Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ও কূল ভাঙা নদী রে…


১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:৪০ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:৪৫
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
নড়িয়া (শরিফতপুর) থেকে ফিরে: চারদিকে ধুপ ধুপ আওয়াজ। কোনো হৃদপিণ্ড যেন— আকৃতিতে বিশাল, চলছে সজোরে। পাশে আবার শোঁ শোঁ শব্দে বয়ে চলেছে প্রমত্ত পদ্মা। স্থান শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা। পদ্মা এখানে সর্বগ্রাসী, রাক্ষুসী।
কিছুদিন আগেই এখানে ভূমি ছিল, বাস ছিল মানুষের। ‘নদী ঢের দূরে’— এমন বিশ্বাস নিয়ে অনেকেই গড়েছিলেন বিশাল অট্টালিকা। হয়তো ভেবেছিলেন সিল বা টেমস নদীর পাড়ের বাড়িগুলোর মতোই শোভা পাবে পদ্মাপাড়ে তার বাড়িটিও। সে গুঁড়ে বালিও জোটেনি, হঠাৎ একদিন সব উবে গেছে কর্পূরের মতো।
ক’টা বাড়ি এখনও নদীর থাবা থেকে বেঁচে আছে জনপদের সাক্ষী হয়ে। সেখানেই এখন প্রবল বেগে চলছে ধুপ ধুপ ধুপ শব্দ। যে যতটা পারছে, বাঁচিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে সহায়-সম্পদ।

ক’দিন আগেও নড়িয়ায় পদ্মার পাড়ে ছিল কোটি টাকার বাড়ি। সেই বাড়ি পানির দামে বেচে দিয়ে ঘর ছেড়েছে মালিক। কেউ জানেন না তার হদিস। নদীর গ্রাস থেকে অন্তত কিছু ইট-কাঠ বাঁচাতে প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে বাড়ি হারানো শ্রমিক। এখন এই জীর্ণ লোহার কাঠামোর মতো শীর্ণ শক্তি নিয়ে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করছে সেও।

বিজ্ঞাপন

পদ্মার স্রোতের মুখে পড়লো একটি পিলার। নিমেষে তাকেও গিলে খেলো রাক্ষুসে পদ্মা।


ছোট্ট একটা গাড়ি, ভেঙে যাওয়া একটি মাটির মাছ। তাদের রেখেই ঘর ছেড়েছে ছোট্ট শিশুটি। আচমকা বাস্তুচ্যুত শিশুটি কি নতুন ঠাঁইয়ে গিয়েও খুঁজে মরছে তার খেলার এই সাথীদের? সে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতোও কেউ ছিল না কাছে।

 
স্থানীয়রা বলছেন, গতকালও ঠিক এখানেই ছিল বাড়িঘর, পথঘাট। আজ কিছুই নেই।
এই ব্যাগটা নিয়েই হয়তো বেড়াতে যেত সৌখিন নারী। বাড়ি ভেঙে চলে যাওয়ার সময় এর কথা হয়তো মনেও পড়েনি তার। মনে পড়ার সুযোগই কি তিনি পেয়েছিলেন?
বলা হয়ে থাকে, ভাঙা চুলা নাকি সংসারে অমঙ্গল বয়ে আনে। নদীর তীব্র রোষে তার ঘরই এখন নেই, তার জন্য আর কোনো অমঙ্গল পথ চেয়ে বসে রইবে!
একে একে সবই তো হারিয়েছে। তবু প্রাণপণ চেষ্টা, যতটুকু বাঁচানো যায়। বাড়ির সামনের গাছটা বিক্রি করতে পারলে তো কিছু টাকা মেলে। সেটুকুও জোটেনি অনেকের ভাগ্যেই।
গাছের সুপারি কাঁচা। তবু কেটে ফেলা হয়েছে গাছটা। এমনিও তো নদীর গর্ভেই যাবে। সুপারি পাকা না হয়ে কাঁচা হলেই বা কী আসে যায়!

কিছুদূর পর পর এমন পরিত্যক্ত পানের বরজ। যেন ধ্বংসলীলা চলেছে এখানে। তারপরও এই ক্ষেত জানান দেয়, একদিন এখানে পানের প্রাচুর্য ছিল। কিন্তু এখনই শুধুই বিস্তীর্ণ প্রান্তর… স্রষ্টা যে নিজেই ভেঙে দিয়েছেন তার সাজানো বাগান!

একদিন সব ছিল, প্রাণ-মায়া-ভালোবাসা-ঘর। কূল ভাঙা নদীর তোড়ে আজ তার সব কেবল স্মৃতি।

সারাবংলা/এমএ/টিআর

নড়িয়া পদ্মা শরিয়তপুর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর