রমা চৌধুরীসহ ৫ নারী পেলেন রোকেয়া পদক
৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৪৫
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: নারী উন্নয়নে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এবার পাঁচ গুণী নারীকে রোকেয়া পদক দেওয়া হয়েছে। রোববার (৯ ডিসেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন এবং রোকেয়া পদক-২০১৮ প্রদান অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তরা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক গ্রহণ করেন।
পদকপ্রাপ্তরা হলেন একাত্তরের জননী’সহ ১৮টি গ্রন্থের লেখক, মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের শিকার নারী রমা চৌধুরী (মরণোত্তর), সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জিন্নাতুনেসা তালুকদার, প্রফেসর জোহরা রিচ, শিলা রায়, রোকেয়া বেগম (মরণোত্তর) পেলেন রোকেয়া পদক-২০১৮।
রমা চৌধুরীর পক্ষে তার ছেলে জহরলাল চক্রবর্তী, রোকেয়া বেগমের পক্ষ থেকে তার মেয়ে শারমিন জাহান, শিলা রায়ের পক্ষ থেকে গৌরী রাণী ভট্টচার্য পুরস্কার গ্রহণ করেন। বাকি দুজন নিজে উপস্থিত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
রমা চৌধুরী ১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন রমা চৌধুরী। তিনিই ছিলেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম নারী স্নাতকোত্তর (এমএ)। ১৯৬২ সালে কক্সবাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি তিন পুত্রসন্তানের জননী ছিলেন। থাকতেন পৈতৃক ভিটা পোপাদিয়ায়। তার স্বামী ভারতে চলে যান। ১৩ মে সকালে পাকিস্তানি সেনারা এসে চড়াও হয় তার ঘরে। এ সময় দুগ্ধপোষ্য সন্তান ছিল তার কোলে। এরপরও তাকে নির্যাতন করা হয়। পাকিস্তানি সেনারা গানপাউডার দিয়ে আগুন জ্বেলে পুড়িয়ে দেয় তার ঘরবাড়ি। নিজের নিদারুণ এই কষ্টের কথা রমা চৌধুরী লিখেছেন ‘একাত্তরের জননী’ গ্রন্থে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত গুণী নারী প্রফেসর জোহরা রিচের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরে বলেন, ১৯৪৭ সালের ১৫ অক্টোবর তার নিজ জেলা ব্রাহ্মাণবাড়িয়া জেলার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৬০ দশক থেকে শোষণবিরোধী ছাত্ররাজনীতির যুক্ত ছিলেন। ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র সংসদেও নেত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। কুমিল্লা মহিলা কলেজে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি নারী শিক্ষা কর্মসংস্থান ও অধিকার আদায়ে নিরলস প্রয়াস অব্যাহত রেখেছিলেন। তিনি জাতীয় মহিলা সংস্থা কুমিল্লার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। স্কুল শিক্ষিকা মায়ের নামে ফাতেমা ফেরদৌস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার করার মাধ্যমে তিনি দরিদ্র্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেছেন। বেশ কয়েকজন সুবিধাবঞ্চিত মেয়েকে নিজের তত্ত্বাবধানে রেখে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করিয়েছেন। যাদের মধ্যে দুই জন বর্তমানে বিএসএস (শিক্ষা ক্যাডার হিসাবে কর্মরত আছেন।
তিনি কুমিল্লা জেলার সদস্য হিসাবে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক শ্রেষ্ঠ দুর্নীতি অ্যাওয়ার্ড ২০১৫ ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সংস্থা কুমিল্লা কর্তৃক আন্তর্জাতিক সম্মাননা অসংখ্যা আরও পুরস্কার পেয়েছেন। নারী শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
আজ ৯ ডিসেম্বর, বেগম রোকেয়া দিবস। বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার ১৩৮তম জন্ম ও ৮৬তম মৃত্যুবার্ষিকী।
দিনটি উপলক্ষে ঢাকা ও রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে