‘শৈশবে ছায়া দিয়েছেন যারা, বড় হয়ে কেড়ে নিল তাদেরই প্রাণ’
২৪ জুলাই ২০১৮ ২২:০৫
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে মা ও মেয়েকে খুন করে পানির ট্যাংকে লাশ ফেলে দেওয়ার ঘটনার রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
মুশফিকুর রহমান (৩০) নামে এক যুবককে গ্রেফতারের পর পুলিশ জানিয়েছে, এই যুবক খুনের শিকার মা মনোয়ারা বেগমের নাতি। পিতৃহারা মুশফিকুরকে জন্মের পর থেকে মনোয়ারা ও খুনের শিকার মেয়ে মেহেরুন্নেছা লালনপালন করেন। টাকা-পয়সা নিয়ে বিরোধের জেরে মুশফিকুর প্রথমে মেহেরুন্নেছা এবং পরে মনোয়ারাকে খুন করে লাশ পানির ট্যাংকে ফেলে দেন।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি-দক্ষিণ) মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে জানান, মুশফিকুরকে নগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে সোমবার (২৩ জুলাই) গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে দাদি ও ফুপুকে হত্যার দায় স্বীকার করে মুশফিকুর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমানের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
সূত্রমতে, মুশফিকুরের বাবার নাম মতিউর রহমান। প্রয়াত মতিউর নিহত মনোয়ারা বেগমের দ্বিতীয় ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে মুশফিকুর বড়। তার ছোট ভাই ঢাকায় থাকেন।
কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে আরও জানান, মতিউর মারা যাবার পর তার স্ত্রী অর্থাৎ মুশফিকুরের মা মতিউরের ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমানকে বিয়ে করেন। তবে মুশফিকুরকে তারা নেননি। শৈশব থেকে মুশফিকুর তার ফুপু মেহেরুন্নেছা লালনপালন করেন।
রূপালী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছার টাকা-পয়সা এবং খুলশি এলাকার বাড়িও মুশফিকুরের নামে লিখে দেওয়ার কথা ছিল। তবে এর মধ্যে দেড় বছর আগে মুশফিকুর ফুপু ও দাদির অজ্ঞাতে বিয়ে করে ফেলেন। তখন মনোমালিন্য হলে তাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। নগরীর মুরাদপুরে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মুশফিকুর।
‘ঘটনার দিন মুশফিকুর ফুপুর কাছে গিয়ে ব্যবসা করার জন্য টাকা দাবি করেন। ফুপু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মুশফিকুরের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মুশফিকুর তার মাথায় বসার পিড়ি দিয়ে আঘাত করেন। মেহেরুন্নেছা চিৎকার দিয়ে লুটিয়ে পড়েন। এরপর গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে মুশফিকুর। একইভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দাদি মনোয়ারাকেও। পরে দুজনের লাশ পানির ট্যাংকে ফেলে দেওয়া হয়—বলেন পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।
মুশফিকুরের সঙ্গে এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি-না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এডিসি কামরুজ্জামান।
গত ১৫ জুলাই সকালে নগরীর খুলশী থানার আমবাগান এলাকায় ফ্লোরাপাশ রোডে একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাংক থেকে ৯৭ বছর বয়সী মা মনোয়ারা বেগম এবং তার ৬৭ বছর বয়সী মেয়ে মেহেরুন্নেসার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই ঘটনায় মনোয়ারা বেগমের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাদি হয়ে খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। ঘটনার পর পুলিশ মুশফিকুর ও তার দোকানের কর্মচারি ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের কথা জানিয়েছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই