Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাতের প্রভাতফেরি এসে মিশেছে ভোরের সূর্যোদয়ে


২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:৫৮ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:৩২

।। রাজনীন ফারজানা।।

রাতের আকাশে চতুর্দশীর ক্ষয়িষ্ণু চাঁদ তখনও প্রাণপণে আলো বিলোচ্ছে। শহীদ মিনারের চারপাশে বৈদ্যুতিক বাতির ঝলমলে আলোয় দিন ভেবে ঘুম ভেঙে কা কা রব জুড়েছে চারপাশের গাছে আবাস গড়া কাকের দল। সূর্যের উঁকি দিতে তখনও বাকি কিছুটা সময়। ২১ শে ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতের প্রথম প্রহরে শুরু হওয়া জনতার ঢল তখন আরও বাড়ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে। রাতের প্রভাতফেরি এসে মিশেছে দিনের সূর্যোদয়ে। সবাই খালি পায়ে হাতে ফুল নিয়ে এসেছেন ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

বিজ্ঞাপন

একুশে ফেব্রুয়ারি ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই নানা সংগঠন ও নানা বয়েসী মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসতে থাকেন। সকলের হাতে ছিল ফুল কিংবা ফুলের তোড়া। অনেকেই আসেন নিজস্ব সংগঠনের ব্যানার হাতে। কেউ কেউ নিজে, কেউ দল বেঁধে বন্ধুদের সাথে। আবার কেউ পরিবারের সবাই মিলে।

একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। এরপর একে একে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। রাত গভীর হতে থাকলেও কমেনি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনপ্রত্যাশি মানুষের ভিড়। নানা বয়েসী শিশুদেরও দেখা যায় অভিভাবকের হাত ধরে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ফুল দিতে শহীদ মিনারে এসেছে।

এরপরই সাধারণ জনগণের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তবে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে ওঠার অনুমতি ছিলনা সাধারনের। মূল বেদির নীচে সিঁড়ির গোঁড়ায় ফুল রাখার ব্যবস্থা ছিল। নানা বয়েসী নারী-পুরুষ ও শিশুরা শৃঙ্খলার সাথে পলাশী প্রান্ত দিয়ে ঢুকে ফুল রাখার নির্দিষ্ট জায়গায় ফুল দিয়ে ঢাকা মেডিকেল প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে যান। বিএনসিসি ও স্কাউটসের সদস্যরা সেসব ফুল নিয়ে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে রেখে আসেন।

বিজ্ঞাপন

রেখে আসেন নয়, তারা সাজিয়ে দিচ্ছিলেন ফুলগুলো। এতে ধীরে ধীরে নানান ফুলের রঙীন সাজে সেজে উঠছেলো স্মৃতির শহিদ মিনার।

শহীদ মিনার চত্বরে শৃঙ্খলা বজায় রাখতেও ঢাকা মেট্রোপলিটান পুশিলের পাশাপাশি কাজ করছে রোভার স্কাউটস ও বিএনসিসির সদস্যরা।

প্রভাতফেরি শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রভাতে অর্থাৎ ভোরে উদ্বোধনী সংগীত গেয়ে জনগণকে জাগানো। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পরের বছর চালু হয় প্রভাতফেরি।

১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো প্রভাতফেরীর মধ্য দিয়ে শহীদ দিবস পালন করা হয়। সেদিন দিন ঢাকার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খুব ভোরে ছাত্রাবাসগুলো থেকে বের হয়ে খালি পায়ে ফুল হাতে, কেউ ফুল ছাড়াই একুশের গান গাইতে গাইতে আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে শহীদদের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শহীদ মিনারের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আসেন। এভাবেই প্রভাতফেরির মাধ্যমে শহিদ দিবস পালন শুরু হয়েছিল।

সেই ধারা আজও চলছে। যদিও এখন প্রভাতফেরি রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক বড় পরিসরে আয়োজিত হয়। প্রভাতফেরী এখন ভোরের পরিবর্তে রাত বারোটার পর থেকেই শুরু হয়ে যায়।

সারাবাংলা/আরএফ/ এমএম

একুশের প্রথম প্রহর প্রভাতফেরি শহিদ মিনার শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর