আমি চট্টগ্রামবাসীকে ফকিরনীর পুত বলিনি: বাদল
২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:৩৫
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘আগে ছিলাম ফকিরনীর পুত, এখন হয়েছি রাজার পুত’- সমালোচনার মুখে এমন বক্তব্যের ব্যাখা দিয়েছেন জাসদ নেতা ও বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের নৌকার প্রার্থী মঈনউদ্দিন খান বাদল।
বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সংসদ সদস্য বাদল এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন।
জবাবে বাদল বলেন, ‘আমি আপনাদের একটা কথা বলি, আমি চট্টগ্রামবাসীকে ফকিরনীর পুত বলিনি। এটা যদি কারও মাথায় আসে, এটা অত্যন্ত অন্যায়। আমরা, মানে বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত ছিলাম অর্থাৎ লেস ডেভেলপ কান্ট্রি। সারাবিশ্বে একটা সময় আমাদের খাদ্য ভিক্ষা করে চলতে হত। সেই জায়গা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মিড ইনকাম ইকোনমির দেশে নিয়ে গেছেন। আমি শুধু তুলনা বোঝানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এটা বলেছিলাম।’
এসময় তিনি আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘আমি আবারও বলব, আমরা একসময় ফকিরনীর পুত ছিলাম। এখন আমরা রাজার পুত হয়েছি। এই বক্তব্য বিকৃত করা উচিৎ নয়। কেউ যদি মনে করেন, উনি তখন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পুত ছিলেন, তিনি থাকতে পারেন। কিন্তু আমি ফকিরনীর পুত ছিলাম।’
গত ১৯ ডিসেম্বর নগরীর লালদিঘী মাঠে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘আমরা চাটগাঁইয়ারা বলি, ১০ বছর আগে আমরা ছিলাম ফকিরনীর পুত। ১০ বছর পরে আমরা হয়েছি রাজার পুত। এই যে পরিবর্তন, এই পরিবর্তনটা আপনার নেতৃত্বে এসেছে।’
বাদলের এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান এই বক্তব্যকে বাদলের বিরুদ্ধে প্রচারণায় ব্যবহার শুরু করেন।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত এই সভায় কর্ণফুলী নদীর উপর কালুরঘাটে আরেকটি সেতু নির্মাণ নিয়েও কথা বলেন বাদল।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পযন্ত রেললাইন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। আমি বলতে চাই, কালুরঘাট সেতু যদি না হয়, তাহলে কী ট্রেন গোমদণ্ডী স্টেশনে আসার পর লাফ দিয়ে বটতলী (চট্টগ্রাম রেলস্টেশন) আসবে ? প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশই হলো এই সেতু। এই সেতুটা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিস্তারিত ডিজাইন চেয়েছেন। কোরিয়ানরা ডিজাইন করছে।
‘আমি নির্বাচিত হলে, আমাদের সরকার ক্ষমতায় এলে, সেতুর কাজ এক বছরের মধ্যে শুরু করতে না পারলে পদত্যাগ করব।’ বলেন বাদল
সভায় চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনও বলেন, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়েছে। আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসলে অবশ্যই, অবশ্যই সেতু হবে।
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর বিদ্যমান রেলসেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দুইপাড়ের জনসাধারণকে। বিদ্যমান সেতুটি ভেঙে একটি সড়কসহ রেলসেতু নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক আন্দোলন চালিয়ে আসছে বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ।
সম্প্রতি একেনেকে ‘কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু’ প্রকল্প উঠলেও সেটি অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই অবস্থায় ভোটের মাঠে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ের জনসাধারণের কাছে প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে ‘কালুরঘাট সেতু’।
বোয়ালখালী উপজেলার সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর সংযোগ স্থাপনকারী সেতুটি বাস্তবায়ন মূল অঙ্গীকার হিসেবে দেখাচ্ছেন চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের প্রার্থীরা।
গত দুইবারের সংসদ সদস্য জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকারের শীর্ষে রেখেছেন কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান এবং সিপিবি’র কাস্তে মার্কার প্রার্থী মো.সেহাবউদ্দিনসহ অন্য প্রার্থীরাও তাদের অঙ্গীকারের শীর্ষে রেখেছেন কালুরঘাট সেতুকে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং ও হালিশহর) আসনের ডা.আফসারুল আমিন, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও নগরের একাংশ) আসনের দিদারুল আলম এবং চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও নগরের একাংশ) আসনের লাঙ্গল প্রতীকের আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছিলেন।
সভায় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন বাচ্চু, প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, আইন সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, জাসদ নেতা ইন্দুনন্দন দত্তসহ জ্যেষ্ঠ নেতারাও ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/একে