Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনাবৃষ্টি আর উন্নয়ন কাজের প্রভাব: হালদায় কমেছে মাছের ডিম


২৬ মে ২০১৯ ১৬:৫৮ | আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ১৭:০২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মা মাছ শিকার বন্ধ ও ডিম ছাড়ার পরিবেশ অনুকূল রাখতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ উদ্যোগের পরও চট্টগ্রামের হালদা নদীতে এবার মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিমাণ কমেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ডিমের পরিমাণ নেমে এসেছে তিন ভাগের একভাগে। তবে ডিমের মান ভালো হওয়ায় খুশি সংগ্রহকারীরা। আর গবেষকরা বলছেন, গ্রীষ্ম মৌসুম প্রায় পার করে বৃষ্টি হওয়ায় এবং বছরজুড়ে সরকারি একটি সংস্থার নদীতে উন্নয়ন কাজের জন্য মা মাছ ডিম ছাড়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ পায়নি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৫ মে) রাত সাড়ে ৮টার পর থেকে হালদা নদীর চারটি পয়েন্টে মা মাছ ধীরে ধীরে ডিম ছাড়তে শুরু করে। রাত ১২টার দিকে পূর্ণমাত্রায় ডিম ছাড়ে কার্প প্রজাতির রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ জাতীয় মা মাছ।

হালদা নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে জানান, এবার সাত হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছে। গত বছর ডিম সংগ্রহ হয়েছিল ২২ হাজার ৬৮০ কেজি।

আরও পড়ুন- হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ

গত বছরের তুলনায় এবার ডিমের পরিমাণ তিন ভাগের একভাগে নেমে আসার কারণ জানতে চাইলে এই গবেষক বলেন, ‘অন্যান্য বছর চৈত্র মাসে বৃষ্টি শুরু হয়। এবার মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি হয়েছে বৈশাখ পার করে জ্যৈষ্ঠমাস বিদায় নেওয়ার সময়। বৃষ্টি দেরিতে হওয়ায় মা মাছগুলো নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ পায়নি। এছাড়া হালদা নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের কাজ চলছে। সারাবছর ড্রেজার, বার্জ, ট্রলার নদীতে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করেছে। অনেক মাছ মারাও গেছে। এর একটা প্রভাবও পড়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড হালদা নদীসংলগ্ন তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি নদীর পাড় রক্ষা বাঁধ তৈরির দু’টি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছে বলে জানা গেছে।

তবে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ নিয়ে ভিন্নমত আছে স্থানীয় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিনের। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের হিসাবে, তিনশ নৌকায় করে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি নৌকায় কমপক্ষে তিন বালতি করে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। একেকটি বালতিতে যদি ১০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়, তাহলে ৯০০ বালতিতে কমপক্ষে ৯ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছে। এটা আমাদের বক্তব্য নয়। ডিম সংগ্রহকারীরাই এটা বলছেন।’

বিজ্ঞাপন

হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার জন্য সহনীয় পরিবেশ তৈরি করতে গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে মাঠে নামে উপজেলা প্রশাসন। গত আট মাসে মা মাছ ধরার জাল জব্দ করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার মিটার। এ সময়ে ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে পাঁচটি, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ৯টি। দু’জনকে কারাদণ্ড ও দু’জনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এমন জোরালো অভিযান গত ১৮ বছরে হয়নি বলে জানিয়েছেন ইউএনও রুহুল আমিন।

ইউএনও সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার ডিমের কোয়ালিটি খুব ভালো। ডিম খুব হৃষ্টপুষ্ট। আগে তো ডিম নষ্ট হতো বেশি। কিন্তু এবার কোয়ালিটি ভালো থাকায় সংগ্রহকারীরা খুব খুশি। আমি বেশ কয়েকজন সংগ্রহকারীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রত্যেকেই কমপক্ষে তিন-চার বালতি করে অর্থাৎ ৩০ কেজি বা তারও বেশি ডিম সংগ্রহ করেছেন। ডিম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এমন কেউ নেই।’

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের হালদা নদী। রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার ‍এলাকাজুড়ে এই নদী বিস্তীর্ণ। প্রতি বছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। আর তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। সাধারণত মধ্য এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ।

শনিবার রাতে ডিম ছাড়ার পর এখন হালদা নদীর পাড়ে হ্যাচারিতে ডিম ফোটানোর কাজ চলছে। ডিম থেকে রেণু সংগ্রহ করে সেগুলো বড় হয়ে পোনা হবে। সেই পোনা বিক্রি হয়ে ছড়িয়ে পড়বে দেশের পুকুর-জলাশয়ে।

ইউএনও রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি তিনটি হ্যাচারি আমরা আগেই প্রস্তুত করেছিলাম। সেখানে ১১৩টি কুয়া আছে। এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে মাটির তৈরি ১৪১টি কুয়া আছে। সবগুলো কুয়ায় এখন ডিম ফোটানোর কাজ চলছে।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

ডিম মা মাছ মাছের ডিম হালদা

বিজ্ঞাপন

রিশাদ-জাহানদাদে কুপোকাত সিলেট
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর