সম্প্রসারিত হচ্ছে লোক-কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর
২১ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৩০
।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দেশের ঐতিহ্যবাহী লোক ও কারুশিল্পের সুরক্ষা, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, গবেষণা ও পুনরুজ্জীবনের জন্য নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের গড়ে তোলা হয় লোক-কারুশিল্প জাদুঘর। লোকশিল্প সম্পর্কিত গবেষণা ও ডক্যুমেন্টেশনের কাজ আরও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে এবং লোক ঐতিহ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে এই জাদুঘরের দর্শনার্থীর পরিমাণ বাড়াতে এবার এই জাদুঘরটি সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ জন্য ‘বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের জাদুঘর ভবন সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গবেষণা, ডক্যুমেন্টেশন ও প্রশাসনিক কার্যক্রমগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, এই জাদুঘরের দর্শনার্থীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ বাড়বে এবং এর মাধ্যমে আরও বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি তহবিলের অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করা হলে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে এটি একনেকে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পর অনুষ্ঠেয় একনেকে অনুমোদন দেওয়ার কথা রয়েছে প্রকল্পটি।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের ঐতিহ্যবাহী লোক ও কারুশিল্পের সুরক্ষা, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, গবেষণা ও পুনরুজ্জীবনের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফাউন্ডেশনে সংগৃহীত নিদর্শন দ্রব্যের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। ২০১২ সালে সমাপ্ত প্রকল্পের আওতায় বর্তমান জাদুঘর ভবনের এক তলার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র দুইশ নিদর্শন দ্রব্যের প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। স্থানাভাবে আর প্রায় পাঁচ হাজার ৮০০টি নিদর্শন দ্রব্যের প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না।
মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বিপুলসংখ্যক কারুশিল্পীদের নিয়ে কর্মশালাসহ কারুশিল্পী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজনের জন্য অডিটরিয়ামের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এদিকে, ১৯৭৮-১৯৮৯ সময় ফাউন্ডেশনের লেক খননের পর এ পর্যন্ত লেকের আর কোনো সংস্কার করা হযনি। লেকটি দ্রুত পুনঃখনন করে লেকের দক্ষিণ পাশে প্রটেকশনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আরও বলছে, বর্তমানে ফাউন্ডেশনের মাঠে প্রতিবছর মাসব্যাপী মেলাসহ বেশ কয়েকটি মেলার আয়োজন করা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় সে স্থানের আয়তন অপ্রতুল। লোকজ উৎসবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেশি-বিদেশি অতিথিদের রাত্রিযাপনের জন্যও কোনো উপযুক্ত রেস্ট হাউজ নেই। এ কাজে আট কক্ষের একটি দ্বিতল রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থী (প্রায় ১০ লাখ) ফাউন্ডেশন পরিদর্শনে আসেন, তাদের মানের উপযোগী লোকজ আঙ্গিকে উন্নতমানের লোকজ রেস্তোরাঁও নির্মাণ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের এ ধরনের অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্যই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি হাতে নিতে চাচ্ছে বলে জানিয়েছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে এই প্রকল্প।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে— আবাসিক ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ, যানবাহন কেনা, কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম কেনা, আসবাবপত্র কেনাসহ অন্যান্য।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত পরিকল্প কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে একনেকের জন্য তৈরি সার-সংক্ষেপে বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ এর ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বাড়বে এবং লোক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ কারুশিল্পের বিকাশের মাধ্যমে লোক ও কারুশিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটবে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর