Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এগিয়ে চলেছে বরগুনার ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ


১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:৫৬ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:৫৯

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বরগুনা: দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় নির্মিত হচ্ছে ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট নিশানবাড়িয়া গ্রামে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে।চীনের সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে আইসোটেক প্রুপ।

আইসোটেক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানির সঙ্গে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একটি চুক্তিস্বাক্ষর হয়। বর্তমানে এ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে।

চীনের পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক এ প্রকল্প থেকে ২০২২ সাল থেকে খুব অল্পমূল্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বিদ্যুৎ। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২৫ বছর এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশে দক্ষতার সঙ্গে কয়লা দিয়ে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নিশানবাড়ীয়া শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতের পাশে পায়রা নদীর মোহনা থেকে থেকে বালু ড্রেজিং করে প্রকল্পের জমি ভরাটের কাজ চলছে। এদিকে, প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চললেও কিছু মানুষ এই প্রকল্পটিকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। শুরুতে ওই চক্রটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গা লিজ সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে পাউবোর জায়গায় বসবাসকারীদের মধ্যে সে বিভ্রান্তির অবসান হয়।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে ওই মহলটি শুভসন্ধ্যা সৈকত নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সকল প্রকার সরকারি-বেসরকারি অনুমোদনের পরও তারা জনমনে উৎকণ্ঠা ছড়াচ্ছে। ড্রেজিংয়ের কারণে শুভসন্ধ্যা সৈকত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তারা প্রচার করছে। তবে, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

রোববার (১০ ডিসেম্বর) শুভসন্ধ্যা সৈকত গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। উপস্থিত অনেকের অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের কারণে সৈকতের কিছু অংশ তলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনার সত্যতা জানতে স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

সোহাগ গাজী নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একটু একটু করে ভাঙছে সৈকত এলাকা। তবে তা খুবই সামান্য। দীর্ঘ সময় অবস্থান করলে তা চোখে পড়ে। এছাড়া ওই সৈকতটি পায়রা নদীর মোহনায় অবস্থিত হওয়ায় সেখানে সাগরের ঢেউ আসে না। ফলে সাগর থেকে বালুও উঠে আসে না।’

সৈকতের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব জায়গায় একই অবস্থা। সৈকতের দোকানদাররাও দীর্ঘ সময় ধরে ভাঙনের কথা জানান।

স্থানীয়দের মাঝে কারা এ ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সেটা পুরোপুরি চিহ্নিত নয় এলাকাবাসী। এ ছাড়া অভিযোগ উত্থাপনকারীদের কেউই এর পেছনে ইন্ধনদাতার নাম প্রকাশ করতে চাননি। প্রকল্প থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করার জন্য স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অনেকেই ইঙ্গিত করেছেন।

সৈকত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে আইসোটেক প্রপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঈনুল আলম বলেন, ‘জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে শুভসন্ধ্যা সৈকতের পার্শ্ববর্তী পায়রা নদীর মোহনা থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন, সৈকতের এক কিলোমিটারের মধ্যে বালি উত্তোলন করা যাবে না।  আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে ন্যূনতম এক দশমিক দুই কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছি। ফলে শুভসন্ধ্যা সৈকতের কোনো ক্ষতি হবার আশঙ্কা নাই। তারপরও আমরা বিষয়টি নজরদারির মধ্যে রেখেছি। যাতে করে  শুভসন্ধ্যা সৈকত এলাকার কোনো প্রকার ক্ষতি না হয়। বৈদেশিক অর্থায়নে নির্মিত হওয়ায় এ প্রকল্পে নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই।’

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হলে এলাকার উন্নয়নসহ ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, তাই এ ব্যাপারে সেখানকার সচেতন মহল দ্বিমত পোষণ করছেন না।

তালতলী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এমএ জব্বার জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়ে যে সকল প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, তার মধ্যে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্যতম। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তালতলীসহ উপকূলীয় এলাকা উন্নয়নের শহরে পরিণত হবে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।’

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে জমি আছে, এর কিছু আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেডকে লিজ দেওয়া হয়েছে। আর প্রকল্পের মধ্যে যে জমি পড়েছে তাও লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্প এলাকায় যারা অবৈধভাবে পাউবোর জমি দখল করে আছে তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’

বরগুনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাগরতীরবর্তী এলাকায় এ রকম একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। এটি উৎপাদনে গেলে দেশের বিদ্যুৎ সংকট দূর করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে সবার সহযোগিতা করা উচিত বলে তিনি জানান।’

বরগুনা-১ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘তালতলীতে  আইসোটেক গ্রুপের ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণ করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের উন্নয়নে ব্যাপক  ভূমিকা রাখবে। এটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বর্তমান সরকারের উন্নয়নের একটি অংশ। কেন্দ্রটি বাস্তবায়নে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হচ্ছে। দলমত-নির্বিশেষে সকলের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা উচিত।’

তালতলী উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়ন হলে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। শুনেছি বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসন শুভসন্ধ্যা সৈকতের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন তাই এ বিষয়ে আমাদের দ্বিমত পোষণ করার কোনো কারণ নেই।

‘পাউবোর জমি আইসোটেককে লিজ দেওয়া হলেও সেখানে বসবাসকারীদের হতাশার কোনো কারণ নেই। তাদের পুরোপুরি পুনবার্সনের ব্যবস্থা করা হবে।’- বলেন আইসোটেক গ্রপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার ফিরোজ চৌধুরী।

সারাবাংলা/এমআই

এগিয়ে চলেছে বরগুনার ৩০৭ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর কাজ বিদ্যুৎকেন্দ্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর