আইএসডিতে বুলিংয়ের শিকার শিক্ষার্থী, প্রিন্সিপালকে লিগ্যাল নোটিশ
২১ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:১৭ | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:১১
ঢাকা: রাজধানীর অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা (আইএসডি)‘র এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নানাভাবে বুলিংয়ের শিকার হয়ে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্কুলে এর প্রতিকার চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর ৭ম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পক্ষ থেকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সন্তানের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির জন্য আইএসডি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে ৮৫ কোটি টাকা (১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার) ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে এই নোটিশে।
স্কুলের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর টি. জে. কোবার্নকে এই নোটিশটি পাঠিয়েছেন ব্যরিস্টার হাসান আজিম।
নোটিশে বলা হয়েছে, স্কুলের হেড অব সেকেন্ডারি ইলডিকো মুরে ওই বুলিংয়ের শিকার শিশুটির সাহায্যে এগিয়ে না এসে বরং অপমানজনক আচরণ করেছেন। যার ফলে তার পক্ষে স্কুলটিতে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
সপ্তম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীটি সহপাঠীদের বুলিংয়ের শিকার হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বলেই অভিযোগে উল্লেখ করেন তার মা সালমা খানম। সন্তানের নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বুলিং বন্ধ করার অনুরোধ জানান তিনি। তবে কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনার প্রতিকার না করে বরং নির্যাতিত শিশুটিকেই দোষারোপ করতে থাকে। এতে এক পর্যায়ে স্কুল ছাড়তেই বাধ্য হয় শিশুটি।
ক্ষতিপূরণ না পাওয়া গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে লিগ্যাল নোটিশে।
নোটিশে বলা হয়, ২০১৭ সালে স্কুল থেকে শিক্ষা সফরে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় ওই গ্রেডের শিক্ষার্থীদের। ভ্রমণ থেকে ফিরে শিশুটি জানায় ওই ভ্রমণে সহপাঠীরা তার শরীরের আকার এবং ত্বক নিয়ে তার সঙ্গে আপত্তিকর ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন ধরনের অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করে। যা তার মনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে এক পর্যায়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ধারাবাহিক বুলিংয়ের শিকার হওয়ার ফলে শারীরিক শিক্ষা এবং সাঁতারের ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দেয় শিশুটি। মাথাব্যাথা, বমি এবং দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা ছাড়াও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে নিজেকে সব কিছু থেকে গুটিয়ে নেয়।
সন্তানের এমন অবস্থায় সালমা খানম বেশ কয়েকবার স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান এবং যে সহপাঠীরা তাকে উত্যক্ত করে, তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেন। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে বরং সেই সহপাঠীদের সঙ্গেই তাকে ক্লাসে বসতে বাধ্য করেন। হেড অব সেকেন্ডারি ইলডিকো মুরে এই ঘটনা জানার পরও শিশুর প্রতি কোন ধরনের সহমর্মীতা দেখাননি। বরং মানিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দেন।
নোটিশে আরও জানানো হয়, বুলিংয়ের শিকার হতে হতে এক পর্যায়ে শিশুটি বিমর্ষ হয়ে পড়ে এবং স্কুলে যেতে ভয় পেতে থাকে। এতে তার গ্রেড নেমে যেতে থাকে। কর্তৃপক্ষ তার অসুস্থতা এবং অস্বস্তির বিষয়টি জেনেও কোন ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে বরং শিশুটির অভিভাবককে ধারাবাহিকভাবে একাডেমিক কনসার্ন লেটার পাঠায়।
কয়েকজন সহপাঠী এবং হেড অব সেকেন্ডারির এই ধরনের আপত্তিজনক ব্যবহার মেনে নিয়েও এই শিশুটি যখন আবারো স্কুলে যাওয়া শুরু তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ তার সামনেই অভিভাবকের কাছে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেয়। অভিযোগে বলা হয়, গত ১৪ মে স্কুলের হেড অব সেকেন্ডারি ইলডিকো মুরে কোন আগাম নোটিশ ছাড়াই শিশুটির উপস্থিতিতে তার অভিভাবককে বলেন, এই শিক্ষার্থী ৮ম গ্রেডে উঠতে পারবে না এবং আইএসডি’তে থাকতে পারবে না। বরং তাকে বিদেশে কোন আবাসিক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে পরামর্শ দেন তিনি।
বাবা মায়ের অভিযোগ, এতে তাদের শিশু সন্তানটি আরো বেশি আঘাত পায় এবং পুরোপুরি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। আত্মপরিচয় সংকটে ভুগতে থাকে। পরিবারেও সে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে এমনকি আত্মহত্যারও হুমকি দেয়।
এই বিষয়ে সালমা খানম সারাবাংলাকে বলেন, আমি বারবার স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি এনেছি। কিন্তু তারা সেটিকে কোন
গুরুত্বই দেয়নি। বরং তাদের আচরণে মনে হয়েছে এই ধরনের অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, `বিচার চেয়ে এবং সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয়ের ক্ষতিপূরণ চেয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেয়া হলে আইনি প্রক্রিয়ায় মামলা করা হবে।‘
এই বিষয়ে ব্যারিস্টার হাসান আজিম সারাবাংলাকে বলেন, বুলিং বাচ্চাদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এন্টি বুলিং নীতি থাকতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও র্যাগিংয়ের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে।
এক্ষেত্রে বুলিং যারা করছে এবং যারা শিকার হচ্ছে, এই সব শিশুকেই কাউন্সিলিংয়ের অধীনে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন এই আইনজীবী।
শিশুদের বুলিংয়ে যে কতটুকু বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, সে বিষয়ে ব্যারিস্টার মাহিন এম রহমান সারাবাংলাকে বলেন, গত বছরই ভিকারুন নিসা নূন স্কুলে শিশু অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল তার অভিভাবককে তার সামনে অপমান করায়। এখানে হেড অব স্কুল ইলডিকো ওই একই অপরাধটি করেছেন। সন্তানের সামনে বাবা মার কাছে নালিশ করেছেন। যেখানে শিশুরা নিজেদের অপরাধী ভাবতে শুরু করে এবং আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়। অথচ এখানে স্কুল কর্তৃপক্ষেরই শিশুটির পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল।
তিনি আরো বলেন, বুলিং একটি অপরাধ। এর প্রতিকার না করে প্রশ্রয় দেয়া হলে সেটিও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আইএসডি‘র বিরুদ্ধে আগেও এই ধরনের অভিযোগ ছিল বলে জানান এই আইনজীবী।
বিষয়টিতে আইএসডির প্রিন্সিপাল টি. জে কোবার্ন-এর মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল করেও উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে এসএমএস এর মাধ্যমে এই বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে। উত্তর পেলে তা সারাবাংলার পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হবে।
সারাবাংলা/এমএম
আইএসডি ইন্টারন্যাল স্কুল অব ঢাকা টপ নিউজ বুলিং স্কুল শিশু স্কুলছাড়া