Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষার্থীদের শোক দিবস


১৫ আগস্ট ২০১৮ ১৭:১৮ | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০১৮ ১৯:১৮

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ‘মিছিল যাচ্ছিল, আমার মা একটা পাঁচিলের অপর পাশে বসে শুনছিলেন। জনতা চিৎকার করে বলছে— তোমার নেতা আমার নেতা… এরপর কে যেন রিনরিনে গলায় বলছিল শেখ মুজিব শেখ মুজিব…।’

‘আমার মা এই ক্ষীণ শব্দে কৌতূহলী হয়ে পাঁচিলের অন্য পাশে উঁকি দিলেন। দেখলেন, মিছিলে কারও হাতে একটা খাঁচা, আর তাতে একটা পাখি। পাখিটা জনতার সঙ্গে গলা মিলিয়েছে, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব…’

বলছিলেন লালমাটিয়া মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অহকারী অধ্যাপক নাদিম আজিজুল হক। শিশু বয়সে মায়ের মুখে শোনা এই গল্পটা তার মনে গেঁথে আছে চিরস্থায়ীভাবে। তিনি বলেন, আমার মা এই গল্প বলার মাধ্যমে আমাকে একটা শিক্ষা দিয়েছিলেন— বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ।

আজ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে দেশের অন্য অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো লালমাটিয়া মহিলা কলেজেও আয়োজন করা হয়েছিল শোক সভার।

সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে জাপানি চলচ্চিত্র পরিচালক নাগিসা ওসিমার বিখ্যাত ডক্যুমেন্টরিটি দেখানো হয়। তাতে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

ওই ডক্যুমেন্টারির একটি দৃশ্যে দেখা যায়, ছোট একটি টেবিলে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যারা মাখন আর পাউরুটি দিয়ে নাস্তা করছেন। ওসিমা বলেন, কারও খাওয়ার টেবিল নিয়ে কথা বলা ঠিক না। তবে সম্ভবত পৃথিবীর কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এত কম আয়োজনে নাস্তা খায় না।

দারুণ সাধারণ, কিন্তু আদতে অসাধারণ মানুষটিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করে আততায়ীরা। শুধু তিনি নয়, তার পরিবারের প্রতিটি সদস্যকেই মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তো মিশে আছেন প্রতিটি বাঙালির মনে। এমনকি সেই কলঙ্কিত ’৭৫-এর অনেক পরে যাদের জন্ম, তাদের কাছেও তো বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

সাড়ে তিন বছরের নেহান সানিডেল স্কুলে প্লে গ্রুপে পড়ে। ওর স্কুলেও আজ শোক দিবস পালন করা হয়েছে। নেহালের মা তাসমিয়া নুহিয়া বলেন, ‘নেহান ভাবে, শেখ মুজিব একজন সুপার হিরো। ঠিক যেমন ব্যাটম্যান, সুপারম্যান। ওর ধারণা, তিনি দেশকে এবং দেশের মানুষদের এতই ভালোবাসতেন যে মানুষ তাকে তাদের নেতা বানিয়েছে। তাই নেহানও বঙ্গবন্ধুকে খুব ভালোবাসে।’

নুহিয়া মনে করেন, শোক দিবসের মতো জাতীয় দিবসগুলোতে স্কুলে স্কুলে এ ধরনের অনুষ্ঠান শিশুদের জন্য খুব উপকারী। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুরা নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে, নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারে। তারা দেশকে ভালোবাসতে শিখবে। আজকের দিনে যেমন তারা জাতির পিতাকে চিনতে পারছে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে, এতে করে তারা বঙ্গবন্ধুকেই নিজেদের আদর্শ হিসেবে সামনে রেখে জীবন গড়ে তোলার সুযোগ পাবে।’

শোক দিবসের অনুষ্ঠান ছিল গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলেও। এই স্কুলে পড়ে দুই ভাই আরাফ ও আদীব। তারা আজ বঙ্গবন্ধুকে এঁকেছে, বাংলাদেশকে এঁকেছে। দুজনই। ওদেরই তো দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে এগিয়ে নেওয়ার।

ধানমন্ডির লেকহেড গ্রামার স্কুলের শিক্ষার্থীরা সারাদিন কবিতা আবৃত্তি করে, ছবি এঁকে, বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর প্রেজেন্টেশন তৈরি করে উদযাপন করেছে ১৫ অগাস্ট। স্কুলটির শিক্ষক তামিমা হোসেন সারাবাংলা’কে জানান, এমন অনুষ্ঠান আমাদের শিশুদের জন্য খুব দরকার। কারণ, ওদের শিক্ষা পদ্ধতিতে বাংলাদেশ খুব বেশি করে অনুপস্থিত। এরকম অনুষ্ঠান ওদের মাতৃভূমির কাছাকাছি নিয়ে আসে।

অনেক স্কুলেই গতকাল ক্লাস হয়ে ঈদের ছুটি হয়ে গেছে। সেসব স্কুলেও শেষদিনের অ্যাসেম্বলিতে স্মরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। কেউ কেউ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের জন্য প্রার্থনা করেছে। এভাবে শিশুরা নিজেদের মতো করে জেনে নিয়েছে জাতির পিতার জীবন সম্পর্কে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

ঢাবিতে হাতে আঁকা বঙ্গবন্ধুর সর্ববৃহৎ প্রতিকৃতি

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে দুই বোনের শ্রদ্ধা

সারাবাংলা/এমএ/টিআর

শিশু কিশোরদের শোক দিবস শোক দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর