Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসছে লোনা পানিতে চাষযোগ্য ধান!


২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০৫ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৬

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতের পর এবার খোদ লোনা পানিতেও চাষযোগ্য ধানের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর।

তিনি বলেন, ‘আমাদের আগের কৃষিমন্ত্রী বলেছিলেন মরুভূতিতেও চাষযোগ্য ধানের জাত উদ্ভাবন করতে হবে। জলবায়ুর বৈচিত্র্য মোকাবিলায় তিনি লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনের আহ্বানও জানিয়েছিলেন। বর্তমানে দেশে লবণাক্ততা সহিষ্ণু বহু জাত রয়েছে। সুখের খবর হচ্ছে লবণ পানিতেও যাতে ধান চাষ করা যায়, বর্তমানে সেই রকম জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। এমন জাত উদ্ভাবনে আমাদের গবেষণা বেশ কিছু দূর এগিয়েও গেছে।’

রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘নলেজ শেয়ারিং অ্যান্ড ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ওয়ার্কশপ অন এগ্রি-বায়োটেকনোলজি রিপোর্টিং’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) কারিগরী সহায়তায় আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) ও ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ এই কর্মশালার আয়োজন করে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কৃষি গবেষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ২৮ জন কৃষি বিষয়ক প্রতিবেদক এতে অংশ নেন।

দুই দিনের এই কর্মশালার প্রথম দিনের বিভিন্ন কারিগরি সেশনে বিশ্বব্যাপী বায়োটেকনোলজির সবশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। বৈজ্ঞানিক এই প্রযুক্তির অংশ বিশেষ জেনেটিক্যালি মডিফাইড অরগানিজমে (জিএমও প্রযুক্তি) দেশের বর্তমান পরিস্থিতিও আলোচনাতে উঠে আসে। জিএমও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে গোল্ডেন রাইস, বিটি বেগুন ও বিটি তুলাসহ বিভিন্ন উদ্ভাবন সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেন দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। তবে, বিশ্বব্যাপী জিএমও প্রযুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে বহু মত রয়েছে। খোদ বিজ্ঞানীদের একটি অংশও এই প্রযুক্তির বিপক্ষে। বিটি বেগুনের বিপক্ষে দেশেও সোচ্চার একটি মহল। সমালোচকরা বলে থাকেন, বাংলাদেশে ব্যর্থ হয়েছে বিটি বেগুনের পরীক্ষামূলক চাষ। এমন পরিস্থিতিতে জিএমও প্রযুক্তির আরেক উদ্ভাবন ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ধানের জাত গোল্ডেন রাইস অবমুক্তকরণ নিয়েও আপত্তি রয়েছে অনেকের।

বিজ্ঞাপন

জিএমও প্রযুক্তি নিয়ে সাংবাদিকদের উৎকণ্ঠা প্রসঙ্গে ব্রি’র মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা এখনও আপনাদের (সাংবাদিকদের) পূর্ণাঙ্গ উত্তর দিতে পারিনি। গুছিয়ে হয়তো বলতে পারছি না। কিন্তু সব তথ্যই আমাদের কাছে আছে। বায়োটেকনোলজি নিয়ে নলেজ শেয়ারিংয়ের এই খোলামেলা আলোচনা অত্যন্ত ইতিবাচক।’ তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের সেতু বন্ধনের জন্য এই ধরনের কর্মশালা আয়োজন একটি অনন্য উদ্যোগ। প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূর করতে সাংবাদিকরাও সর্বদা তৎপর থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আশা করি এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

গোল্ডেন রাইসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ব্রি’র মহাপরিচালক আরও বলেন, গোল্ডেন রাইস ভিটামিন এ যুক্ত ধানের জাত। আমরা প্রতিবছর পাঁচ থেকে ছয় মাস পরপর শিশুদের ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়াই। কিন্তু শতভাগ শিশুকে তো ক্যাপসুল খাওয়ানো সম্ভব হয় না। অপরদিকে জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতও রয়েছে আমাদের। কিন্তু ওই জাতগুলোতে জিংকের মাত্রা এমন পর্যায়ে যে ওই চাল পলিসিং করলে আর জিংক থাকে না। তাই চালের ভেতরে যাতে জিংক প্রবেশ করানো যায় সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আর এসব কারণেই গোল্ডেন রাইসের প্রয়োজন রয়েছে।

পরে সারাবাংলার এক প্রশ্নের উত্তরে ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘বর্তমানে উদ্ভাবিত জাতগুলোতে লবণক্তা সহিষ্ণুতার সর্বোচ্চ মাত্রা ৮ ডিএস বা মিটার। অর্থাৎ এখনকার জাতগুলো সর্বোচ্চ ৮ মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। আমরা ১৬ মাত্রার লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি। এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানের পানি অনেকটা লবণই। কারণ উত্তারঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে আমাদের ধান চাষ আরও বেশি বিস্তৃত করার কথা। ভবিষ্যতে আমরা যেন সাগরের কাছাকাছি অঞ্চলেও ধান চাষ করতে পারি সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলছি।’

বিজ্ঞাপন

কর্মশালায় বিশেজ্ঞরা বলেন, একুশ শতকের কৃষি মানেই প্রযুক্তি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন করছেন। প্রসার ঘটাচ্ছে নতুন প্রযুক্তির। বিজ্ঞানের সুনিপুণ কৌশলকে কাজে লাগিয়ে ফসলের বীজ ও উদ্ভিদের অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষের প্রয়োজন মিটানোর প্রচেষ্টার বৈজ্ঞানিক নাম জীবপ্রযুক্তি। বৈজ্ঞানিক মহলে যা ‘বায়োটেকনোলজি’ হিসেবে পরিচিত। ভবিষ্যতের কৃষির উৎকর্ষতা এই জীবপ্রযুক্তিকে ঘিরেই আবর্তিত হবে।

বিশেজ্ঞরা আরও বলেন, বিজ্ঞানীদের মতে নিকট ভবিষ্যতে মানুষের চাহিদামতো নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার যোগান দিতে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে উঠবে অন্যতম উপায়। তবে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো নিয়ে সঠিক তথ্যের অভাবে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। কারণ এ সর্ম্পকে মৌলিক জ্ঞানের অভাবে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষও বিভ্রান্ত হন। অথচ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হরহামেশাই আমরা জীবপ্রযুক্তি উদ্ভাবিত খাবার গ্রহণ ও পণ্য (সওয়াবিন তেল) ব্যবহার করছি। ভবিষ্যতে জিএমও প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়েও বিভ্রান্তি দূর হবে বলে বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা।

কর্মশালায় ইরির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হোমনাথ ভান্ডারীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন ব্রির সাবেক মহাপরিচালক ও ইরির ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস, ইরি বংলাদেশ অফিসের সিনিয়র ম্যানেজার ড. সৈয়দ মো. ইব্রাহীম ও ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ এর সিইও মো. আরিফ হোসেন। কারিগরী সেশনে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এলায়েন্স ফর সায়েন্স এর প্রশিক্ষক মিস প্যাটরিশিয়া নানতেনজা ও দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমআই

ইরি ধোন ব্রি লোনা পানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর