Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চুয়াডাঙ্গায় বড়বাজারের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে মাথাভাঙ্গা নদী


১৬ জুন ২০১৯ ১৬:০৬ | আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ১৬:১১

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার বড়বাজারে মাংস পট্টির পশু ও মুরগির রক্ত-বর্জ্যে মাথাভাঙ্গা নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। পাশাপাশি উৎকট দুর্গন্ধে বিক্রেতা, ক্রেতাসহ নদীর দু’পাড়ের বাসিন্দাদের মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, স্থানীয় পৌরসভা ও সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না। বাসিন্দাদের শ্বাসকষ্ট, শরীরে ইনফেকশন, পেটের পীড়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। দূষণ রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ব্যাপক স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

বাজারটিতে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকার কারণে একটি মাত্র ড্রেন দিয়ে শহর ও বাজারের ময়লা পানি, রক্ত-বর্জ্য গিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীতে পড়ে পানি দূষিত হচ্ছে। শহরতলীর দৌলতদিয়ার নদীর পাড়ের বাসিন্দা গৃহিণী নূর জাহান বলেন, ‘বাজারে জবাই করা পশুর রক্ত-বর্জ্য নদীর পানি দূষিত করছে। নোংরা পানিতে গোসলের কারণে গায়ে চুলকানি হচ্ছে। বাতাসে এত দুর্গন্ধ যে বাড়িতে বসবাস করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’

গরুর মাংস বিক্রেতা মাসুদ রানা বলেন, ‘কসাইখানায় পর্যাপ্ত পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। বাজারে এত দুর্গন্ধ যে ক্রেতার সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে।’

মুরগির মাংস বিক্রেতা বাবু শেখ বলেন, ‘মুরগি জবাইয়ের পর পালক, নাড়িভুঁড়ি রাখার একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে দিলে দুর্গন্ধের মাত্রা অনেক কমে আসবে।’

মাংস শ্রমিক লুৎফর রহমান বলেন, ‘বাজারে একটি মাত্র টিনশেডকে পশু জবাই এর স্থান হিসেবে ব্যবহার করছি। তাছাড়া বাজারের পায়খানার স্লাব ভেঙে যাওয়ায় সেখান দিয়ে মল-মূত্র বের হয়ে পরিবেশকে আরও দূষিত করছে।’

নদী পাড়ের বাসিন্দা শুকুর আলী জানান, এই নদীর পানি এক সময় স্বচ্ছ ছিল। এখন বাজারের বর্জ্যের কারণে পানি নোংরা হয়ে গেছে। নদীর পানিতে এখন গোসল করা যাচ্ছে না।

নদী পাড়ের আরেক বাসিন্দা মজিবুল জানান, দুর্গন্ধের কারণে এখানকার মসজিদে মুসল্লি ও তাবলীগ জামাতের লোকজন আসতে চায় না।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুল আলম বলেন, ‘বাজারের বর্জ্য অপসারণের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় রক্ত পচে যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে তাতে জনস্বাস্থ্যে বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এখান থেকে বর্জ্য অপসারণ না করতে পারলে এ এলাকায় ব্যাপক স্বাস্থ্যহানি ঘটবে।’

বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নার্গিস জাহান বলেন, বাজারে নির্দিষ্ট নিয়মেই পশু জবাই করা হয়। বাজারে সার্বক্ষণিক কসাইখানা পরিদর্শক তার দায়িত্ব পালন করে। পশু জবাইয়ের পর মাংসে সিল দেয়ার জন্যও একজন রয়েছে। পৌরসভার শ্রমিক দিয়ে নিয়মিত বাজারের বর্জ্য অপসারণও করা হয়। কিন্তু হরিজন সম্প্রদায়ের পোষা শূকর ময়লার স্তূপ নাড়াচাড়া করে পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে বাজারে কিভাবে আরও স্যানিটেশন ব্যবস্থা বাড়ানো যায়, আমরা সে চেষ্টা করছি।’

তবে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর কথায় দ্বিমত করে ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল থেকে পৌরসভার কোন কর্মচারীই বাজারে উপস্থিত থাকে না। কসাইখানা পরিদর্শক রহিদুল ইসলাম তার দায়িত্ব পালন করে না। কসাইরা পশু জবাই করা মাংসে পৌরসভার সিল মেরে তা বিক্রি করে। বর্জ্য অপসারণকারীদের মাঝে মধ্যে দেখা গেলেও সে তার দায়িত্ব পালন না করেই চলে যায়।’

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে বাজারে একটি আধুনিক মানের কসাইখানার প্রয়োজন। এজন্য ইতোমধ্যেই ইউজিপ-৩ এর দ্বিতীয় ফেজে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাব পাশ হয়ে আসলে আধুনিকমানের একটি কসাইখানা নির্মাণ করে সমস্যার সমাধান করা হবে।’

সারাবাংলা/ওএম/এনএইচ

চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের বর্জ্য মাথাভাঙ্গা নদী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর