Wednesday 01 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ইনোভেইস টেকনোলজিস’র অনন্য যাত্রা


১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৩৪ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:২১

ঢাকা: গল্পটা ২০১৭ সালের। বুয়েট পাস করা একদল ইঞ্জিনিয়ার চাকরি খোঁজার বদলে শুরু করেন নতুন একটি স্টার্টআপ। নাম ইনোভেইস টেকনোলজিস। শুরুতে খুব একটা সাড়া ফেলতে না পারলেও চার বছর পর এখন এসে দেশের সেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

ইনোভেইস টেকনোলজিসের যাত্রার শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরেন মিনহাজ খান, মনিরুল আলম, আমিনুর রশিদ আসিফ, ইরতিসাম খান সহ সাতজন। এদের কেউ তখন ভার্সিটির ল্যাব প্রজেক্ট শেষ করা সদ্য গ্রাজুয়েট। কেউ বা দেশের পাওয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচারে বিশেষ অবদান রাখা কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার, কেউ দীর্ঘদিন ছিলেন টেলিকমে মার্কেট সেরা কোম্পানির কর্তা, কেউ কেউ দেশে শীর্ষস্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানির স্টার ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা শিক্ষক ও গবেষক।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন দক্ষতা সম্পন্ন এই মানুষ গুলো সেসময় একই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এক হন। দেশকে প্রোডাক্ট রিসার্চে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তারা। স্বপ্ন দেখেন দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে তাদের তৈরি ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ হার্ডওয়্যার প্রযুক্তি পণ্য।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। প্রথমেই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করে বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র, যার নাম দেওয়া হয় ‘টিপসই’। ইনোভেইস টেকনোলজিসের বানানো টিপসই ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। শহরের মতো গ্রাম পর্যায়ে একদম আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটি এনে দিয়েছে আধুনিক ডিজিটালাইজেশানের ছোঁয়া। প্রায় ৪ হাজারটিরও বেশি অফিস, বিদ্যালয়, ব্যাংক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে এই ‘টিপসই’ ডিভাইসটি।

বিজ্ঞাপন

মূলত ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ইস্ট এশিয়ার অনুরোধে একটি ডিজিটাল হাজিরা সিস্টেম ‘টিপসই’ তৈরি করা হয়। এটিই বাংলাদেশের প্রথম জিপিআরএস ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহৃত ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্র। এই যন্ত্র প্রথমে বসে গাজী গ্রুপে। এরপর তাদেরকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৮ সালে দেশের শীর্ষ টেলিকম প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার চুক্তি সই করে ইনোভেইস। গ্রামীণফোনের সঙ্গে কো-ব্যান্ডেড প্রোডাক্ট হিসেবেই ‘টিপসই’ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর ‘টিপসই’ এর সাফল্যে আটকে থাকেনি ইনভেইস। বিক্রয়কর্মীদের জন্য তাদের বানানো সফটওয়্যার জাতীয় স্বীকৃতিও পেয়েছে। বায়োমেট্রিক এর গণ্ডি পেরিয়ে ইনোভেইস এখন কাজ করছে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলোশন ৪.০’ নিয়ে। যেটি ২০১৯ সালে বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডও জিতে নিয়েছে।

ইনসেইলস (InSales) নামে বাজারে ছাড়া এই প্রযুক্তি পণ্যটি মূলত সেলস ট্র্যাকিং ও ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। এটি গাজী গ্রুপ, এনার্জিপ্যাক, র‌্যাডিয়েন্ড ডিস্ট্রিবিউটর, সেনা কল্যাণ সংস্থ্যা, ব্র্যাক ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আকিজ গ্রুপ, কর্ণফূলি লিমিটেড, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন, এলিট গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

ইনোভেইস টেকনোলজিসের সিইও মো. মনিরুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, আমরা মূলত রিসার্চ আর ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করি। শিল্প কারখানায় কিভাবে উৎপাদন হার বাড়ানো যায় সেটি মনিটরিং করা হয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলা করতে হলে প্রযুক্তিখাতে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা মূলত প্রযুক্তিখাতের এই পথটিই চিনিয়ে দিতে চাই।

তিনি জানান, ইনোভেইস টেকনোলজিস বর্তমানে কৃষিখাতে উৎপাদন বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের পুকুরগুলোতে বর্তমান মাছ উৎপাদনকে দশগুণ বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য প্রযুক্তি সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে ইনোভেইস টেকনোলজিস।

আইওএমএস বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও ই ই মনিটরিং সিস্টেম নামে একই রকম আরেকটি সেবা শিল্প কারখানায় উৎপাদন বাড়াতেও কাজ করে যাচ্ছে।এছাড়াও সুবিধাবঞ্চিত কিশোরী ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ইনোভেইস টেকনোলজিস একটি ভার্চুয়াল ক্লাব প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। ‘একতাই বল’ এই দীক্ষা প্রতিফলনে তারা ‘যুক্ত হয়ে মুক্ত’ শ্লোগানে দুই হাজার বস্তিবাসী কিশোরীদের একই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করেছে। এর মাধ্যমে যৌন হয়রানি, প্রসূতির স্বাস্থ্যগত জটিলতা, পারিবারিক সংঘাত সহ অনেক কিছুতে তাদেরকে সহয়তা দিয়ে যাচ্ছে।

ইনোভেইস টেকনোলজিস গাজী গ্রুপ গ্রামীণফোন টিপসই বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর