‘জঙ্গিরা আল্লাহ আকবর ধ্বনি দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছিল’
৩০ জুলাই ২০১৯ ১৯:০৯
ঢাকা: গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনার বিবরণ জানিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন সে সময় ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ কমিশনার সিরাজুল ইসলাম। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মুজিবুর রহমানের আদালতে তিনি এ সাক্ষ্য দেন।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশান থানাধীন অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় অজ্ঞাত এক ফোন নম্বরের মাধ্যমে জানতে পারি, হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা গোলাগুলি করছে। আমি ওয়ারলেস বার্তার মাধ্যমে খবরটি জানিয়ে দিই। পরবর্তীতে অন্যান্য পুলিশ অফিসারদের সহযোগিতা করার পরামর্শ দিই। পরে আমার এক বডিগার্ড মালেক ও সাব-ইন্সপেকটর খালিকসহ কয়েকজন দ্রুত হলি আর্টিজানের দিকে রওনা হই। সেখানে আমরা গ্রেনেড ও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। ঘটনাটি ভালোভাবে দেখার জন্য পাশের ভবনের ছাদে অবস্থান নিই। সে সময় শুনতে পাই, আল্লাহ আকবর ধ্বনি দিয়ে জঙ্গিরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে।’
এর কিছুক্ষণ পর গুলশান জোনের ডিবির এসি ও ডিসি ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর আমরা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে এক জায়গায় জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড হামলা চালায়। সে সময় আমি দুই পা ও শরীরে আঘাত পাই। সারাদেহে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। আমার বডিগার্ডসহ পুলিশের অন্য সদস্যরাও মারাত্মক আহত হন। সে সময় বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও এস রবিউলকে আহত অবস্থায় হলি আর্টিজানের পাশে পড়ে থাকতে দেখি। আমার পা দিয়েও রক্ত ঝরছিল।ওই সময় এসআই মাহবুব ওর গেঞ্জি দিয়ে আমার পা বেঁধে দেন। এতো রক্তক্ষরণ হচ্ছিল যে, আমার জ্ঞান ছিল না। এরপর কী হয়েছে, আর বলতে পারব না। পরে নিজেকে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থা দেখতে পাই। ওই গ্রেনেড হামলায় পুলিশসহ ৩২ জন সদস্য আহত হন।’
এরপর কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এসআই সুজন কুমার কুণ্ডু জবানবন্দির সময় বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার খবর শুনতে পেয়ে আমি আমার টিম লিডারের নেতৃত্বে গুলশান-২ এর হলিতে জঙ্গিদের আটক করার উদ্দেশে রওনা হই। ওখানে পৌঁছানোর পর সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা করে। আমিও অন্যান্য অফিসারাও তাদের প্রতিহত করার জন্য পাল্টা গুলি করি। এর কিছু সময় তাদের ছোড়া গ্রেনেডের হামলায় আমি আহত হয়ে পড়ে যাই। সেখান থেকে আমাকে সহকর্মীরা হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রায় সাড়ে ৪ মাস আমাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সেই চিকিৎসা এখনও অব্যাহত রয়েছে।’
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এএসআই মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমি হলি আর্টিজানের সামনের গেটে যাওয়ার ২/৩ মিনিট পর ভেতরে থাকা জঙ্গিদের ছোড়া গুলিতে আহত হয়। এরপর ইউনাইটেড হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকি। এরপর সিএমএইচ হাসপাতালে তিনমাস ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে এক মাস ভর্তি ছিলাম।’
রাঙ্গামাটির কোতয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক খান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘জঙ্গিদের হামলায় ২৪ জন মারা যান। আমি এ মামলার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করি।’