিবন্ধন আছে। নম্বর ৯১১১৩। তবে আমাদের সঙ্গে থাকা সিভিল সার্জন অফিসের চিকিৎসক ওয়াজেদ চৌধুরী অভি ওয়েবসাইটে খুঁজে এই নম্বরে বিকিরণের নাম পাননি। কাস্টমস হাউসে যোগাযোগ করেও সেখানে কর্মরত থাকার তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।’
তাহমিলুর জানান, আয়শা মেডিকেলের মালিক ফরিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে বিকিরণের ডাক্তার না হয়েও চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তারা দু’জন যোগসাজশ করেই ফার্মেসির সঙ্গে চেম্বার খুলে রোগী দেখার ব্যবসা শুরু করে বলে জানায়।
এসময় ফার্মেসিতে তল্লাশি চালিয়ে চার বস্তা অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন তাহমিলুর রহমান।
সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন