Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রোহান নম্বর ২৬’


৭ মার্চ ২০১৯ ১৫:০৭

তানজিল হাসান খান রোহান (ফাইল ছবি)

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ‘২৬ নম্বর ব্যাগে আমার রোহানকে রাখা আছে। ২৬ নম্বর ব্যাগটা কই? আমার রোহান কই? আমি একটু আমার বাবারে দেখতে চাই। তারে একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই।’এভাবেই বিলাপ করছিলেন চুড়িহাট্টায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া তানজিল হাসান খান রোহানের মা রুবিনা ইয়াসমিন রুবি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গ সংলগ্ন অপেক্ষমানদের জন্য থাকা নির্ধারিত স্থানে তিনি বসেছিলেন। যাকে সামনে পাচ্ছিলেন তারই হাত ধরে বলছিলেন, ‘আমার রোহানের ২৬ নম্বরটা দেখেছেন? ওখানে রোহানকে রাখা হয়েছে। কেউ একটু আমাকে আমার ছেলেটাকে দেখান। আমি অনেকদিন ছেলেকে দেখি না, ছেলেটাও আমাকে আম্মু বলে ডাকে না।’বুধবার (৬ মার্চ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে এই মা যখন বিলাপ করছিলেন, তখন তার পাশে ছেলের ছবি বুকে কাঁদছিলেন রোহানের বাবা হাসান খানও।

বিজ্ঞাপন

মর্গ সংলগ্ন রড দিয়ে ঘেরা এই জায়গাটায় যখন কারও ময়নাতদন্ত হয়, তখণ স্বজনরা অপেক্ষা করেন। চুড়িহাট্টায় আগুন লাগার পর থেকে এই জায়গাটায় ডিএনএ টেস্টের জন্য স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছিল। বুধবারও এখানেই টেবিল পেতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্বজনদের নাম ঠিকানা নিচ্ছিলেন।

প্রসঙ্গত, চুড়িহাট্টায় দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েও শনাক্ত না হওয়ায় হিমঘরে থাকা মরদেহগুলোর মধ্যে ১১টি শনাক্ত করা হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে। তাদের মধ্য থেকে আটটি মরদেহ স্বজনদের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে বুধবার (৬ মার্চ)। প্রাক-প্রক্রিয়া শেষে ঢামেক মর্গ থেকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাশগুলো হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। পুড়ে যাওয়া লাশগুলো ব্যাগে ভরে রাখা হয়েছে। আর প্রতিটি ব্যাগের একটি করে নম্বর দেওয়া হয়েছে। রোহানের ব্যাগের নম্বর ২৬।

বিজ্ঞাপন
Rubina

রোহানের মা রুবিনা ইয়াসমিন রুবি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা যায়, শনাক্ত না হওয়া ১৯টি মরদেহের জন্য স্বজনদের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত স্বজনদের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্ত করা হয় ১১ মরদেহ। তাদের স্বজনদের ফোন করে মরদেহ বুঝে নেওয়ার জন্য আসতে বলা হয় সকালেই। দুপুর নাগাদ ঢামেক মর্গের সামনে জড়ো হন শনাক্ত হওয়া আট ব্যক্তির স্বজনরা।

পুরান ঢাকার আগামসি লেন এলাকার বাসিন্দা তানজিল হাসান খান রোহান। তার আরও চার বন্ধু লাবিব, সোহাগ, রামিজ ও আরাফাতও একই এলাকার বাসিন্দা। ঘটনার দিন (বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারি) রাতেও চার বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়েছিল রোহান।

পাঁচ বন্ধুর একজন লাবিব বলেন, আমরা দুইটা বাইকে করে বের হয়েছিলাম। সামনের বাইকে ছিল রোহান আর আরাফাত। পেছনেরটায় আমি, সোহাগ আর রামিজ। ওইখানে এক দোকানে আমরা চা খেতে নেমেছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ, আগুনের লেলিহান শিখা। মুহূর্তের মধ্যে বাইকে উঠে চলে আসি ওই জায়গা থেকে। কিছুদূর গিয়ে দেখি, সামনে বা পেছনে—কোথাও রোহান-আরাফাতদের বাইক নেই। সারারাত সবাই মিলে ওদের খুঁজেছি ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে। কিন্তু ওদের কোথাও খুঁজে পাইনি। পরে আরাফাতের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও নিখোঁজ ছিল রোহান।

রোহানকে খুঁজে পেতে ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা দেন রোহানের বাবা-মা। তাতেই খুঁজে পাওয়া যায় রোহানকে। বুধবার শনাক্ত হওয়া ১১ জনের মধ্যে রোহানের লাশও ছিল। এই ১১ জনের স্বজনদের ঢামেক মর্গে আসার জন্য অনুরোধ করা হলে রোহানের বাবা-মা, ছোট ভাইসহ স্বজনরা হাজির হন সেখানে।

স্বজনরা জানান, তিন ভাই এক বোনের মধ্যে রোহান ছিলেন বড়। ছোট বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আগামী ১০ মার্চ। ছোট থেকেই মেধাবী ছিল রোহান। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী ছিল, পড়ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ-তে। বোনের বিয়ের পরই সে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার কথা উচ্চশিক্ষার জন্য।

রোহানের ছবি নিয়ে বাবা হাসান খান

স্বজনরা যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন পাশ থেকে রোহানের মা কেদে ওঠেন। বলেন, ‘আমার ছেলেটা বলেছিল, মা, আমি একটু সেটেলড্‌ হয়েই তোমাকে নিয়ে যাবো। তোমাকে ছাড়া তো আমি বেশি দিন কোথাও থাকিনি। আমার সেই রোহান কী করে একা একা থাকবে? আমার রোহান এখন একটা ব্যাগের ভেতরে শুয়ে আছে। আজ আমার রোহানের নম্বর ২৬।

উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানসনে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন আশাপশের ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে। এঘটনায় ৬৭ জনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ

আগুন চুড়িহাট্টা রোহান

বিজ্ঞাপন

৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর