খালেদার জন্য ৩ আসন
২৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:০৩
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ নির্বাচনে ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে দলের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে চিঠি বিতরণ করা হয়। শুরুতেই তিন আসনে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে খালেদা জিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এসময় বগুড়া-৬ আসনের জন্য খালেদা জিয়ার মনোনয়নের চিঠি নেন জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ও বগুড়া-৭ আসনের জন্য চিঠি চিঠি নেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জন্য খালেদা জিয়ার জন্য তিন আসনে দলীয় প্রার্থিতা নিশ্চিত করা হলেও খালেদা জিয়া এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, সেজন্য এখনও বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজা পাওয়ার পর ওই দিনই কারাগারে নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। পরে আপিলের পর গত ৩০ অক্টোবর উচ্চ আদালত তাকে এই মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। এর আগের দিন (২৯ অক্টোবর) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৫ খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে শুরু থেকেই বলা হচ্ছে, দুই মামলায় সাজা হলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ গত সোমবারও (১৯ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল একই কথা বলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরাও বলছেন, আইনি প্রক্রিয়াতেই খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য। তারা এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ‘নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে’ দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছরের বেশি মেয়াদে সাজা পেলে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার ও থাকার যোগ্যতা হারান। ওই সাজা ভোগ করে মুক্তিলাভের পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত তিনি আর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা পান না। যদিও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে সাজার আদেশ স্থগিত রাখা হলে নির্বাচনে অংশ নিতে ওই ব্যক্তির কোনো বাধা থাকবে না।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। ১৯৮১ সালে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমানের মৃত্যু হলে পরের বছর তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন খালেদা জিয়া। ওই নির্বাচনে পাঁচটি আসন থেকে জয়লাভ করেন তিনি। ওই সংসদে বিএনপি সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।
১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি ফের প্রধানমন্ত্রী হন। তবে একমাসের মাথায় ওই সংসদ ভেঙে দিতে হয় বিএনপিকে। পরে ওই বছরই সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে সরকার গঠন করলে খালেদা জিয়া বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে ছিলেন সংসদে।
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। এবারও পূর্ণ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া। পরে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হলে বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন তিনি। বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে আর সংসদে থাকা হয়নি খালেদা জিয়ার।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত পাঁচটি নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতেই জয়ী হন। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে তার জন্য রাখা হলো তিনটি আসন।
সারাবাংলা/টিআর