Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে প্রতি চারজনে তিনজন হৃদরোগের ঝুঁকিতে!


১ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৫৭ | আপডেট: ১ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:০৩

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে তিনজনের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর হৃদরোগের অন্যতম ঝুঁকি হলো উচ্চ রক্তচাপ যা সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।

আজ সোমবার (১ অক্টোবর) শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ওপর অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সম্মেলনে সরকারি প্রতিনিধি, দাতা সংস্থা, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা তথা দক্ষিণ এশিয়ার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা এতে অংশ নেন। সেখানে তারা দক্ষিণ এশিয়ায় উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধ, এর প্রাদুর্ভাব ও ঝুঁকি কমানো এবং অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর আলোচনা করেন।

শ্রীলংকার জাতীয় পলিসি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী ডা. হর্ষ ডি সিলভা এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেন আইসিডিডিআরবি-এর ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিসের প্রধান ডা. আলিয়া নাহিদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আবদুল আলিম, অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়নস অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এস এম মুস্তফা জামান। কোবরা-বিপিএস (কন্ট্রোল অব ব্লাড প্রেশার অ্যান্ড রিস্ক অ্যাটেন্যুয়েশন- বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা) নামক ত্রিদেশীয় গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক তাজিন জাফর, ডিউক-এনইউএস হেলথ সার্ভিস ও সিস্টেম রিসার্স, এই ফোরামের সহআয়োজক।

সম্মেলনে জানানো হয়, হৃদরোগ এবং কিডনি রোগের প্রধান কারণ হলো উচ্চরক্তচাপ এবং আশংকা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় এর ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি, যেখানে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪০ জনই উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ৩৫ বছর বা তদুর্ধ্ব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতি তিনজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, যার মধ্যে অর্ধেকই এ সম্পর্কে সচেতন নয়। বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে তিনজনের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে অথচ হৃদরোগের অন্যতম ঝুঁকি হলো উচ্চ রক্তচাপ যা সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক তাজিন জাফর সম্মেলনে বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের বাইরে এবং এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। ইউরোপীয়দের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়দের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগ ৫-৭ বছর আগে দেখা দেয়। কোবরা-বিপিএস গবেষণার আওতায় দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামীণ এলাকায় একটি উন্নত স্বাস্থ্য পদ্ধতির ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের সমন্বয়ে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা এবং এই পদ্ধতিটি সাশ্রয়ী কি না তা মূল্যায়ন করা হচ্ছে।’

কোবরা-বিপিএস বাংলাদেশের প্রধান গবেষক ডা. আলিয়া নাহিদ বলেন, ‘কোবরা-বিপিএস পদ্ধতির বিশেষত্ব হলো এই ইন্টারভেনশনটি প্রচলিত সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্বাস্থ্য সহকারী, স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিকিৎসকদের মাধ্যমেই প্রয়োগ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর কোবরা-বিপিএস কৌশলের প্রতি উৎসাহ দেখিয়েছেন এবং এটি বর্তমান ৪র্থ হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশন সেক্টর প্রোগ্রাম (২০১৭-২০২২)-এর সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। অতএব, বাংলাদেশে কোবরা-বিপিএস পদ্ধতির সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।’

‘উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস হলে সারাজীবনব্যাপী চিকিৎসা নিতে হয় অন্যথায় রোগী ধীরে ধীরে শারীরিক অক্ষমতার দিকে যেতে পারে এবং এমনকি মারাও যেতে পারে মন্তব্য করে অধ্যাপক ডা. এস এম মুস্তফা জামান বলেন, এর জন্য একটি সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োজন যেখানে রোগীদের জন্য স্বল্প মূল্যের ঔষধ নিশ্চিত করা, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী ও দরিদ্র রোগীরা যেন সারাজীবন চিকিৎসা চালিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে এমন একটি সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রণনয়নে কাজ করছে যা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিকিৎসকদের সেবার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।’

বিজ্ঞাপন

সম্মেলনে ডা. আলিম বলেন যে, ‘বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের মৃত্যু এবং অসুস্থতার হার কমাতে বাংলাদেশে সরকার একটি পাঁচ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমানো এবং অসংক্রামক রোগের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত করা এই পরিকল্পনার অংশ। তিনি আরও বলেন, কোবরা-বিপিএস একটি সহজ পদ্ধতি যা বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্যসেবায় স্বল্প বিনিয়োগে সম্পৃক্ত করা সম্ভব।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনডিপেন্ডেন্ট কমিশনের সহসভাপতি ডা. সানিয়া নিশতার সকল স্তরের জণগণের মধ্যে উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়বেটিস রোগের সেবা নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

সম্মেলনে সুইডেনের লিনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোয়েপ পার্ক, যুক্তরাজ্যের মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের জিল জোনস, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেট হান্ট, যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এবং ট্রপিকাল মেডিসিনের অধ্যাপক শাহ ইব্রাহিম এবং আইসিডিডিআরবি’র বোর্ড অফ ট্রাস্টির সভাপতি ডা. রিচার্ড স্মিথ আলোচনায় অংশ নেন।

সারাবাংলা/জেএ/এমআই

হৃদরোগের ঝুঁকি

বিজ্ঞাপন

৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর