Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভাঙচুর বন্ধ করুক তারপর বাস চলবে: মালিক সমিতি


৩ আগস্ট ২০১৮ ১৭:৫১ | আপডেট: ৩ আগস্ট ২০১৮ ১৮:৫২

উত্তরায় বাসে আগুন

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাসহ দেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোয় বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি।

শুক্রবার (৩ আগস্ট) সড়কে পরিবহন মালিক কিংবা শ্রমিক সংগঠনগুলো আগাম কোনো ঘোষণা ছাড়াই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। নিরাপত্তা না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মালিক সমিতি জানিয়েছে।

গণপরিবহন না চলায় সারাদেশে জনদুর্ভোগ চলছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়ত উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ছাত্ররা বাস ভাঙচুর করছে এ জন্য বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ছাত্ররা ভাঙচুর বন্ধ করুক তারপর বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে।

বাস চলাচল বন্ধের কোনো নির্দেশনা মালিকরা দিয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ভাঙচুর করছে, তাই বাস বন্ধ রয়েছে।

বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর মহাখালী টার্মিনালের দ্বিতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা ছাত্রদের দাবিগুলোর সঙ্গে একমত। তারা যে দাবিগুলো দিয়েছে সেগুলো গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেছেন। যেগুলোর অধিকাংশই মানা হয়েছে। বাকিগুলোও মানা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা আইনও পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য গতকাল পর্যন্ত আমাদের প্রায় ৪’শ এর মত গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ৮টির মত গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর কোনো কোনো গাড়িতে আমরা বিভিন্নভাবে দেখতে পেয়েছি পেট্টোল এনে গাড়ির গ্লাসের পর্দায় ঢেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। যার ফলে মালিক-শ্রমিকরা সারাদেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এ নিরাপত্তাহীনতার জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে মালিক-শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যার যার জায়গা থেকে ধর্মঘট করতেছে। এটা বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতি কিংবা শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ধর্মঘট না। বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি ভাঙা হচ্ছে, জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এ কারণে গাড়ি বন্ধ হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে পরে কেউ এটার সুযোগ নেবে যা এরইমধ্যে বিভিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে। তাই তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে অনুরোধ জানিয়েছেন, তারা যেন ঘরে ফিরে যায় সরকারের প্রতি আস্থা রেখে। তাহলে শ্রমিকদের ধর্মঘট বন্ধ হয়ে যাবে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।

এদিকে বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, আন্দোলন চলাকালে সড়কে ৩২৫টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে, ১১টি বাস পোড়ানো হয়েছে। আমরা এই পরিস্থিতিতে সড়কে বাস নামাতে নিরাপদ বোধ করছি না। এভাবে বাস ভাঙচুর করলে, পুড়িয়ে দিলে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হই।

এদিকে আজ সকাল ৯ থেকে রাজধানীর আভ্যন্তরীণ সকল পরিবহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে শ্রমিকরা। সেই সঙ্গে সকল প্রকার যানবাহনের পাশাপাশি রিকশা চলাচলেও বাধা দিচ্ছে তারা।

সায়েদাবাদ বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘ রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ে শ্রমিকদেরকে ফাঁসি দেওয়া হবে। এমন গুজবের কারণে শ্রমিকরা কোনো গাড়ি চালাচ্ছেন না।’

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা টিভিতে দেখতেছে দুর্ঘটনার দায়ে তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতেছে। এটা এক ধরনের গুজবের মতো শ্রমিকদের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করেছে। তাই তারা কেউ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামছে না। তাদেরকে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি। এ জন্য আমরা তাদেরকে নিয়ে আজ বসব। যাতে আন্দোলন না করে কাজে ফিরে তারা।’

বিজ্ঞাপন

বাস মালিক নেতা কালাম বলেন, ‘ মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা সারাদেশের শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের বোঝাতে চাই, দুর্ঘটনাটা অনিচ্ছাকৃত। অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য দুইজন শিক্ষার্থী মারা গেছে, এ জন্য আমরা অত্যন্ত মর্মাহত।’

গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। ওইদিন জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়।

নিহতরা হলো দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।

এ ঘটনায় রাজপথে নেমে ৯ দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। গত পাঁচ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে অাসছে।

বুধবার (১ আগস্ট) বিকেলে বাস মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করে। এরপরও বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে।

নিহত দুই পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এসটি/একে

ছাত্র আন্দোলন জাতীয় পরিবহন ধর্মঘট বাস ধর্মঘট ভাঙচুর সড়ক দুর্ঘটনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর