Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজও ধ্বংসের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলের মানুষ


১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:১৩

।। জামাল হোসেন বাপ্পা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।

বাগেরহাট: আজ সেই দুঃসহ স্মৃতিবিজড়িত ভয়াল ১৫ নভেম্বর। উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের এই দিনেই আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন ‘সিডর’। সেই হিসেবে সিডরের ১১ বছর আজ। বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিল সিডর। এই দিনটির দুঃসহ স্মৃতি আর বেদনা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে জড়িয়ে আছে। ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এর স্মৃতিচিহ্ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন উপকূলের মানুষ।

বিজ্ঞাপন

সরকারি হিসাবে সিডরে বাগেরহাট জেলায় মারা যান ৯০৮ জন, আহত ১১ হাজার ৪২৮ জন। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় ৬৩ হাজার ৬০০ বাড়িঘর। আংশিক বিধ্বস্ত বাড়িঘরের সংখ্যা ১ লাখ ৬ হাজার। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে পাকা পাঁচ কিলোমিটার এবং কাঁচা প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা। ১৬ দশমিক পাঁচ কি.মি. বাঁধ, ২০৬টি স্কুল ও মাদ্রাসা, পাঁচটি কলেজ, ৪ হাজার ৭৬৯টি নৌকা ও ট্রলার। মারা পড়েছে ১৭ হাজার ৪২৩টি গবাদি পশু। নষ্ট হয়েছে ১২ হাজার হেক্টর ক্ষেতের ফসল ও ৮ হাজার ৮৮৯ হেক্টর চিংডির ঘের।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার বলইবুনিয়া ইউনিয়নের বৃদ্ধ নূর মোল্লা (৭০) বানভাসি জলোচ্ছ্বাস থেকে তার স্ত্রীকে ধরে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি পারেনি স্ত্রীকে শেষ রক্ষা করতে। স্ত্রী নেহেরু বেগম (৬০)কে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সিডরের জলোচ্ছ্বাসে। বৃদ্ধ স্বামীকেও কেড়ে নিয়ে গেছে নিষ্ঠুর সিডর। পরেরদিন স্ত্রী কাপড়ের আচঁল ধরা স্বামীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের একমাত্র ছেলে সেলিম মোল্লাও (৩৫) সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে সিডরের কারণে মারা যান। ভয়াল সিডর কেড়ে নিয়েছে ৯ বছরের নিষ্পাপ শিশু স্বাধীনকেও। পানগুছি নদীর তীরবর্তী  বারইখালী গ্রামের জেলে জাহাঙ্গীরের ছেলে স্বাধীন। বাবা সিডর ‘যুদ্ধে’ পরাজিত সৈনিকের মত সমুদ্র থেকে ফিরে আসলেও ফিরে আসেনি তার ছেলে স্বাধীন। তার মা এক শিশুকে কোলে নিয়ে এবং স্বাধীনের হাতধরে পানগুছির পাড় বেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছিলেন। পথেই মায়ের হাত থেকে স্বাধীনকে কেড়ে নেয় জলোচ্ছ্বাস।

বিজ্ঞাপন

এই উপজেলা বলইবুনিয়া, বারইখালী, খাউলিয়া, চিংড়াখালী ইউনিয়নের নিখোঁজ ১৫-২০ জন জেলে আজও ফিরে আসেনি সমুদ্র থেকে। সিডর তাদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সিডরে উত্তর বারইখালী গ্রামের সমুদ্রে নিখোঁজ জেলে মান্নান শেখের স্ত্রী এখনও স্বামীর পথ চেয়ে আছেন। সরকারি হিসেবে সিডরে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। পঙ্গুত্ববরণ করেছে হাজার খানেক মানুষ।

ত্রাণ চাইনা টেকসই বাঁধ চাই, বিধ্বস্ত এ জনপদের মানুষের এমন দাবিতে এক পর্যায়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জবাসীকে। নামে টেকসই বেড়িবাঁধ বলা হলেও বাস্তব অবস্থাটা একেবারেই ভিন্ন। মাটির কাজ চললেও নদী শাসনের কোনও ব্যবস্থা নেই। ব্লক ডাম্পিং করে নদী শাসন না করেই নির্মাণ কাজ শুরু করায় চলতি মাসে শরণখোলা উপজেলার গাবতলা এলাকায় তিন দফা বাঁধ ধসে পড়ছে।

সূত্রমতে, ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়েছে। চায়নার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ বাস্তবায়ন করছে। প্রায় দুই বছরে বলেশ্বর ও ভোলা নদী বেষ্টিত শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৬৫ কিলোমিটার বাঁধের প্রায় ৩০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এমনটা দাবি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে টেকসই বাঁধের নামে প্রহসন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল কুমার দত্ত বলেন, ‘আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। এক কিলোমিটার এলাকার নদী শাসন না করলে বাঁধ টিকবে না। সে কারণে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।’

সারাবাংলা/এমএইচ/এসএমএন

জলোচ্ছাস সিডর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর