Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মা’কে খুঁজে পাবে ৫ বছরের সানিন?


২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:৩৯ | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৫:৩৭

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গের সামনে রড দিয়ে ঘেরা একটি জায়গায় তখন শত মানুষের ভিড়। চকবাজারের চুড়িহাট্টার আগুন থেকে উদ্ধার করা যেসব মরদেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি, তাদেরই শনাক্ত করতে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছেন এরা। একজন একজন করে আসছেন, নমুনা দিয়ে উঠে অপেক্ষা করছেন সামনে। এরই মধ্যে এক শিশুর কান্না নাড়িয়ে দিয়ে যায় সবাইকে। কান্না করতে করতে সে বলছে, ‘আমাকে বাইরে নিয়ে যাও। আমি এখানে থাকব না। আমার মাথা ঘুরাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

বলতে বলতে একজনের কোলে উঠে বসে সে। তাকে আর নামানো যায় না। পাশে দাঁড়ানো আরেকজন তাকে কোলে নিতে চাইলে তার কোলেও যায় না শিশুটি।

কথা বলে জানা গেল, পাঁচ বছর বয়সী শিশুটির নাম বিবি মরিয়ম সানিন মা বিবি হালিমা আক্তার শিল্পীর মরদেহটি যেন অন্তত শনাক্ত করা যায়, তার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে তাকে। কিন্তু মর্গের সামনে পরিবেশ আর ডিএনএ নমুনা দিতে আসা স্বজনদের কান্না-আহাজারিতে বিহ্বল হয়ে পড়ে শিশুটি।

শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই স্থানে সংগ্রহ করা হচ্ছে ডিএনএ নমুনা। সেখানেই মামা শিমুলের কোলে উঠেও কাঁদছিল সানিন।

শিমুল সারাবাংলাকে বলেন, সানিনদের বাসা রহমতগঞ্জ। কয়েকদিন হলো পাতলা পায়খানা আর জ্বরে আক্রান্ত সানিন। তার জন্যই ওষুধ কিনতে চকবাজারের একটি ফার্মেসিতে গিয়েছিলেন তার বোন হালিমা আক্তার। তারপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি। কোনো খোঁজও আর পাওয়া যায়নি তার।

শিমুল বলেন, এখানে যেসব লাশ ছিল, সেগুলো সব দেখেছি। যতগুলো হাসপাতালের মর্গে লাশ পাঠানো হয়েছে, সেসব জায়গাতেও গিয়েছি। সব লাশ দেখেছি। কিন্তু বোনকে পাইনি। তাই এখানে এসেছি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে।

বিজ্ঞাপন

শিমুলের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন সানিনের বাবা জহিরুল হক। প্রথমে তার কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুসরাত ইয়াসমিন। এরপর শিশু সানিনের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়েই বাধে বিপত্তি। সানিন যেভাবে কান্নাকাটি শুরু করে, তাতে সেখানে উপস্থিত সবার চোখই ভিজে যায় অশ্রুতে।

কিন্তু আবেগকে সরিয়ে রেখে সানিনের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনাও তো সংগ্রহ করতে হবে! দায়িত্বে থাকা নুসরাত ইয়াসমিন  তখন সানিনের মামা শিমুলকে অনুরোধ করেন সাসিনকে কোলে নিয়ে বসতে। চেয়ারে বসিয়েই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হন না পুলিশ সুপার। আদর করেন। সবাইকে অনুরোধ করেন একটু চুপ থাকার জন্য, যেন সানিন ঘাবড়ে না যায়। উপস্থিত সবাইও সানিনের জন্যই চুপ হয়ে যান।

সানিনকে নুসরাত ইয়াসমিন বলেন, ভয় পেও না, তোমাকে একটুও ব্যাথা দেবো না। তার আন্তরিকতা আর স্নেহমাখা কণ্ঠে যেন আশ্বস্ত হয় সানিন। সেই সুযোগে তার মুখ থেকে লালা সংগ্রহ করেন তিনি। সেটুকুই হয়তো ভরসা— মা’কে না পেলেও হয়তো মায়ের মরদেহটি খুঁজে পাবে সানিন।

নমুনা সংগ্রহের পর বাইরে একটু খোলা জায়গায় সানিনকে নিয়ে এসে দাঁড়ান শিমুল ও জহিরুল হক। শিমুল জানান, সানিনের ছোট একটি বোনও আছে। পাঁচ মাস বয়সী বোনটির নাম ফাতেমা আক্তার সামিম। মেয়ে দু’টির বড় খালা সুরমা মজুমদারও ছিলেন সেখানে। কথা হয় তার সঙ্গেও।

সুরমা সারাবাংলাকে বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে বোনটার খুব সুখের জীবন ছিল। ওর সুখ দেখে আমাদের খুব আনন্দ হতো। কিন্তু তখনও তো বুঝতে পারি, ওর এই সুখ এত ক্ষণস্থায়ী! আমাদের আজ সারাজীবনের জন্য দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল।

সুরমা বলেন, ‘মেয়ে দুইটাকে নিয়ে ওদের বাবাটা এখন কী করবে? পাঁচ মাসের বাচ্চাটাকেই বা বুকের দুধ কে খাওয়াবে? মেয়েটা তো না খেতে পেয়েই মরে যাবে!’ সানিন আর সামিম তাদের কাছেই রয়েছে বলে জানান তিনি।

একরাশ আক্ষেপ নিয়ে সুরমা বলেন, বোনের মরদেহটা পেলে অন্তত বাচ্চা দু’টি মাকে না পেলেও মায়ের কবরের কাছে যেতে পারত। বলতে পারত, এটাই আমাদের মায়ের কবর। আমরাও আমাদের বোনকে পেতাম!

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

চকবাজারে আগুন হাজী ওয়াহেদ ম্যানসন

বিজ্ঞাপন

৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর