Wednesday 22 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওয়াসার পানিতে ময়লা-দুর্গন্ধ, মাদরাসার পাম্পই ভরসা


১৯ মে ২০১৯ ১১:২৫ | আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ১১:৩৪

ঢাকা: মাস শেষে ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সুয়ারেজ অথরিটি (ওয়াসা) তাদের সরবরাহ করা পানির বিল নিলেও তার বিপরীতে সেবা পাচ্ছেন না পশ্চিম রামপুরার উলন এলাকার বাসিন্দারা। গোসল কিংবা ধোয়া-মোছার কাজে ওয়াসার পানি ব্যবহার করা গেলেও ময়লা আর দুর্গন্ধের কারণে তা রান্না কিংবা খাওয়ার উপযুক্ত নয়। তাই উলন এলাকার বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা স্থানীয় একটি মাদরাসার পাম্প। ওই পাম্প থেকেই টাকার বিনিময়ে কলসি, জার ও বিভিন্ন বোতলে ভরে পানি নিয়ে বাসিন্দারা তাদের পানির প্রয়োজন মেটান।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা বলছেন, সারাবছরই তাদের এলাকায় ওয়াসার পানি নিয়ে সমস্যা চলছে। তবে গত এক মাসে সে সমস্যা প্রকট হয়েছে। আগে ময়লা কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত হলেও লাইনে পানি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সে পানিও মিলছে না কোনো কোনো এলাকায়। খাওয়াসহ দৈনন্দিন গৃহস্থলী কাজে ব্যবহারের জন্য এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের স্থানীয় মসজিদ ও মাদরাসা থেকে টাকার বিনিময়ে পানি আনছেন বাসিন্দারা। বিশুদ্ধ পানি না পাওয়ায় রীতিমতো নাকাল হচ্ছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠিকমতো পানি না দিলেও মাস শেষে বিলটা বকেয়া রাখে না ওয়াসা। বকেয়া থাকলে ভবিষ্যতে লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে— এমন আতঙ্কে বাড়িওয়ালারাও পানি না পেলেও বিল পরিশোধ করছেন নিয়মিত। সেই সঙ্গে অপেক্ষায় থাকেন, আজ না হলেও কাল হয়তো পানি আসবে। কিন্তু তাদের সেই অপেক্ষা আর শেষ হয় না।

স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওয়াসাকে অভিযোগ দিতে দিতে এখন আর অভিযোগ দিতেও ইচ্ছা করে না। বাসিন্দারা বিরক্ত। চার-পাঁচ দিন আগে ইফতারের আগ মুহূর্তে নিরুপায় হয়ে আমরা রামপুরার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলাম। এতে রোজাদারদের জন্য অনেক দুর্ভোগ হয়েছে, আমরা জানি। যানজটও ছিল। তাই হয়তো পুলিশ কর্মকর্তারা ‘যেভাবেই হোক পানির ব্যবস্থা করব’ বলে বিক্ষোভ বন্ধ করতে বলেছেন। কিন্তু লাভ হলো কী? এখনো পানি সংকটের সমাধান হয়নি।’

মনিরুল আরও বলেন, পাশের একটি মাদরাসার অজুখানা থেকে জনপ্রতি ৫ টাকা করে পানি কিনে আনতে হয়। এখন ওয়াসা পানি না দিয়েও মাস শেষে বিল নিচ্ছে, আবার মাদরাসা থেকেও পানি আনতে প্রতিদিন ৫ /১০ টাকা করে খরচ হচ্ছে। ‘এভাবে কতদিন ধরে আমরা ডাবল টাকা খরচ করব?,’— প্রশ্ন রামপুরার এই বাসিন্দার।

সরেজমিনে রামপুরার উলন এলাকার মক্কী মসজিদ গলি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ গলিতে রমজান শুরুর ২০/২৫ দিন আগ থেকে ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে বাসিন্দারা নিরুপায় হয়ে পাশের মসজিদ ও মাদরাসার অজুখানা থেকে পানি এনে প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন।

এলাকার পশ্চিম রামপুরার ৪১৯ নাম্বার বাসার বাসিন্দা মনির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এভাবে আর কতদিন চলবে? এর আগেও বহুবার পানির সমস্যা ছিল। কিন্তু এত দীর্ঘসময় ধরে হয়নি। ভাড়াটিয়ারা তো বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা বাড়ির মালিক, আমাদের তো যাওয়ার উপায় নাই।’

৪৪২ নাম্বার বাসার কেয়ারটেকার আব্দুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় একমাস ধরে পানি আসে না। গতকাল থেকে পানি আসছে। কিন্তু সে পানি মুখে দেওয়ার মতো না।’

বাসিন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় জামিয়া কারীমিয়া আরাবিয়া রামপুরা মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ তলা ওই ভবনের ওপরের চার তলায় মাদরাসা এবং নিচ তলায় মসজিদ। মসজিদ ও মাদরাসার অজুখানা থেকেই এলাকার বাসিন্দারা কলসি ও জার কিংবা বোতল ভরে বাসায় পানি নিচ্ছেন। এলাকার পানির সমস্যায় কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী নারী-পুরুষ সবাই কলসি ভরে পানি নিচ্ছেন। পানি নিতে আসা বাসিন্দারা এ সময় জনপ্রতি পাঁচ টাকা দিয়ে যাচ্ছেন মাদরাসার দায়িত্বরতদের কাছে।

ওই মাদরাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. শাহ আলম সারাবাংলাকে বলেন, মাদরাসার নিজস্ব পাম্প থেকে মোটর দিয়ে পানি তোলা হয়। বাসিন্দাদের জন্য প্রচুর পানি তুলতে হয়। এতে মোটর চালাতে গিয়ে প্রতিমাসে অনেক টাকা বিল আসে। বাসিন্দারা পানি নেওয়ার সময় ৫ টাকা করে যে টাকা দেন, সেই টাকা দিয়েই বিল পরিশোধ করা হয়। অবশিষ্ট টাকা মাদরাসা ও মসজিদের উন্নয়ন তহবিলে জমা হয়।

এদিকে বাসিন্দাদের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়েও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত আলী খানকে পাওয়া যায়নি। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ওয়াসার মোডস জোন-৬-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়ার খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাইপলাইনগুলো সংস্কার কাজ করায় এ সমস্যা হচ্ছে। তবে সমস্যা সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। খুব শিগগিরই সমাধান হবে।’

সারাবাংলা/এসএইচ/একে

উলন ওয়াসা জামিয়া কারীমিয়া আরাবিয়া রামপুরা মাদরাসা পানি সংকট রামপুরা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর