Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাইকোর্টে জামিন জালিয়াতি, জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা


২৪ জুলাই ২০১৮ ২২:২০

।। আব্দুল জাব্বার খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: প্রায়শই ঘটছে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের স্বাক্ষর জাল করে জামিন জালিয়াতির ঘটনা। সম্প্রতি বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে নড়ে চড়ে বসে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। এরই মধ্যে জামিন জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে হাইকোর্টের ফৌজদারি বিবিধ শাখার কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শনাক্তও করা হয়েছে।

আদালতের নির্দেশ মোতাবেক এসব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।পাশাপাশি জামিন জালিয়াতি রোধে ১৩ দফা সুপারিশ করে করেছে তদন্ত কমিটি।

চট্টগ্রামে বিশ হাজার পিস ইয়াবা জব্দের একটি মামলায় হাইকোর্টের দুই বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করে জামিন আদেশ তৈরি করে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যায় দুই আসামি। বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে গত ৩০ মে বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন দৈত বেঞ্চ সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে জাল জামিননামা তৈরির ঘটনায় পাঁচজনের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়। এরপর ওই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দেখে জড়িতদে বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

হাইকোর্টের এ নির্দেশ মোতাবেক জড়িতদের বিরুদ্ধে শিগগিরই বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ মামলা করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে তদন্ত সূ্ত্রে জানা যায়, জামিন জালিয়াতির মুল অভিযুক্ত হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের ফৌজদারি শাখার এমএলএসএস মঞ্জু রানী কৈরীর নাম উঠে এসেছে। এ ছাড়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আবদুল বাসেদ ও মৌসুমী দেব এবং অফিস সহকারী মো. মনিরুজ্জামান মনি ও মো. মুজিবুর রহমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। জালিয়াতির ঘটনায় এ চারজনের পরোক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। আরও চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে।

জড়িত এসব আসামিদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান।

তিনি জানান, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক গতকাল মঙ্গলবার শাহবাগ থানায় সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জামিন জালিয়াতির মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৭ জানুয়ারি বিশ হাজার পিস ইয়াবাসহ মো. সেলিম উদ্দিন, মো. রফিক, শিরিন সুলতানা আঁখি, আপন মজুমদার ও দিপক দাস নামের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় এ ঘটনায় মামলা হয়। বর্তমানে মামলাটি চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। মামলার আসামি মো. রফিক হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে গত ২৫ জানুয়ারি শুনানি হয়। শুনানিকালে রফিকের আইনজীবী আদালতকে জানান, আরেক আসামি মো. সেলিম উদ্দিন এই আদালত থেকে জামিন নিয়েছে।

জামিন নিয়ে সন্দেহ থাকায় আদালত আগের আদেশের কপি দাখিলের নির্দেশ দেন। নির্ধারিত দিনে তা দাখিল হয়। কপিতে দেখা যায়, গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মো. সেলিমকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশের কপিতে স্বাক্ষর দেখে তলব করা হয় সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার বেগম সুলতানা, তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আলী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মনিরকে। তারা হাজির হয়ে এসব স্বাক্ষর তাঁদের নয় বলে জানান। এ অবস্থায় ঘটনাটি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে জামিন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ঘটনা তদন্ত করতে কমিটি গঠন করে।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনা ছাড়াও চলতি বছরের মে মাসে গাজীপুরের ১০ বছরের এক শিশু ধর্ষণের মামলার আসামির জামিন জালিয়াতির ঘটনা আদালতে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় আদালত ওই আসামির জামিন বাতিল করে আদেশ দেন এবং মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন নামে এক আইনজীবীকে ছয় মাসের জন্য তার আইন পেশায় নিষিদ্ধ করেন।

জালিয়াতি রোধে তদন্ত কমিটির দেওয়া ১৩ দফা সুপারিশ—

জামিন জালিয়াতি রোধে ১৩ দফা সুপারিশ করেছে কমিটি। সুপারিশে জামিন আবেদনে টেন্ডার নম্বর পড়ার সময় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সদস্য নম্বর উল্লেখ রাখা, এফিডেভিট করার সময় তদবিরকারকের ভোটার আইডি কার্ড অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংরক্ষণ করা, ফাইলিং ও এফিডেভিট শাখায় আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারি শনাক্তকরণের লক্ষ্যে ডাটাবেস তৈরি, জামিন আদেশের কপি প্রস্তুত ও স্বাক্ষর করা এবং বিচারপতিগণের স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখার সময় যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা, আদালত থেকে শাখায় মোশন মামলার (জামিন আবেদন) নথিসহ অন্যান্য নথি গ্রহণকারীর একটি প্রাপ্তি রেজিস্টার সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, শাখায় এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে নথি মুভমেন্টের (প্রেরণ) সময় মুভমেন্ট রেজিস্টারে শুধু এন্ট্রি দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রহণকারীর স্বাক্ষর নেওয়া বা রিসিভ দেখানো হয় না। ফলে নথি খোজার ক্ষেত্রে গ্রহণকারী অস্বীকার করলে নথি গ্রহনের বিষয়ে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায় না। কাজেই প্রতিটি মুভমেন্টের ক্ষেত্রেই গ্রহণকারীর স্বাক্ষর রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এ ছাড়া শাখায় শৃঙ্খলা বজায় রাখাও জবাবদিহিতার স্বার্থে শাখার তত্ত্বাবধায়কদের মধ্যে নথিতে স্বাক্ষর করা, নথি রিসিভ করা, টাইপ হওয়া, নথি যথাযথভাবে র‌্যাকে রাখা প্রভৃতি বিষয় তদারকির জন্য সহকারি রেজিস্ট্রার কর্তৃক আলাদা কর্মবণ্টন প্রস্তুত করতে হবে।

সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই

জামিন জালিয়াতি

বিজ্ঞাপন

মুম্বাই যাচ্ছেন শাকিব খান
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর