শেষ হলো ঢাকা চিত্রকলা সপ্তাহ
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:৪৯ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৪
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বাইরে থেকেই ভেসে আসছিল সুমধুর বাঁশির সুর। একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে দেয়াল জুড়ে শোভা পাচ্ছে রংবেরঙের সব চিত্রকর্ম। বাঁশির সুরে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছে শিল্পপ্রেমিরা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে চোখজুড়ানো সব চিত্রকর্ম। অনেকে পরিবার-পরিজন অথবা বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে এসেছেন রাজাধানীর জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রকলা প্রদর্শনী গ্যালারিতে আয়োজিত ‘ঢাকা চিত্রকলা সপ্তাহ-২০১৯’ উপভোগ করতে।
শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হওয়া ‘আর্ট হক’ আয়োজিত ‘ঢাকা চিত্রকলা সপ্তাহ-২০১৯’-এর শেষ দিন ছিল আজ শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি)। চারদিন ব্যাপী এই চিত্রকলা সপ্তাহ শুরু হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। সেখানে ১৩০ জন শিল্পীর প্রায় ১৫০টি চিত্রকর্ম, ভাষ্কর্য, ফটোগ্রাফ, ভিডিও ও ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শন করা হয়।
আর্ট হকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী রায়ান মাহবুব সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রদর্শনীর এই আয়োজনটি অত্যন্ত সফলতা পেয়েছে। গত তিনদিনে প্রায় ৩ হাজার দর্শনার্থী প্রদর্শিত চিত্রকর্মগুলো উপভোগ করেছেন। আজ প্রদর্শনীর শেষদিনেও প্রায় এক হাজার দর্শনার্থী প্রদর্শনীতে এসেছেন। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে প্রদর্শনী উপভোগ করতে আসা অধিকাংশ অতিথিই তরুণ, যেটি এই আয়োজনের সবচেয়ে বড় সফলতা। কারণ আমি মনে করি তরুণরাই ভবিষ্যৎ শিল্পের ধারক ও বাহক।’
তরুণ এই আয়োজক আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি এই আয়োজনটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে। এরই প্রেক্ষিতে শিল্পপ্রেমিদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠান। প্রদর্শনীর দ্বিতীয়দিন বৃহস্পতিবার দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য ‘ওপেন মাইক নাইট’-এর আয়োজন করা হয়েছিলো, যেখানে আগত অতিথিরা কবিতা, গান ও কৌতুকে মেতে উঠে। তৃতীয় দিনে আগত অতিথিদের আঁকা ছবি প্রদর্শনের ভিন্ন এক আয়োজন ‘ট্রিপল এ’ প্রোগ্রাম ছিল প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় চমক। এছাড়া প্রদর্শনীর শেষদিনে আজকের আয়োজনে রাখা হয়েছে ‘ফর্মাল ক্লোজিং সেরিমনি’ এবং ‘মিট দ্য আর্টিস্ট’, যেখানে সকল শিল্পীরা তাদের প্রদর্শিত ছবি নিয়ে কথা বলবেন।’
প্রদর্শনী গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন চিত্রশিল্পী, যাদের রং-তুলির আঁচড়ে আঁকা ছবি শোভিত করেছে গ্যালারির দেয়াল।
তরুণ চিত্রশিল্পী মাঈশা জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই প্রদর্শনীতে আমার চারটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। আমি খুবই খুশি শিল্পকলা একাডেমির মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে আমার আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে আগত অতিথিদের সাথে সরাসরি আমার চিত্রকর্ম নিয়ে কথা বলা ও স্বনামধন্য শিল্পীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ একটি নতুন অভিজ্ঞতা যোগ করেছে।’
চিত্রশিল্পী ফাইরুয নাওয়ার ঐশী বলেন, ‘আমার জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে শিল্পপ্রেমী আগত অতিথিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ। এখানে আমার দুটি চিত্রকলা প্রদর্শিত হচ্ছে এবং আমি আমার চিত্রকর্মগুলো নিয়ে প্রশংসা এবং পরামর্শ পাচ্ছি। এটি আর্ট হক আয়োজিত খুবই ভালো একটু উদ্যোগ। তবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো শিল্পকলা নিয়ে খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ করে না, এটা খুবই হতাশার বিষয়।’
শিল্পপ্রেমী আগত দর্শনার্থীরাও এমন আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুহায়ের হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আয়োজনটি সত্যিকার অর্থেই খুব অসাধারণ লেগেছে। শিল্পের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা থেকেই এখানে এসেছি, খুবই ভালো লাগছে।’
গ্রাফিক্স ডিজাইনার ফারহান শাকির বলেন, ‘আর্ট হককে ধন্যবাদ তরুণ শিল্পীদের জন্য চমৎকার একটি প্লাটফর্ম করে দেওয়ার জন্য। সেইসঙ্গে দর্শনার্থী হিসেবে একটি চমৎকার আয়োজন উপভোগ করলাম। তবে আয়োজনটি সপ্তাহব্যাপী হলে আরও ভালো হতো।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করা আর্ট হক এবারই প্রথম চিত্রকলা প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে ও ভিন্নভিন্ন গ্যালারিতে প্রদর্শনের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী।
সারাবাংলা/ওএম/এমআই