ইন্টারনেট কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে নতুন আইনের আহ্বান জুকারবার্গের
৩১ মার্চ ২০১৯ ১৭:৪৪
ইন্টারনেট কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এই আহ্বান জানান তিনি। খবর বিবিসির।
জুকারবার্গ বলেন, ক্ষতিকর কনটেন্টের ওপর নজর রাখা শুধু ফেসবুকের জন্য বেশ কঠিন একটি কাজ। তিনি ফেসবুক ব্যবহারকারী দেশগুলোর সরকার ও ইন্টারনেট কনটেন্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
ফেসবুক প্রধান মোট চারটি ক্ষেত্র জুড়ে নতুন আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন: ক্ষতিকর কনটেন্ট, নির্বাচনি অখণ্ডতা, গোপনীয়তা ও তথ্য বহনীয়তা।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ৫০ জনের প্রাণহানির ঘটনার দুই সপ্তাহ পর এই আহ্বান জানিয়েছেন জুকারবার্গ। ওই হামলায় একটি মসজিদে হামলা চালানোর ঘটনা ফেসবুকে সরাসরি প্রচার করেছিল হামলাকারী। ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছে ফেসবুক।
জুকারবার্গ তার সম্পাদকীয়তে লিখেন, আইনপ্রণেতারা প্রায়ই আমায় বলেন যে, বাক স্বাধীনতার ওপর আমাদের অনেক ক্ষমতা। আর খোলাখুলিভাবে বললে, আমি তাদের সঙ্গে একমত।
ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ফেসবুক একটি স্বাধীন কাঠামো গঠন করছিল, যেন মানুষ সহজে আমাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপিল করতে পারে- কী পোস্ট করা হচ্ছে, কী সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে নতুন কয়েকটি বিধানের প্রস্তাব রেখেছেন জুকারবার্গ। এই বিধানগুলো প্রযুক্তি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার আহ্বান জানান তিনি। এই বিধানগুলো সব ওয়েবসাইটের ওপরই আরোপের আহ্বান জানান তিনি।
জুকারবার্গের প্রস্তাবিত বিধানগুলো হচ্ছে:
- ক্ষতিকর কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়া রুখতে তৃতীয় কোনো পক্ষের জারি করা বিধান যা সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে মেনে চলতে হবে।
- সকল প্রযুক্তি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানকে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর আর্থিক প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলিয়ে একটি করে স্বচ্ছতা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।
- রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সনাক্ত করতে সকল ওয়েবসাইটের জন্য একই মানদণ্ড প্রণয়ন করে বিশ্ব জুড়ে নির্বাচনি অখণ্ডতা রক্ষার্থে আরও কঠোর আইন জারি করা।
- এমন আইন প্রণয়ন করা যা কেবল প্রার্থী ও নির্বাচনের ক্ষেত্রেই নয়, পাশাপাশি ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক ইস্যুতেও’ প্রয়োগ হতে হবে। এছাড়া আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার সময়ের বাইরেও কার্যকর থাকবে এমন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
- রাজনৈতিক প্রচারাভিযানে অনলাইনে ভোটারদের টার্গেট করতে যেভাবে তথ্য ব্যবহৃত হয় তা নিয়ন্ত্রণে নতুন বিস্তৃত মানদণ্ড প্রয়োগ করা।
- ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডেটা প্রটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর) এর মতো আরও বেশি দেশে এমন গোপনীয়তা আইন কার্যকর করা। উল্লেখ্য, জিডিপিআর গত বছর থেকে কার্যকর হয়েছে।
- একটি সেবা থেকে অন্য সেবায় যখন কোনো ব্যক্তি চলে যায়, তখন ওই ব্যক্তির ডেটা সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব কার হবে, সে ব্যাপারে আইনে স্পষ্ট করতে হবে।
- একটি ‘সর্বজনীন বৈশ্বিক ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি যার মানে হচ্ছে, এই আইনগুলো বিশ্ব জুড়ে একই মানদণ্ড অনুসারে প্রয়োগ হয়েছে। দেশ ভিত্তিতে আইনের মান যেন ভিন্ন না হয়।
- জনগণের তথ্য এক সেবা থেকে অন্য সেবায় সরিয়ে নেওয়ার সময় ওই তথ্যগুলো সুরক্ষার দায়িত্ব কার ওপর থাকবে সে বিষয়ে আইনে স্পষ্ট করতে হবে।
সারাবাংলা/আরএ