মায়ের কাছে হামলাকারীদের পরিচয় জানিয়েছিলেন সাংবাদিক নদী
২৯ আগস্ট ২০১৮ ১৪:০৮ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০১৮ ১৮:৩৬
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
পাবনা : বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি সুবর্না আক্তার নদী মারা যাওয়ার আগে তার ওপর হামলাকারীদের নাম বলে গিয়েছিলেন। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত নদীকে যখন তার মা হাসপাতালে নিচ্ছিলেন তখন মায়ের কাছেই হামলাকারীদের নাম জানিয়েছিলেন তিনি।
সুবর্না আক্তার নদীর মা মর্জিনা বেগম সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়েছেন।
মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে আমাকে তার উপর হামলাকারীদের নাম বলে। সে বলে আবুলের ছেলে রাজীব, সহকারী মিলন সহ কয়েকজন আমাকে কুপিয়েছে। আমি তাদের চিনতে পেরেছি। ’ এ সময় রাজীবের ফাঁসির দাবি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নদীর মা।
মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে জেলার রাধানগরে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় নদীকে। তিনি আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি এবং স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল ‘দৈনিক জাগ্রত বাংলা’র সম্পাদক ও প্রকাশক।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীর সাবেক স্বামীর নাম রাজীব হোসেন। তিনি পাবনার একটি ওষুধ কোম্পানি এবং একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের ছেলে। রাজীবের বিরুদ্ধে একটি যৌতুক মামলা করেছিলেন সুবর্ণা আক্তার নদী। মামলা নম্বর-সিআর ২৯৭/১৭ (পাবনা)। মঙ্গলবার আদালতে নদীর বড় বোনের স্বাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। বিষয়টি নিয়ে নদী ও তার বড় বোন চম্পা বেগমের সঙ্গে রাজীব হোসেনের আদালত প্রাঙ্গণেই বাকবিতণ্ডা হয়।
এরপর নদী তার অফিসে চলে যান এবং সেখানেই রাত পর্যন্ত কাজ করেন। কাজ শেষে রাতে বাড়ির গেট দিয়ে ঢোকা মাত্রই ৩/৪ জন দুর্বৃত্ত তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় নদীকে উদ্ধার করে তার মা পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নদীর বড় বোন চম্পা বেগম জানান, মঙ্গলবার সকালে বোনের যৌতুক মামলার স্বাক্ষ্যগ্রহণের দিন নির্ধারিত ছিল। সাক্ষ্যে তিনি আসামি রাজীবের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় রাজীব ও তার সহযোগিরা তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এসময় তারা তখন সেখান থেকে বাড়িতে চলে যান। এরপর রাতেই তার বোনোর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নদীর বাড়ির কেয়ারটেকার ও তার সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
বাড়ির কেয়ারটেকার ইমরান হোসেন’র ছোট ভাই মেহেদী বলেন, ‘আমার ভাই এই বাড়ির কেয়ারটেকার। ঘটনার সময় আমার ভাই বাড়ি ছিলেন না। পরে খবর পেয়ে ভয়ে বাড়ি ফেরেন নাই। রাত আড়াইটার দিকে বাড়ি আসলে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এবং সঙ্গে তার আরও কয়েকজন বন্ধুকে ধরেছে। ’
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিমলা ডায়াগনিস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসাতালের একজন কর্মচারী জানান, রাতেই তাদের মালিক আবুল হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। ময়নাতদন্তের জন্য নদীর লাশ পাবনা জেনারেল হাসাপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা না হলেও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। খুব শিগগিরই মূল হোতাদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরো পড়ুন : পাবনায় নারী সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা
সারাবাংলা/এসএমএন
পাবনায় নারী সাংবাদিককে হত্যা সাংবাদিক নদী সুবর্না আক্তার নদী