Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জানুয়ারিতে এসেছে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স


৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:৫৮ | আপডেট: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:৪৩

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: নতুন বছরের শুরুতে বাড়তে শুরু করেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ১৫৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ২১ কোটি ৩ লাখ ডলার।

চলতি বছরের শুধু জানুয়ারি মাসেই এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। এরআগে প্রবাসীরা এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল ২০১৪ সালের জুলাই মাসে। ওই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৪৯ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার। ফলে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা মাসের হিসেবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ গত জুলাই-১৮ থেকে জানুয়ারি-১৯ পর্যন্ত সময়ে প্রবাসীরা দেশে ৯০৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৩৪ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। ফলে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের মধ্যে গত জুলাই মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠায় ১৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার, আগষ্টে ১৪১ কোটি ১০ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ১১২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১১৮ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ১২৩ কোটি ডলার আর সর্বশেষ গত মাসে আসে ১৫৯ কোটি ডলার।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ মূলত দুইটি। একটি হলো, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। এতে করে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে ডলার পাঠালে আগের তুলনায় বেশি টাকা পাচ্ছেন। এই কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপ বিশেষ করে অবৈধ হুন্ডি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

মির্জা আজিজ আরো বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের ইমপোর্ট গ্রোথ অনেক হাই এবং এক্সপোর্ট গ্রোথ অপেক্ষাকৃত কম। টাকার অবমূল্যায়ন হলে মূল্যস্ফীতির ওপর একটা চাপ তৈরি করে। কারণ, আমরা অনেক খাদ্যপণ্য ও কাঁচামাল আমদানি করছি। ডলারের রেট বেড়ে গেলে এসব জিনিমের দাম বেড়ে যাবে। অন্যদিকে, ডলারের দাম কমাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার ছাড়তে পারে। কিন্তু এটি করা হলে আবার রিজার্ভ কমে যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্জিকা বছর হিসাবে, ২০১৮ সালে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। এটি আগের বছরের চেয়ে ২০০ কোটি ৭৮ লাখ ডলার বেশি। ২০১৭ সালে দেশে রেমিট্যান্সে আসে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৫ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে অর্থবছর হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আছে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার,. ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৯০৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। ফলে, চলতি অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স প্রবাহ বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে আরো বাড়বে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরে অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং বা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। এতে করে গত দুই অর্থবছর প্রবাসী আয়ে ভাটা পড়ে। এ কারণে রেমিট্যান্স বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে রেমিট্যান্স বিতরণের সঙ্গে যুক্ত থাকায় মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের দুই হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়। এছাড়াও হুন্ডি প্রতিরোধে কড়াকড়ি ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া নানা উদ্যেগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে রেমিট্যান্সে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি বাংলাদেশী অবস্থান করছেন। এইসব প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে প্রথমে রয়েছে সৌদি আরব। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, যুক্তরাজ্য, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর