Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রুট পারমিটে ফ্রাঞ্চাইজি চালুসহ ১৮ সুপারিশ


১৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৩৩ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৩৪

।। আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে নগরীতে রুট পারমিটে ফ্রাঞ্চাইজি সিস্টেম চালুসহ ১৮ দফা সুপারিশ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে অনুসন্ধান কমিটি।

সোমবার (১৫ অক্টোবর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদনে ঢাকার গণপরিবহণ ব্যবস্থা; চালকরা কেন পাল্লা দেয়, বেপরোয়া গাড়ি চালনা রোধে জরুরি করণীয়, রুট পারমিটে ফ্রাঞ্চাইজি সিস্টেম চালু, যানবাহন পরিচালনা কৌশল, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং লাইসেন্স ব্যবস্থানা নিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

দুই বাসের রেষারেষিতে তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের হাত হারানোর পর মৃত্যুর ঘটনায় দোষী শনাক্তে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

আদালতের নির্দেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, সিভিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি অনুসন্ধান করে দোষী শনাক্ত করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।

ঢাকার গণপরিবহণ ব্যবস্থা; চালকরা কেন পাল্লা দেয় তার কারণ ব্যাখ্যা ও সুপারিশ মালায় বলা হয়েছে-

১. রাজধানীর জনসংখা প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ।

২. রাজধানীতে মোট যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।

৩. ব্যক্তিগত যান বাহনের সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ; যা মোট যানবাহনের ৭৪ শতাংশ।

৪. গণপরিবহনের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার; যা মোট যানবাহনের ০.৫ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

৫. বাস রুট তিন শ’র মতো।

৬. গড়ে একটি বাসে ১৫০০ লোক চলাচল করে থাকে।

৭. রাজধানীতে চলাচলকারী ৫ হাজার পরিবহনের মালিক ৩ হাজার ৮০০ মালিক।

বেপরোয়া গাড়ি চালনা রোধে জরুরি করণীয়

১. দৈনিক বা ট্রিপ ভিত্তিতে চালক নিয়োগ দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে।

২. মাসিক বেতনের ভিত্তিতে কোম্পানির অধীনে চালক নিয়োগ করতে হবে।

রুট পারমিটে ফ্রাঞ্চাইজি সিস্টেম চালু

১. অনুমোদিত চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোকে একটি কোম্পানির অধীনে এনে ফ্রাঞ্চাইজি সিস্টেমে রুট পারমিট দেওয়া।

২. অবশ্যই তা হতে হবে রুট বা নগরভিত্তিক। প্রত্যেকটি রুটে একটি নির্দিষ্ট রঙ কোড (কালার কোড) থাকবে।

৩. এই ব্যবস্থায় ভাড়াবাবদ যাত্রীদের টাকা বাচবে এবং বাস কোম্পানি ও পরিবহনের চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা রোধ করবে।

সুপারিশ

যানবাহনের ফিটনেস: রাজধানীতে গণপরিবহনের বিশষ করে ব্যক্তি মালিকানা বা সরকারি মালিকানাধীন বিআরটিসির বাসগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়।

ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও অনেক বাসেই ইন্ডিকেটর, ওয়াইপার, হেডলাইট, টায়ার, বাসের দরজা-জানালা নেই এবং অবস্থা খুব ভয়াবহ। কোনো বোসের ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকলেই চলবে না সেফটি ফিচারগুলো (ইন্ডিকেটর, উইপার, হেডলাইট, টায়ার) রঙ করা থাকতে হবে। ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো যানবাহনই চলতে দেওয়া উচিৎ না।

যানবাহন পরিচালনা কৌশল

১. এমনটা দেখা গিয়েছে যে, বিআরটিসি বাসগুলো লিজে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে চালানো হচ্ছে; যেখানে চালকদের ভাড়ায় আনা হচ্ছে। এ ধরনের অনুপযোগী ব্যবস্থা শুধুমাত্র বিআরটিসির জন্য না, অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রেও তা সমানভাবে প্রযোজ্য।

২. বাস চলা অবস্থায় বাসের দরজা অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে। নির্ধারিত স্টপেজে থামার পর বাসের দরজা খুলতে হবে। বাস চলা অবস্থায় কোনো যাত্রীকে বাসের দরজার সামনে দাঁড়াতে দেওয়া উচিৎ না।

বিজ্ঞাপন

৩. প্রত্যেক রুটে বাস স্টপেজ বা বাস বে গুলোর পরিচিতি থাকা উচিৎ। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই যাত্রী ছাউনি স্থাপন করতে হবে। ছেড়ে যাওয়ার সময় বা চলতি অবস্থায় যাত্রী উঠা-নামা করানো বন্ধ করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে কঠোরভাবে তা পালন করতে হবে।

প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা হয় না বললেই চলে। সীমিত যোগান নিয়ে এআরআই বিজ্ঞানসম্মতভাবে সড়ক দুর্ঘটনার গবেষণা, বিশ্লেষণ, তদন্তের কাজগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করে যাচ্ছে। এ ধরনের কাজে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।

১. আধুনিক যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার-এর যোগান দিয়ে আরআই-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত করতে হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।

২. সড়ক দুর্ঘটনা তদন্তে পুলিশ, বিআরটিএ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, এআরআই, নিরাপদ সড়ক চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি ট্যাকনিকেল টিম থাকতে হবে এবং এই টিমের জন্য পর্যন্ত তহবিলের যোগান দিতে হবে। বড় দুর্ঘটনা তদন্তে এই টিম গঠন করতে হবে। দুর্ঘটনার পরপরই দ্রুততার সঙ্গে এই টিমকে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে হবে এবং তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

চালকদের প্রশিক্ষণ এবং লাইসেন্স ব্যবস্থানা

১. ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার মানদণ্ড কী হবে তা বিআরটিএ-এর ড্রাইভিং স্কুলকে নির্ধারণ করতে হবে। সে মানদণ্ড পূরণ করা ছাড়া কাউকে ড্রাইভিং পারদর্শিতা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।

২. ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রশিক্ষণের সঙ্গে পথচারী, সাইকেল আরোহী, রাস্তা চিহ্নিতকারী চিহ্ন, রাস্তায় চলাচলের নিয়ম-কানুন ও অন্যান্য রাস্তা ব্যবহারকারী প্রতি ‘দায়বদ্ধত’ বিষয়ের মত তাত্ত্বিক বিষয় যুক্ত করতে হবে।

৩. চালকদের তাত্ত্বিক মান বাড়াতে বুয়েটের এআরআই’র মত পেশাদার কোনো প্রতিষ্ঠানকে সরকার যুক্ত করতে পারে। বিআরটিএর উদ্যোগে বুয়েট চালকদের তাত্ত্বিক পরীক্ষা নেবে।

নৈমিত্তিক জরুরি ব্যবস্থাপনা

কোনো রকম বিলম্ব ছাড়া দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে প্রত্যেক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা বা সেবা দিতে হবে। হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিষয়টি কঠোরভাবে মানতে হবে। এ ছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনাগ্রস্তদের জন্য সরকারকে অবশ্যই একটি রুরী ট্রমা ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়ন করা উচিৎ; যেখানে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ও আর্থিক ব্যয় বিষয়েও নির্দেশনা থাকবে।

উল্লেখ্য চলতি বছরের ৩ এপ্রিল বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব হাসানের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। গত ৮ মে হাইকোর্ট এক আদেশে রাজিবের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন। পরে আপিল বিভাগ ওই আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্টকে দুর্ঘটনার দায় নিরূপনে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই

ফ্রাঞ্চাইজি সড়ক দুর্ঘটনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর