হাত হারানো শিশু নাঈম: ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের রায় বহাল
২০ নভেম্বর ২০২৪ ০১:০৫ | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৪৬
ঢাকা: ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে সাড়ে তিন বছর আগে হাত হারানো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার ১৩ বছর বয়সী শিশু নাঈম হাসান নাহিদকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা দিতে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদন খারিজ করে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। আদালতে শিশুর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক।
এর আগে ওয়ার্কশপের কাজ করতে গিয়ে তিন বছর আগে হাত হারানো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার ১৩ বছর বয়সী শিশু নাঈম হাসান নাহিদকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে দিতে গত ৩১ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকার ডিপোজিট ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বাকি ১৫ লাখ টাকার ডিপোজিট করে দিতে বলা হয়।
আদালত বলেন, ১০ বছর পর নাঈম হাসান নাহিদ ডিপোজিটের টাকা তুলতে পারবে। একই সঙ্গে নাঈমের এইচএসসি পাস না করা পর্যন্ত তাকে ভৈরবের নূর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিককে প্রতি মাসে সাত হাজার টাকা করে দিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে গত ৩১ জানুয়ারি বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেছিলেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও মো. বাকির উদ্দিন ভূইয়া। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তামজিদ হাসান। তারা বিনা পয়সায় শিশুটির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।
অন্যদিকে ওয়ার্কশপ মালিকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল ইসলাম ও আইনজীবী আবদুল বারেক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
আইনজীবী ওমর ফারুক জানান, ওয়ার্কশপের মালিক ইয়াকুব হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ১০৭ দিন পরে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এভাবে মামলাটা পড়ে থাকে। আমি বিনা খরচায় এ মামলার দায়িত্ব নিয়ে মামলাটি শুনানির উদ্যোগ নিই। আমরা বলেছি, মালিকের এ টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আছে। কিন্তু তিনি নানা কৌশলে এ পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছেন।
আইনজীবী ওমর ফারুক আরও বলেন, আজ (মঙ্গলবার) শুনানি শেষে ইয়াকুবের আবেদন খারিজ হয়েছে। এখন আশা করি মালিক ইয়াকুব আর ছলচাতুরির আশ্রয় নেবেন না। তিনি মানবিক হবেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করবেন।
২০২০ সালের ১ নভেম্বর ‘ভৈরবে শিশুশ্রমের করুণ পরিণতি’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শিশুটির বাবা হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে শিশুটিকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনা নিজ কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা দিয়ে অনুসন্ধান করতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই রুলের ওপর ৫ ডিসেম্বর শুনানি শেষ হয়। এরপর ৩১ জানুয়ারি আদালত রায় দেন।
২০২০ সালের ১ নভেম্বর প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইম হাসানের বয়স ১০ বছর। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। তার বাবা আনোয়ার হোসেনের পেশা জুতা ব্যবসা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সময়ে আনোয়ার হোসেন কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময় সংসারের চাপ সামলাতে নাঈমকে তার মা-বাবা কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি ওয়ার্কশপে কাজে দেন। ওই ওয়ার্কশপের কাজ করতে গিয়েই নাঈমের ডান হাতটি মেশিনে ঢুকে যায়। পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হয় ডান হাতটি।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর