জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় খালেদার রায় বিষয়ে আদেশ ৩০ সেপ্টেম্বর
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৫:৫৭ | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:০২
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকাঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় যুক্তিতর্ক সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য হবে কি না সে বিষয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর আদেশ দেবেন আদালত। সেই সাথে এ মামলায় জড়িত থাকা বিচারকের বিরুদ্ধে দুই আসামির অনাস্থার বিষয় এবং মনিরুল ইসলাম খানের জামিন স্থায়ীর বিষয়েও ওই দিন আদেশ দেওয়া হবে। বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান আদেশের জন্য এ দিন ঠিক করেন।
এদিন সকাল ১১টা ০৮ মিনিটের দিকে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে মনিরুল ইসলামের আইনজীবী আক্তার হোসেন পূর্বের ন্যায় তার জামিন বৃদ্ধির আবেদন করেন। আর আদালতের প্রতি অনাস্থার বিষয়ে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন এজন্য মামলার কার্যক্রম মূলতবি রাখার আবেদন করেন।
এরপর খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির ও মামলার কার্যক্রম মূলতবি রাখার আবেদন করেছি। তিনি বলেন, এ মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে সিনিয়র আইনজীবীরা সাক্ষ্য-জেরা করেছেন। সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে আব্দুর রেজ্জাক খান বয়স্ক লোক। তিনি কোর্টে এসে মামলা পরিচালনা করতেন। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। আমরা রাজনীতি করি, কিন্তু আব্দুর রেজ্জাক খান রাজনীতি করেন না। তিনি একজন ভদ্রলোক লোক। গত তিন দিন ধরে তিনি অসুস্থ। এজন্য তিনি বলেছেন তার কথা বলে সময় নিতে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী নয়, সরাসরি বিচারকের আদেশ চান সানাউল্লাহ মিয়া।
আরও পড়ুন: আদালতে অনাস্থা আসামিপক্ষের, রায়ের তারিখ চায় রাষ্ট্রপক্ষ
সানাউল্লাহ মিয়া আরও বলেন, এ মামলার কার্যক্রম একাধারে তিনদিন থাকলে আমাদের অসুবিধা হয়। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে খালেদা জিয়ার অন্য মামলায় আমাদের যেতে হয়। মামলাটি সপ্তাহে এক দিন দিলে ভাল হয়, আমাদের সুবিধা হয়।
ওই সময় খালেদার আরেক আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আমাদের একটা যুক্তিসঙ্গত সময় দেন। আমরা মামলা নিষ্পত্তি করতে সহযোগিতা করবো। আর মামলা হয়ে শেষ হয়ে এসেছে, এত তাড়াহুড়ো করার কি আছে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী প্রসঙ্গে দুদকের প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য আছে। আসামিপক্ষ গতানুগতিক দরখাস্ত, একই কথা বলে আসছেন। মামলাটিতে যুক্তিতর্কের সুযোগ নাই, তারপরও আপনি শুনছেন, আগেও শুনেছেন। আমরা বলবো আসামি দোষী আর আসামিপক্ষ বলবে খালাস পাবে এবিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আসবে, আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তারা আদালতে আসছেন, কিন্তু আদালতকে কিছু দিচ্ছেন না।
কাজল বলেন, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সমাপ্ত ঘোষণা করে রায়ের তারিখ ধার্যের আবেদন করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি আসামিদের জামিন বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন। আসামিপক্ষ একধরনের একঘেয়েমির আচরণ করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। তারা সব সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন অথচ যুক্তি উপস্থাপন করছেন না। মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আসামিপক্ষ বাইরের ষড়যন্ত্র ও পরামর্শে আদালতের কার্যক্রমে সাহায্য করছেন না। তারা জিদ ধরে বসে আছেন।
জবাবে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, সবদেশে যুক্তিতর্ক হয়-চলছে, আমাদের দেশেও চলছে। আর আমরা অন্যায় দাবি করিনি। খালেদা জিয়ার পক্ষে সিনিয়র চারজন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। আর আমরা মামলার জামিন আবেদনসহ বাকী কাজগুলো করি। দাবি যুক্তিসঙ্গত মনে করেন আমাদের সময় দিন, সাহায্য করবো।
এরপরে মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আমরা আদালতে আসি, আপনি জামিন দেন চলে যায়। আদালতকে কিছু দেয় না। মাঠে-ঘাটে সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন ন্যায়বিচার ব্যাহত করছি। আমরা ন্যায়বিচার ব্যাহত করছি না। আমাদের সময় দিন। সাহায্য-সহযোগিতা করবো। আর আমরা ন্যায়বিচার উপনীত হতে পারবো।
জবাবে কাজল বলেন, আমরা আদালতের সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না। তারা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই কথা বলছেন। আমরা মামলাটি নিষ্পত্তি করতে চাচ্ছি। আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন না। যুক্তি প্রদর্শন না করে সময়ক্ষেপণ করছেন। আমরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সমাপ্ত করে রায়ের তারিখ ধার্যের জন্য আবেদন করছি।
বিচারক উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে যুক্তিতর্ক সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য হবে কি না সে বিষয়ে, বিচারকের বিরুদ্ধে দুই আসামির অনাস্থার বিষয় এবং মনিরুল ইসলাম খানের জামিন স্থায়ীর থাকবে কিনা সে বিষয়ে আদেশের জন্য এ দিন ধার্য করেছেন আদালত।
শুনানি শেষে মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী যুক্তির জন্য কোর্টে এসে জামিন বৃদ্ধি জন্য আবেদন করে পরে আর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনা করেন না। এই মামলাটি ৪০তম কার্যদিবস সময় নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
মামলাটিতে বিএনপি নেতা সচিব হারিছ চৌধুরী, তার এপিএস জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি। খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়।
সারাবাংলা/এআই/এনএইচ