খাদ্যে ভেজাল ও রোগ সনাক্তকরণে এসেছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি
১ অক্টোবর ২০১৮ ১২:৪৪ | আপডেট: ১ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:০৮
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: খাদ্যে ভেজাল ও রোগ সনাক্তকরণে সাইন্সল্যাবের গবেষণায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রিয়েল টাইম পিসিআর এপ্লিকেশন অন ফুড এডাল্টারেশন এন্ড ডিজিজ ডায়াগনসিস। যার মাধ্যমে অল্প সময়ে পাওয়া যাবে নির্ভুল তথ্য।
রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ট্রান্সফার এন্ড ইনোভেশন এর উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
এসময় তিনি বলেন, দেশের মানুষের জন্য দরকার আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে প্রযুক্তি। এছাড়া, দেশের শিল্প উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্যও করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করতে হলে দরকার সহজ লভ্য টেকনোলজি। যেন সহজেই তারা আকৃষ্ট হয়। অন্যথায় সনাতনি পদ্ধতি থেকে তাদেরকে বের করে আনা মুশকিল।
সনাতনি পদ্ধতিতে সময়ের অপচয় হয়, গুণগতমানের পণ্য উৎপাদনও সম্ভব নয় বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের এখনো অনেক কাজ বাকি। তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা সাধারণ মানুষের জন্য সহজ প্রযুক্তি তৈরি করুন। যেন তারা অল্প খরচে মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন।
নতুন ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক ড. রেজাউল করিম বলেন, এই প্রতিষ্ঠান পোল্ট্রি শিল্পের খাদ্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত লাইসিন, মিথিউনিনসহ এমাইনো এসিডের মান ও গুণাগুণ পরীক্ষা আরও নির্ভুল করতে চালু করেছে এমাইনো এসিড এনালাইসিস মেথড ডেভেলপমেন্ট এন্ড ট্রেনিং।
এছাড়া খাদ্যে ভেজাল ও রোগ সনাক্তকরণে আইটিটিআই এর গবেষণায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রিয়েল টাইম পিসিআর এপ্লিকেশন অন ফুড এডাল্টারেশন এন্ড ডিজিজ ডায়াগনসিস। যার মাধ্যমে অল্প সময়ে পাওয়া যাচ্ছে নির্ভুল তথ্য।
তিনি দাবি করেন, উন্নত বিশ্ব ঝুঁকছে উন্মুক্ত জলাশয়ের চেয়ে বদ্ধ ঘরে মাছ চাষের দিকে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান এবং ইউরোপে পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়। যাকে বলা হয় রিসার্কুলেটেড একুয়াকালচার সিস্টেম বা আরএএস।
বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ পদ্ধতি এখন সময়ের দাবি এ বিবেচনায় পদ্ধতিটি দেশে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ট্রান্সফার এন্ড ইনোভেশন-আইটিটিআই।
মাত্র ১ হাজার লিটার পানিতে এখানে ১শ’কেজি মাছ চাষ করা যায় যেখানে পুকুরে সম্ভব মাত্র ১০ থেকে ২০ কেজি। আর খাবার খরচও কম। পুষ্টিগুনেও পুকুরের মাছ থেকে এটি সেরা কারণ এ মাছে প্রোটিনের পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশী। তাই আধুনিক ও লাভজনক এ পদ্ধতির মাছ চাষে বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশে ঘটাতে পারে নতুন বিপ্লব।
আরএএস পদ্ধতি ছাড়াও আইটিটিআই নিয়ে এসেছে মাটি ছাড়া ঘাস চাষ পদ্ধতি যাকে বলা হয় হাইড্রোপনিক ঘাস। চাষের জমি কমতে থাকা বাংলাদেশে গবাদি পশুর খাবার নিয়ে খামারীদের উদ্বেগ কমিয়ে দিয়েছে এই পদ্ধতি। কারণ এখানে অল্প জায়গায় খুব অল্প সময়ে অর্থাৎ মাত্র এক সপ্তাহে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ঘাস।
আর অনেকের কাছে প্রিয় শুটকি মাছের গুণ ও মান নিয়ে শংকা কাটাতে আইটিটিআই দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে সমন্বয় ঘটিয়েছে হিট পাম্প ফিশ ড্রায়ার পদ্ধতির।
বলেন, কোনো রকম রাসায়নিক ছাড়াই জীবাণুমক্ত শুটকি উৎপাদন করা যায় এ পদ্ধতিতে। যার উৎপাদন সক্ষমতা সনাতন পদ্ধতির চেয়ে তিনগুণ।
পোল্ট্রি শিল্পের খাদ্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত লাইসিন, মিথিউনিনসহ এমাইনো এসিডের মান ও গুণাগুণ পরীক্ষা আরও নির্ভুল করতে আইটিটিআই চালু করেছে এমাইনো এসিড এনালাইসিস মেথড ডেভেলপমেন্ট এন্ড ট্রেইনিং।
খাদ্যে ভেজাল ও রোগ সনাক্তকরণে আইটিটিআই এর গবেষণায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রিয়েল টাইম পিসিআর এপ্লিকেশন অন ফুড এডাল্টারেশন এন্ড ডিজিজ ডায়াগনসিস। যার মাধ্যমে অল্প সময়ে পাওয়া যাচ্ছে নির্ভুল তথ্য।
সম্প্রতি মশার ফাঁদ ও লার্ভিসাইড প্রয়োগের মাধ্যমে মশা নিধনেও সফলতা পেয়েছে আইটিটিআই। উ্ন্নত বিশ্বের এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে ব্যবহার উপযোগি করা হয়েছে। আর প্রযুক্তিটিও বেশ সাশ্রয়ী। এর মাধ্যমে মশা নিধন করলে আগাম পাঁচ বছরেই ঢাকা থেকে কমে যাবে মশার উপদ্রব। সাশ্রয় হবে মশার পেছনে খরচ হওয়া সরকারের কোটি কোটি টাকা।
এছাড়াও নতুন নতুন আরো অনেক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে আইটিটিআই। আর এসব প্রযুক্তির খবর ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়েছে গণমানুষের মাঝে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রযুক্তি স্থাপনে সহায়তা দিচ্ছে আইটিটিআই। উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে আইটিটিআই ঢাকা এবং ঢাকার বাইরেও আয়োজন করে যাচ্ছে কর্মশালা ও মতবিনিময়।
সারাবাংলা/জেএএম