শান্তিনগরে ভিকারুননিসা শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:৪১ | আপডেট: ৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৫৩
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাজধানীর শান্তিনগরে অরিত্রী অধিকারী (১৫) নামে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ওই শিক্ষার্থী নিজের রুমে গলায় ফাঁস দেয়। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অরিত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শান্তিনগরের একটি বাসার সাত তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত অরিত্রী। সে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাবা দিলীপ অধিকারী একজন ব্যবসায়ী, মা বিউটি অধিকারী গৃহিণী। অরিত্রীর ছোট বোন ঐন্দ্রিলা অধিকারীও একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
অরিত্রীর স্বজনরা বলছেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুলে চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিল অরিত্রী। পরীক্ষার হলে মোবাইল নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সে রোববারের (২ ডিসেম্বর) পরীক্ষায় মোবাইল নিয়ে যায়। সে মোবাইল থেকে নকল করেছে— এমন অভিযোগে শিক্ষকরা তার মোবাইল ফোন নিয়ে তাকে পরীক্ষা হল থেকে বের করে দেয়। পরে আজ সোমবার সে পরীক্ষা দিতে স্কুলে গেলেও মোবাইলে নকল করার জন্য তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ অরিত্রির মা-বাবাকে স্কুলে তলব করে।
পরে অরিত্রীর বাবা-মা স্কুলে গেলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, অরিত্রী পরীক্ষায় মোবাইলের মাধ্যমে নকল করেছিল এবং তাকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র (টিসি) দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, মেয়েকে নিয়ে বাসায় আসার পর মেয়েকে স্কুলে রাখতে তদবিরের চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। এর মধ্যে অরিত্রী নিজের ঘর বন্ধ করে গলায় ফাঁস দেয়। এর মধ্যে অরিত্রীকে দীর্ঘ সময় ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়া পাওয়া না গেলে দরজা ভাঙলে দেখা যায়, অরিত্রী গলায় ফাঁস দিয়েছে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ইসলামী হাসপাতালে ও পরে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভিকারুননিসা স্কুলের অধ্যক্ষ ডিএমসি হাসপাতালে গেলে অরিত্রীর স্বজনদের রোষের মুখে পড়েন
অরিত্রীর বাবা দীলিপ অধিকারী অভিযোগ বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, মোবাইলে নকল করার মতো বড় ধরনের অপরাধের কারণে মেয়েকে স্কুলে রাখা যাবে না। আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এদিকে, খবর পেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে অরিত্রীর স্বজনদের রোষানলে পড়েন তিনি। পরে তিনি স্কুলে ফিরে যান।
এ বিষয়ে স্কুলের গভর্নিং কমিটির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুদার বলেন, ‘ঘটনাটি মর্মান্তিক। দুঃখজনক।’ তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি, তবে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া জানান, মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। পল্টন থানাকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
সারাবাংলা/এসএসআর/টিআর