Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চাপের কাছে নত হবেন না, সরকারি কর্মকর্তাদের দুদক চেয়ারম্যান


২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৯:৫১

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ‘ভয় না পাওয়ার’ জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে অব্যাহত অভিযানের মধ্যে রোববার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রামে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দুদক চেয়ারম্যান। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা দুদককে ভয় পাবেন না। ভয়ের কিছু নেই। দুদক কোন ভয়ের বস্তু নয়। দুদকের একটি আইন আছে। সেই আইনে আপনি চাইলেও পালাতে পারবেন না। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত মামলা হবে না, যতক্ষণ আপনার বিরুদ্ধে কাগজপত্রে প্রমাণ পাওয়া না যায়। সেই কাগজপত্র যদি চাপওয়ালার কাগজপত্র হয়, তাহলে আপনি বেঁচে যাবেন। আবারও বলছি, চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। কারণ চাপওয়ালা আপনাকে বাঁচাতে পারবেন না।’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজকাল কাউকে ধরলে বলতে শুনি, চাপের মুখে পড়ে করেছি। কিসের চাপ! মুখের কথায় কোনো কাজ করবেন না। যিনি চাপ দেবেন, তাকে বলবেন দয়া করে লিখিত দেন। লিখিত দিলে এরপর আপনার আর কোনো ভয় নেই। আপনি যত টাকার ক্ষতিই করুন, দুদক আপনার বিরুদ্ধে কোন মামলা করবে না। আর আপনি চাপ সহ্য করবেন কেন? আপনি তো কারও দয়ায় চাকরিতে আসেন নি। কিন্তু আপনি চাপে পড়ে অন্যায় করলে ওই চাপওয়ালা আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। কারণ দুদকের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা চাপওয়ালারও নেই।’

সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনার ভুল আমরা অ্যালাউ করব। কিন্তু আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, সেই ভুল আপনি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেননি। সেই ভুল আপনি সরল বিশ্বাসে করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, দুর্নীতি ঘটার আগেই প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা মামলা-ধরপাকড় চাই না। একটি মামলা হলে কি দুদক আনন্দ পায়? একজনকে ধরে নিয়ে গেলে কি দুদক আনন্দ পায় ? সেই লোকটি তো আমার আত্মীয়ও হতে পারে।

দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল পর্যায়ে শিক্ষায় অনিয়ম বন্ধের টার্গেট নেওয়া হয়েছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের আওতার বাইরে। কারণ সেখানে যারা পড়ে তারা অনেক বড় হয়ে গেছে। তারা নিজেদের ভালো বুঝতে পারে। কিন্তু যারা স্কুলে পড়ে, তাদের সঠিক শিক্ষাটা দিতে হবে। কয়েকটি স্কুলে গিয়ে আমি হতাশাজনক চিত্র দেখেছি। ক্লাসে টিচার যেতে হবে। অবশ্যই যেতে হবে। আমার বাচ্চা এ-প্লাস পেল কি-না সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। যদি ক্লাসে টিচার ভালোভাবে পড়ায় তাহলে এমনিতেই এ-প্লাস পাবে। আমরা ক্লাস টেন পর্যন্ত টার্গেট করেছি। ১০ বছর যদি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে পারি, ১০ বছর পর সুশিক্ষিত নাগরিক পাব।’

দুদক চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি তো মনে হয় বিভিন্ন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে আছেন। স্কুলে যান। ক্লাসে ঢোকার দরকার নেই। হেডমাস্টারের রুমে যান। টিচাররা কী করছে, সেটা দেখুন। ম্যানেজিং কমিটিগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না, এটা আমি সরকারকে জানিয়েছি।’

স্কুল-স্কুলে ‘সততা স্টোর’ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তো টাকা দিচ্ছি। প্রত্যেক স্কুলকে ৩০ হাজার টাকা করে দিচ্ছি। সততা স্টোর করেন। এতে ছেলেমেয়েরা ছোটবেলা থেকেই সততা শিখবে।’

চিকিৎসককে কর্মস্থলে থাকার অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের অনেক কষ্ট আছে জানি। কিন্তু আপনাদেরও মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশটা গরীব দেশ। আমরা একদিনে আমেরিকা হয়ে যাব না। কষ্ট হলেও কর্মস্থলে থাকেন। জনগণকে সেবা দেন।’

বিজ্ঞাপন

ওভার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘হুণ্ডির মাধ্যমে খুব বেশি টাকা বিদেশে যাচ্ছে না। টাকা যাচ্ছে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। কাস্টমসকে বলব, ফেব্রুয়ারি মাসে কত ওভার ইনভয়েসিং হল, সেটার একটা তালিকা মার্চে দুদকের কাছে পাঠিয়ে দেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, দিনের সবসময় ২০০ লোক নাকি কাস্টমের বারান্দায় ঘোরাফেরা করে। এরা সেখানে চাকরি করে না। তদবিরের জন্য যায়। এসব আলতু-ফালতু লোককে জায়গা দেবেন না। তদবিরবাজরাই সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ বলেও মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান।

সভায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার ফারুক আহমেদ, সিএমপি কমিশনার মো.মাহবুবর রহমান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো.আব্দুল মান্নান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো.ইলিয়াছ হোসেন, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনাসহ বিভিন্ন সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন

ইকবাল মাহমুদ দুদক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর